দখলদার ভূমিদস্যুদের দিন শেষ বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান দিয়ে যেন কেউ রাস্তা দখল না করি।
তিনি বলেন, জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু বলে যেভাবে দেশকে ভালোবেসেছে মুক্তিযোদ্ধারা, জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু বলে জীবন দিয়েছে, পঙ্গুত্ব বরণ করেছে মুক্তিযোদ্ধারা। সেই জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধুকে সামনে রেখে শহরটাকে দখলমুক্ত করব। এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।
মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) রাজধানীর আগারগাঁও এলাকার বঙ্গবন্ধু একাডেমি মাঠে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে কর্মহীন, দুস্থ ও অসহায় মানুষের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র কথা বলেন। ২৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফোরকার হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্যে রাখেন, ডিএনসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা,কাউন্সিলর দেওয়ান আব্দুল মান্নান ও বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলরগণ উপস্থিত ছিলেন।
মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, সাধারণত কোনো মিটিং মিছিলে আমি যেতে পারি না, ইচ্ছা থাকা সত্বেও। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে সুইজারল্যান্ডে গিয়েছিলেন সেই সুইজারল্যান্ডে যেয়ে উনার স্বপ্ন ছিল পাশ্চাত্যের সুইজারল্যান্ড করবে এই ঢাকা শহরকে। এবং উনি সেই সুইজারল্যান্ড থেকে এসেই তৎকালীন প্রখ্যাত আর্কিটেক্ট মাজহারুল ইসলামকে বলেছিলেন যে আমি সুইজারল্যান্ড দেখে আসছি সেই সুইজারল্যান্ডের মতোই এই ঢাকা শহরকে সাজাতে হবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু উনি শুধু স্বপ্ন দেখেন নাই উনি স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন বাংলাদেশ করে, একটি লাল সবুজের পতাকা দিয়ে। তাই উনি এটাও স্বপ্ন দেখছিলেন কিভাবে ঢাকা শহরকে পাশ্চাত্যের সুইজারল্যান্ড করা যায়। উনি পরিকল্পনা করছিলেন ম্যাপিং করছিলেন সেই প্রখ্যাত স্থপতিদের নিয়ে কিভাবে এই শহরকে সুন্দর করা যায়। উনি যখন পরিকল্পনা করছিলেন উনার যখন চিন্তা হল দেশ স্বাধীন হয়েছে কিভাবে সুইজারল্যান্ডের মতো পাশ্চাত্যের ঢাকা শহর করা যাবে। ঠিক তখনই উনি পরিকল্পনা করছেন দেশের উন্নতি কিভাবে হবে, দশের উন্নতি কিভাবে, দুঃখী মানুষের উন্নতি কিভাবে হবে, সাধারণ মানুষের উন্নতি কিভাবে, শহরের উন্নতি কিভাবে হবে, যখন এই পরিকল্পনা করছেন তখনই বিপদগামী কিছু সেনাবাহিনী যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান এবং খুনি খন্দকার মোশতাক। তারা তখন পরিকল্পিতভাবে জাতির জনককে হত্যা করেন। জাতির জনক পরিকল্পনা করছিল এই দেশকে কিভাবে উন্নত করা যায়।
তিনি বলেন, এই ঢাকা শহর অপরিকল্পিত শহর। কারণ পরিকল্পনার যে মানুষটা ছিল তাকে তো ১৯৭৫ সালে মেরে ফেলা হয়েছে সুতরাং এটা অপরিকল্পিত শহর ছাড়া আর কিছুই না। যেখানেই হাত দেই সেখানেই দখল। কল্যাণপুর-মিরপুর ও শ্যামলীর পানি আসার কথা কল্যাণপুর রিটেনশন পন্ড হিসাবে চিহ্নিত কল্যাণপুর ক, খ, গ, ঙ, চ খালে। ৫টি খালের পানি নামবে রিটেনশন পন্ডের মধ্যে। সেখানে ১৭৩ একর জমি আছে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ১৭৩ একরের মধ্যে মাত্র ৩ একর আছে দখলমুক্ত আর বাকি ১৭০ একর জমি দখল হয়ে গেছে। তাই শোক দিবসে অঙ্গীকার করতে হবে জাতির জনকের স্বপ্নের বাংলাদেশের রাজধানী সেই ঢাকাকে যদি পাশ্চাত্যের সুইজারল্যান্ড করতে হয়, যারা দখল করে আছে তাদের বিরুদ্ধে এক সাথে অঙ্গীকার করতে হবে দখলদারদের দিন শেষ। কারণ আওয়ামী লীগ আছে আমাদের সাথে।
তিনি আরও বলেন, আমি নগরপিতা নই, আমি সাধারণ মানুষের সাথে বসে কাজ করতে চাই। আমি নগরপিতা না নগর সেবক হিসেবে আপনাদের সাথে থাকতে চাই। নগর সেবক হিসেবে সাধারণের সাথে বসে কাজ করতে চাই। আমি মনে করি আমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। গত সপ্তাহে গিয়েছিলাম দক্ষিণ কাফরুলে রাস্তা ছিল ৩০ ফুট বাড়ি হয়ে গেছে রাস্তার মধ্যেই, সুতরাং রাস্তা আছে মাত্র ১৫ ফুট। আমি দরজা নক করে বললাম রাস্তা কেন দখল করেছেন? বলে আমি করে ফেলেছি। আপনি করে ফেললেন আর জনগণের অসুবিধা হবে চিন্তা করবেন না! আর একজনের বাসায় গিয়ে বললাম কেন করলেন বললেন আমি তো পারমিশন পেয়েছি। সুতরাং যারা করে ফেলে আর যারা অবৈধ পারমিশন দেয় দুইজনের বিরুদ্ধেই অঙ্গীকার করতে হবে অবৈধ দখলদারদের জন্য সিটি করপোরেশন কোনো বৈধ নোটিশ দিবে না। যারা অবৈধ দখলদার, যারা খাল দখল করেছেন, যারা রাস্তা দখল করেছেন, যারা জনগণের সম্পত্তিকে নিজে করে নিয়েছেন, খালে ভবন করেছেন সেই ভূমি দস্যুদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। জাতির জনকের সবচেয়ে বড় অস্ত্র ছিল সাধারণ মানুষ ওনাকে ভালোবাসতেন, আপনারা ভালোবাসেন আপনাদের শহরকে। কাজেই আসুন ভূমিদস্যুর বিরুদ্ধে সোচ্চার হই। এটি হোক আগস্ট মাসের অঙ্গীকার।
মেয়র বলেন, ভূমিদস্যুদের বিরেুদ্ধে অঙ্গীকার করতে হবে। রাস্তা যারা দখল করে বেলায়েত হোসেনদের মতো লোকদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। সোচ্চার হতে হবে যারা অন্যায় করে, নিজের সুবিধার চিন্তা করে শুধু যারা বাসাবাড়ি বানায়, নিজের কথা চিন্তা করে ড্রেজার দিয়ে বালু ভরাট করছে, বালু ফেলার সাথে সাথে যে খাল দখল হয়ে যাচ্ছে এটি তারা কেয়ার করে না। কারণ তাদের জোর তাদের ক্ষমতা। তাদের জোর তাদের রাজনীতি। তাদের জোর তাদের কাছে টাকা আছে। আমাদের সকলের জোর যদি মনে করি আমরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করব এই জোরের উপরে আর কোন জোর নাই। অন্যায়কে প্রশ্রয় দেব না, এটি হোক আমাদের অঙ্গীকার। অন্যয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে এটি হোক আমাদের অঙ্গীকার।