সরকারি বাড়ি চান গ্রেনেড হামলায় নিহত রংপুরের রেজিয়ার পরিবার

, জাতীয়

আমিনুল ইসলাম জুয়েল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর | 2023-09-01 19:25:48

প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া টাকায় কেনা ৯ শতাংশ জমিতে একটি পাকা বাড়ি নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত রংপুরের রেজিয়া বেগমের পরিবার। একইসঙ্গে এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচার দাবি করেছেন তারা।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে অনুষ্ঠিত শেখ হাসিনার সমাবেশে যোগ দিতে গিয়ে রেজিয়া বেগম বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় নিহত হন। এ ঘটনার ১৭ বছর পার হলেও রেজিয়া বেগমের পরিবারের শোকের ছায়া এখনও কাটেনি। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় পরিবারটি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। প্রধানমন্ত্রীর টাকায় বসবাসের জন্য জমি কিনেছেন। সেখানে নির্মিত টিনের চালা ঘর পুরাতন হওয়ায় পানি পড়ে। তাই সরকারিভাবে নতুন একটি পাকা ঘর নির্মাণের আর্তি তাদের।

শুক্রবার (২০ আগস্ট) বিকেলে সরেজমিনে রংপুর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে কাউনিয়া উপজেলার বালাটারী বালাপাড়া ইউনিয়নের গঙ্গানারায়ণ গ্রামে গ্রেনেড হামলায় নিহত রেজিয়ার বাড়িতে গেলে ছেলে হারুন অর রশিদ ও নুরনবী (মোস্তুল্লাহ) এসব কথা জানান।

তারা বলেন, মৃত্যুর আগে মেয়ে হত্যার বিচার দেখে যাওয়ার আশা নিয়েই ২০১৪ সালের ১৩ জুলাই তাদের নানা আফাজ উদ্দিন শেখ (১০০) ও ২০০৬ সালে নানী আমেনা বেগম (৮৫) মৃত্যুবরণ করেছেন। মৃত্যুর আগে নানা আফাজ উদ্দিন শেখ ও নানী আমেনা বেগম বলেছিলেন ‘মোর বেটিক যামরা মারি ফ্যালাইছে, বাঁচি থাকতে তার বিচার দেখি যাবার চাঁও (আমাদের মেয়েকে যারা মেরে ফেলেছে, আমরা বেঁচে থাকতেই তাদের বিচার দেখে যেতে চাই)। নানা ও নানীর মতো আমাদেরও মনে হয় মায়ের হত্যার বিচার না দেখেই মরতে হবে।

নুরনবী ও হারুন দ্রুত মা রেজিয়া হত্যার বিচার দাবি করে বলেন, পুরো পরিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞ। এই সরকারের আমলেই আমাদের মা রেজিয়া হত্যার বিচার হলেই মাসহ আমার নানা-নানীর আত্মা শান্তি পাবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের গঙ্গানারায়ণ গ্রামের দরিদ্র কৃষক আফাজ উদ্দিনের ৪ মেয়ের মধ্যে রেজিয়া বেগমের উপার্জনেই চলতো তাদের সংসার। বৃদ্ধ আফাজ উদ্দিনের ৪ মেয়ের মধ্যে রেজিয়া বেগম ছিল দ্বিতীয়। তার বিয়ের পর দুই পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়ে স্বামী খালেক মন্ডল নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। তারপর থেকে রেজিয়া অভাব-অনটনের সাথে যুদ্ধ করতে করতে এক সময় ঢাকার বাড্ডা এলাকায় স্থায়ী বসবাস শুরু করেন। সেখানে সে ঢাকাস্থ ভারতীয় দূতাবাসে ভিসায় ছবি লাগানোর খন্ডকালীন কাজ করে বৃদ্ধ পিতা-মাতা ও তার দুই সন্তানের ভরণ-পোষণ চালাতো। গ্রামে স্বামী পরিত্যাক্তা রেজিয়া বেগমের ২ ছেলেকে নিয়ে রেজিয়ার বৃদ্ধ পিতা-মাতা সুখেই ছিলেন। দু’বেলা দু’মুঠো ভাতের চিন্তা ছিল না তাদের। কিন্তু এই সুখ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি ওই বৃদ্ধ যুগলের। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক জনসভায় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার শিকার হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান রেজিয়া বেগম।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ওই এলাকার এক আওয়ামী লীগের নারী নেত্রীর সাথে নিহত রেজিয়ার সুসম্পর্ক ছিল। এরই জের ধরে ঘটনার দিন ওই নারী নেত্রী নিহত রেজিয়াসহ আরও ২০ জন নারীকে সঙ্গে নিয়ে শেখ হাসিনার জনসভায় যোগ দেন। জনসভা চলাকালীন সময় হঠাৎ ভয়াবহ গ্রেনেড বিস্ফোরণে রেজিয়া বেগমের মৃত্যু হলে ২২ আগস্ট নিহত রেজিয়ার পিতা-মাতা মেয়ের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে ঢাকায় গিয়ে মেয়ের লাশ শনাক্ত করেন। পরে তাকে ঢাকা আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়।

উপার্জনক্ষম মেয়ের মৃত্যুর পর থেকেই বৃদ্ধ মা আমেনা বেগম শোকে আড়াই বছর বাকরুদ্ধ অবস্থায় শয্যাসায়ী থাকার পর সুচিকিৎসার অভাবে ২০০৬ সালে মারা যান। গোটা পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া। অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটতে থাকে তাদের। পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এসব খবর জানতে পেরে তাদের ঢাকায় ডেকে পাঠান এবং আফাজ উদ্দিনসহ নিহত রেজিয়ার ২ ছেলেকে আবাদি জমি কিনে চাষাবাদ করার পরামর্শ প্রদান করেন।

২০০৪ সালে ঘটনার পরেই এক লাখ টাকা, ২০১৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ৮ লাখ টাকা ও পর্যাক্রমে মোট ৩২ লাখ টাকা তাদের দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে টাকা দিয়ে জমি ক্রয় ও বন্ধক নিয়ে চাষাবাদ করছেন তারা। কিছু টাকা দিয়ে নুরনবী একটি গরুর খামার গড়ে তুলেছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট আকুতি জানিয়ে রেজিয়ার বড় ছেলে দিনমজুর হারুন অর রশীদ বলেন, তার একমাত্র মেয়ে হালিমা আক্তার এইচএসসি পরীক্ষায় পাশ করে কাউনিয়া কলেজে ডিগ্রি কোর্সে অধ্যায়ন করছে। তাকে যেন ছোট হলেও একটি সরকারি চাকুরি দেওয়া হয়। তা হলে তাকে আর সাহায্যের জন্য কারো কাছে হাত পাততে হবে না।

রেজিয়ার পুত্রবধূ আনোয়ারা বেগম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া টাকায় ৯ শতাংশ বাড়ি ভিটার জমি ক্রয় করেছি। সেখানেই পুরাতন টিনের ঘরে বসবাস করতেছি। সরকার যেন আমাদের একটি পাকা বাড়ি নির্মাণ করে দেন।

বর্তমানে রেজিয়ার পরিবারের দাবি, মায়ের হত্যার বিচার নানা ভাই দেখে যেতে না পারলেও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই যেন গ্রেনেড হামলার বিচার কার্যকর করা হয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর