বার বার শেখ হাসিনার ওপর হামলা করা হয় কেন?

, জাতীয়

নিউজ ডেস্ক, বার্তা ২৪ | 2023-08-31 10:56:26

২১ আগস্ট, ২০০৪। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার সমাবেশে অতর্কিতে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হতে থাকে একের পর এক গ্রেনেড। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মানুষের রক্ত-মাংসের স্তূপে পরিণত হয় সমাবেশস্থল। স্প্লিন্টারের আঘাতে মানুষের হাত-পাসহ বিভিন্ন অংশ ছিন্নভিন্ন হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে। মারা যান আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন। ওই দিন শুধু গ্রেনেড হামলাই নয়, সেদিন শেখ হাসিনার গাড়ি লক্ষ্য করেও চালানো হয় ছয়টি গুলি। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও তিনি আহত হন, তার শ্রবণশক্তি চিরদিনের মতো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শুধু ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট নয়, এর আগে অন্তত ১০ বার এবং এরপর আরও অন্তত চার বার শেখ হাসিনার ওপর হামলা করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর অন্তত ১৫ বার হামলা চালানো হয়েছে। এর মধ্যে ২০০০ সালের ২০ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় সমাবেশস্থলের কাছে ৭৬ কেজি ওজনের শক্তিশালী বোমা পুঁতে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল; ২০০১ সালের ৩০ মে খুলনায় রূপসা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে‌ও বোমা পুঁতে শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টা করা হয়েছিল।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, '৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার পর আওয়ামী লীগ ও প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত শীর্ষ ও জনপ্রিয় নেতারা টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হয়েছেন। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিশ্চিহ্ন করতে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী এই হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। অবশ্য সৌভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে গেছেন হাতে গোনা কয়েকজন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

১৯৮১ সালে দেশে ফেরার বছরই তার ওপর হামলা চালায় ফ্রিডম পার্টির সন্ত্রাসীরা। এরপর ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে তার ওপর ফের হামলা হয়। তারপরের বছর ১৯৮৯ সালের ১১ আগস্টও ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে শেখ হাসিনার ওপর হামলা হয়।

এরপর শেখ হাসিনা ১৯৯১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর গ্রিনরোডে পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে ভোটের পরিস্থিতি দেখতে গিয়ে হামলার শিকার হন; ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ঈশ্বরদী ও নাটোর রেল স্টেশনে প্রবেশের মুখে তার বহনকারী রেলগাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়া হয়; ১৯৯৫ সালের ৭ ডিসেম্বর রাসেল স্কয়ারের কাছে সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার সময়ও তার ওপর গুলিবর্ষণ করা হয়।

১৯৯৬ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে শেখ হাসিনার বক্তৃতার পর হঠাৎ একটি মাইক্রোবাস থেকে সভামঞ্চ লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ ও বোমা নিক্ষেপ করা হয়; ২০০২ এর ৪ মার্চ নওগাঁয় বিএমসি সরকারি মহিলা কলেজের সামনে শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা চালানো হয়; ২০০২ সালে ৩০ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার কলারোয়ার রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে শেখ হাসিনার ওপর হামলা চালায়।

এরপর ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই বিনা ওয়ারেন্টে সেনাসমর্থিত ১/১১’র তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় স্থাপিত বিশেষ সাব-জেলে তাকে স্থানান্তর করা হয়। সেসময় শেখ হাসিনার খাবারে ক্রমাগত বিষ দিয়ে তাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়। 'স্লো পয়জনিং' এর কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্যরা বলছেন, প্রতিক্রিয়াশীলরা আমাদের নিশ্চিহ্ন করতে একটির পর একটি হত্যাকাণ্ড চালিয়ে এসেছে। ভবিষ্যতেও হয়তো সেই অপচেষ্টা থাকবে। তবে আওয়ামী লীগ সরকার এদের প্রতিরোধে বদ্ধপরিকর।

এ সম্পর্কিত আরও খবর