‘মরার তিস্তার ভাঙন থামছেই না। বাড়ি ভিটা তো তিস্তা নদী খায়া ফেলাইলো বাহে। স্বামী মারা যাওয়ার পর থাকি দুই সন্তানকে নিয়া এ পর্যন্ত ৬ বার ঘর সরাইনো। এখন মাইনসের (মানুষের) জায়গায় আসি আছো। ভাঙন থাকি বাঁচতে সরকার কি হামার দিকে দেখবার নয়।’ কথাগুলো বলছিলেন রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা গ্রামের আফরোজা বেগম।
শুধু আফরোজা বেগম নন, গত কয়েকদিনে তিস্তার প্রবল স্রোতে তার মতো নদীতে বিলীন হয়েছে উপজেলার ফোটামারী ও বিনবিনা গ্রামের আরও ২২ পরিবারের বাড়িঘর। ফলে চলতি মৌসুমে নদী ভাঙনে ঠাঁইহারা হলো উপজেলার তিন ইউনিয়নের ৯২ পরিবার।
বুধবার (১৮ আগস্ট) বিকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গঙ্গাচড়ায় উপজেলায় তিস্তার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে উপজেলার ৭ ইউনিয়নের ১৫টি চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলে বসবাসকারী সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
এদিকে ক’দিন ধরে কখনও তিস্তার পানি বাড়ছে আবার কমছে। পানি বাড়া-কমার এমন খেলায় ভাঙছে নদীর কূল। ভিটেহারা মানুষ গবাদি পশু, বাড়ির আসবাবপত্রসহ অন্যের জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন। আবার কেউ নৌকাযোগে টিনের চালাসহ বাড়িঘর সরিয়ে নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা এলাকার সুজন মিয়া বলেন, পানি বেড়ে নদীর ভাঙন আবার শুরু হইছে। তাই ঘর সরাই ফেলছি।
কোলকোন্দ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সোহরাব আলী রাজু বলেন, তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে এক হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়া গত ৭ দিনে নদী ভাঙনে ১৫ পরিবারের বাড়িঘর বিলীন হয়েছে।
নোহালী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ টিটুল বলেন, ফোটামারী গ্রামের ৭টি বাড়ি গত তিনদিনে নদীতে বিলীন হয়েছে। সেই সঙ্গে দুই শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাসলিমা বেগম জানান, পানিবন্দি মানুষজনের সার্বক্ষণিক খবর রাখা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ১০ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আরও বরাদ্দ এলে দ্রুত বিতরণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীব জানান, বুধবার সকালে তিস্তার পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার (৫২.৬০ সেমি.) সামান্য নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এর আগে গত সোমবার সকাল থেকে তিস্তায় পানি বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে তা বিপৎসীমার ১০ সে.মি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে বিকাল থেকে পানি কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে বলেও জানান তিনি।