নওগাঁয় কমেছে কাঁচা মরিচের দাম

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম, নওগাঁ | 2023-08-30 11:39:45

কিছুদিন আগেও যেখানে কাঁচা মরিচের দাম ছিল আকাশচুম্বী। সেখানে মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে নওগাঁর বাজারগুলোতে কমতে শুরু করেছে কাঁচা মরিচের দাম। এতে সাধারণ ক্রেতাদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। তবে দাম কমে যাওয়ায় হতাশ মরিচ চাষিরা।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দোকানগুলোতে কাঁচা মরিচের কিছুটা সরবরাহ বেড়েছে। পাইকারিতে প্রতি কেজি মরিচ ৪০ টাকা থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকা কেজিতে। এতে সাধারণ ক্রেতাদের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রয়োজনের তুলনায় আমদানি বেশি হওয়ায় কমতে শুরু করেছে কাঁচা মরিচের দাম। বগুড়াসহ কয়েকটি জেলা থেকেও নওগাঁর বাজারগুলোতে মরিচ আসছে। এ কারণে মরিচের দাম কমতে শুরু করেছে।

সদর উপজেলার বর্ষাইল ইউনিয়ন এর গোবিন্দপুর গ্রামের মরিচ চাষি রমজান আলী জানান, দুই বিঘা জমি মরিচের আবাদ করিছি। গত সপ্তাহে পাইকারি দরে ১০০ টেকা কেজি হিসাবে ৪ হাজার টেকা মণ মরিচ বিক্রি করছিলাম তবে বর্তমানে দাম কমে গেছে। এখন প্রতি কেজি মরিচ ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। তবে আগের মত দাম থাকলে লাভ একটু বেশি পেতেন বলে জানান তিনি।

নওগাঁ সদর উপজেলা বক্তারপুর ইউনিয়নের বক্তারপুর গ্রামের মরিচ চাষি আব্দুল লতিফের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, হামার ১০ কাঁঠা জমিত কাঁচা মরিচের আবাদ করিছি সপ্তাহে দুই বার মরিচ তোলা যায়। কিছুদিন আগে ১০০ টেকা কেজি দরে পাইকারি মরিচ বিক্রি করিছি প্রায় দেড় মন। গত ১৫দিন আগেও ৮০ টাক কেজি আঁধামণ মরিচ বিক্রি করিছি। আর বর্তমানে ৪০ থেকে৫০ টেকা কেজি দরে মরিচ বিক্রি করা লাগিচ্ছে। হঠাৎ করা মরিচের দাম কমে গেল। এদিকে আবার কয়েক দিন তেকে বৃষ্টি হচ্ছে যার জন্য গাছের গুটিগুলা মারা যাচ্ছে। এর কারণে একটু সমস্যা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, ১০ কাঠা জমিত শ্রমিক, সার ও আইল বাঁধাসহ জমিতে প্রায় পাঁচ হাজার টকার মতন খরচ হয়। আশ্বিন মাসে জমিতে চারা রোপণ করা লাগে। চারা বড় হওয়ার পর কীটনাশক আর ভিটামিন দিতে প্রতি সপ্তাহে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা খরচ হয়। প্রায় পাঁচ মাসের এ আবাদে এই পরিমাণ জমি তেকে লক্ষাধিক টাকার মরিচ বিক্রি করা যায়।

নওগাঁ শহরের কাঁচা বাজারের ফারুক হোসেন বলেন, কিছুদিন আগেই ১০০টাকা দরে পাইকারি হিসেবে চাষিদের কাছে থেকে কাঁচা মরিচ কেনা হতো। আর সেই মরিচ খুচরা বিক্রি করতাম ক্রেতাদের কাছে ১২০-১৩০কেজি দরে। তবে বর্তমানে মরিচের আমদানি বেড়ে যাওয়ায় দাম কমে গেছে। এখন আমরা চাষিদের কাছে থেকে ৪০-৫০টাকা কেজি দরে মরিচ কিনে খুচরা ৬০-৭০কেজি হিসেবে বিক্রি করছি। এবারে জেলায় পর্যাপ্ত পরিমাণে মরিচের আবাদ হয়েছে। এছাড়া পাশ্ববর্তী জেলা বগুড়াসহ কয়েকটি জেলা থেকে নওগাঁয় মরিচ ঢুকছে যার কারণে দাম কমে গেছে।

জেলা কৃষি বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ১ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে মরিচের চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। গত এক মাস আগেও যেখানে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ পাইকারীতে ১২০-১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। ওই মরিচ খুচরা বাজারে ১৫০ টাকা থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। মরিচের দাম বেশি পাওয়া চাষিদের মাঝে আনন্দ বিরাজ করছিল। কিন্তু মরিচের দাম বেশি থাকায় সাধারণ ক্রেতাদের মাঝে অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বলেন শামসুল ওয়াদুদ জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার মরিচের ভালো ফলন হয়েছে। মরিচ গাছে অনেক সময় ভাইরাস হয়ে পাতাগুলো কুকরিয়ে (গুটিশুটি) যায়। এজন্য ভাল বীজের চারা রোপন করতে হবে। আর বৃষ্টিতে যদি পঁচানি রোগ দেখা দেয়, তবে কৃষকরা কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে কীটনাশক প্রয়োগ করতে পারে। এছাড়া প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি অফিসার আছে। তাদের থেকেও পরামর্শ নেয়া যাবে। কৃষকদের সার্বিক ভাবে সহযোগিতা করা হয়ে থাকে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর