পরিচয় পাল্টে রাজশাহীতেই কেনো খুনিদের আশ্রয়

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী | 2023-08-31 03:42:07

 

মাত্র ৯ দিনের ব্যবধানে রাজশাহীতে খোঁজ মিললো দুই দাগী আসামির। একজন মৃতুদণ্ডাদেশ এবং অন্যজন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড নিয়ে লুকিয়ে ছিলেন রাজশাহীতে। পাল্টে ফেলেছিলেন পরিচয়। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। র‌্যাব তাদের ঠিকই খুঁজে বের করেছে।

তারা হলেন- মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক জাসদ নেতা কাজী আরেফ হত্যার ফাঁসির আসামি রওশন (৫৮) এবং কুষ্টিয়ার কুমারখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জামিল হোসেন বাচ্চু হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি মো. মানিক (৬০)।

রওশন রাজশাহীতে ‘আলী’ নাম ধারণ করে বসতি গড়েছিলেন। জমির দালালি করে দুটি বাড়ির মালিক হয়েছিলেন। থাকতেন স্ত্রী-সন্তানকে সাথে নিয়েই। ২২ বছর তিনি রাজশাহীতেই ছিলেন। ‘উদয় মণ্ডল’ নামে একটি জাতীয় পরিচয়পত্রও করেছিলেন। রওশনের মতোই পরিচয় পাল্টে প্রায় ১২ বছর ধরে রাজশাহীতে বাস করছিলেন মো. মানিক।

তিনি রাজশাহী নগরীর চন্দ্রিমা থানার কৃষ্টগঞ্জ এলাকায় জমি কিনে বাড়ি করেন। রকিব উদ্দিন নামে করেন জাতীয় পরিচয়পত্র। এ নামেই তিনি পরিচিত হয়ে ওঠেন। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সুখে শান্তিতেই দিন কাটাচ্ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে র‌্যাব তাকে গ্রেফতার করে।

এর আগে গত ১৮ আগস্ট নগরীর ভাড়ালীপাড়া এলাকা থেকে রওশনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

চেয়ারম্যান বাচ্চুকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। আর কাজী আরেফসহ পাঁচ নেতাকে একসঙ্গে হত্যা করা হয়েছিল ব্রাশফায়ারে। কাজী আরেফসহ পাঁচজনকে একসঙ্গে হত্যায় অভিযুক্ত রওশনের বাড়ি মেহেরপুর। আর চেয়ারম্যান বাচ্চু হত্যায় অভিযুক্ত মানিকের বাড়ি কুষ্টিয়া। রওশনের বিরুদ্ধে আরও দুটি হত্যা এবং ডাকাতির মামলা আছে।

র‌্যাব-৫ এর নাটোর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মেজর মো. সানরিয়া চৌধুরী জানান, র‌্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা বিভাগ থেকে মানিকের তথ্য পেয়ে অভিযান চালানো হয়। মানিক রাজশাহীতে রকিব হয়ে যাওয়ায় তার নাম নিয়ে বিভ্রান্তি ছিল। তবে তার আগের জাতীয় পরিচয়পত্রে ছবি থাকায় চিনতে সমস্যা হয়নি। সহজেই তাকে ধরা গেছে। আবার রওশনকে গ্রেফতারের সময়ও একই রকমের সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। একেবারে নিশ্চিত হয়ে ধরা হয়।

তিনি বলেন, মানিক ও রওশনের মতো এরকম আরও কোনো অপরাধী রাজশাহীতে লুকিয়ে আছেন কি না সেটিও তারা পর্যবেক্ষণ করছেন।

মানিক ও রওশনকে পাওয়া গেল রাজশাহী শহরের উত্তরপাশে তুলনামূলক নতুন এলাকায়। ওই এলাকায় কেনো অপরাধীদের আশ্রয় জানতে চাইলে র‌্যাব-৫ এর রাজশাহীর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. জিয়াউর রহমান তালুকদার বলেন, যে সময় তারা এ এলাকায় এসেছিল তখন ওই এলাকাটি ছিল পিছিয়ে পড়া অনুন্নত একটি এলাকা। সেখানে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের বসবাস ছিল বেশি। ফলে ওই এলাকায় তারা সহজেই আশ্রয় পেয়েছে।

তিনি বলেন, মধ্যশহরের মানুষ অনেক বেশি সচেতন। ফলে অচেনা কেউ এলে তার সম্পর্কে খোঁজ নেন। কিন্তু পিছিয়ে পড়া এলাকায় সেটা হয় না। এই সুযোগটাই পেয়েছিল রওশন ও মানিক।

তিনি আরও বলেন, আগে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোতে দক্ষ জনবল, উন্নত প্রশিক্ষণ এবং আধুনিক সরঞ্জামাদি ছিল না। ফলে অপরাধীরা সহজেই পরিচয় লুকিয়ে ফেলতে পেরেছে। জাতীয় পরিচয়পত্রও পাল্টাতে পেরেছে। এখন কিন্তু সবকিছুই কঠিন।

এ বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শফিকুজ্জামান জোয়ার্দ্দার বলেন, চরমপন্থী দলগুলোর মধ্যে নিজেদের মধ্যে যে যোগাযোগ সেটা এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় তাদের বসতি গড়তে বড় ভূমিকা রাখে। এমনও হতে পারে যে, একটা দলের কেউ কোনো এলাকায় আশ্রয় পেলে আরেক দলের লোককে অবহিত করে এবং সেও আশ্রয় নেয়। এটা নিজেদের স্বার্থেই তারা করে থাকে।

র‌্যাব জানিয়েছে, রওশন ও মানিকের বাড়ি একই এলাকায় হলেও তাদের কোন যোগসূত্র আছে কি না তা এখনও জানা যায়নি। সেটি র‌্যাব খতিয়ে দেখছে। পাশাপাশি আরও কেউ রাজশাহীতে ছদ্মবেশে আছেন কি না সে বিষয়েও র‌্যাবের গোয়েন্দারা খোঁজ নিচ্ছেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর