মৌসুমী বায়ূর প্রভাবে ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৬৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯ টায় সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টের গেজ মিটার (পানি পরিমাপক) আব্দুল লতিফ পানি বৃদ্ধির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল। এতে জেলার পাঁচটি উপজেলার প্রায় ৪০টি ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ায় তাদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। দেখা দিয়েছে খাবার ও বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট। তলিয়ে গেছে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠ, রাস্তাঘাট, রোপা আমনের ক্ষেত। ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চৌহালী, কাজিপুর ও শাহজাদপুরের নদী পাড়ের মানুষ। তবে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধে চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানায় পানি উন্নয়ন বোর্ড।
অপরদিকে, যমুনা নদীর পানির প্রবল চাপে জেলার কাজিপুর উপজেলার মনসুর নগরের মাজনাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় পাকা রাস্তার সেতু দুটি ধসে গেছে। এসময় রাস্তার বেশ কিছু অংশও ধসে গেছে।
মনসুর নগর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক জানান, কদিন ধরেই পানির তীব্র চাপের কারণে মাজনাবাড়ী হাই স্কুল হয়ে সরিষাবাড়ী ও জামালপুর যাওয়ার এলজিইডির এই সড়কটির বেশ কিছু অংশ ভেঙে গেছে। এ রাস্তার দুটি সেতুতে ধস দেখা দিয়েছে। একপর্যায়ে একটি সেতু সম্পূর্ণরুপে ধসে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। অপর সেতুটিও ধসে গেছে বলে জানান তিনি।
কাজিপুর উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী শামছুল বারি জানান, ওই সড়কে একটি এলজিইডির পুরাতন সেতু ও অপরটি ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগের। দুটি সেতু ধসে যাওয়ার খবর আমরা পেয়েছি।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী জাকির হোসেন বলেন, যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে নদীর অভ্যন্তরীণ নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। আরও দু’একদিন পানি বাড়তে পারে বলে বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র জানিয়েছে।
জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মদ জানান, ইতোমধ্যে জেলায় ৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সাড়ে ৫শ’ টন চাল ও নগদ আড়াই লাখ টাকা মজুদ রয়েছে। এছাড়াও উপজেলাগুলোতে মোট ১২৫ টন চাল মজুদ রাখা হয়েছে। তবে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে তালিকা করে বন্যার্তদের মাঝে তা দ্রুত বণ্টনের উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।