ভারী বর্ষণ ও মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে জেলার অর্ধলাখেরও বেশি মানুষ। তলিয়ে গেছে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল।
বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১২টায় যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের শহর রক্ষা বাঁধ
পয়েন্টের গেজ মিটার (পানি পরিমাপক) আব্দুল লতিফ।
পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল। পানি বৃদ্ধিতে দেখা দিয়েছে খাবার ও বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট। তলিয়ে গেছে অনেক
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠ, রাস্তাঘাট, বিস্তীর্ণ রোপা আমনের ক্ষেত। ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সদর, চৌহালী ও শাহজাদপুরের নদী পারের মানুষ। তবে
বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধে চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
গত ১৪ আগস্ট থেকে শুরু করে ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার নদী তীরবর্তীর নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল বন্যাকবলিত হয়ে
পড়েছে। এসব এলাকার বসতবাড়ি ও রাস্তঘাটে পানি ওঠায় বিপাকে পড়েছেন বন্যা দুর্গতরা। অনেকেই বাড়ি-ঘর ছেড়ে উঁচু রাস্তা বা স্কুল মাদরাসার মাঠে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, গত কয়েক দিন হলো যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বন্যা পূর্বাভাস
সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি আরও দুদিন অব্যাহত থাকবে। তবে পানি বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত বন্যার তেমন কোনো ঝুঁঁকির পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
সিরাজগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইতিমধ্যে সদর ও শাহজাদপুরের কিছু এলাকায় ত্রাণ বিতরণ শুরু করেছি। জেলার ৫টি উপজেলায় ২০০মেট্রিক টন চাল ও নগদ ১ লাখ করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তারা সেটা তাদের চাহিদা অনুযায়ী যে কোনো সময় বিতরণ করবেন। এছাড়া জেলায় ৭২১ মেট্রিক টন চাল ও আড়াই লাখ টাকা মজুত রাখা হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ সিভিল সার্জন ড. রামপদ রায় জানান, বন্যা কবলিত এলাকায় আমাদের মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। বিশুদ্ধ পানি, খাবার স্যালাইন ও ট্যাবলেট বিতরণ করা হচ্ছে। সেই সাথে সার্বক্ষণিক বন্যাকবলিত মানুষদের খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।