এটি ছোঁয়াচে এবং মূলত শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। তবে বড়দেরও হতে পারে। এর লক্ষণগুলোর সাথে জলবসন্তের মিল রয়েছে। অনেক অভিভাবক এটিকে জলবসন্তের সাথে মিলিয়ে ফেলেন। এমনকি চিকিৎসকেরাও অনেকসময় ভুল করে থাকেন। 'হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ' নামের রোগটি বাংলাদেশে খুব একটা হয় না। তবে চিকিৎসকেরা বলছেন, ইদানিং রোগটি আগের চেয়ে কিছুটা বেশি দেখা যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল বা সিডিসি'র তথ্যমতে, এটি ছোঁয়াচে এবং আক্রান্ত হওয়ার প্রথম সপ্তাহে বেশি ছড়ায়। রোগীর শরীরের সাথে সরাসরি সংস্পর্শ, আক্রান্ত হওয়ার পর গোটা থেকে বের হওয়া তরল পদার্থ, হাঁচি ও কাশির মাধ্যমে যে 'ড্রপলেট' ছড়ায়, মুখের লালা, সর্দি, মলের মাধ্যমে এর সংক্রমণ হতে পারে।
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়, গত মাসের ২৫ তারিখ ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা মুক্তা আক্তার খেয়াল করলেন তার ১৮ মাস বয়সী মেয়ের গায়ে একটা দুটো করে ফুসকুড়ি দেখা দিচ্ছে। তিনি বলেন, শুরুতে ভেবেছিলেন জলবসন্ত। পরের দিন দেখলাম ফুসকুড়ির সংখ্যা বেড়ে গেছে। ডাক্তারের সাথে অনলাইনে কথা বললাম, ছবি পাঠালাম। তিনি বললেন এটা চিকেন পক্স। উনি সেটার জন্য কিছু ওষুধ দিলেন। এর সপ্তাহ খানেক পর শিশুটির উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর ও কাশি দেখা দেয়। তখন সরাসরি চিকিৎসকের কাছে গেলে তিনি জানান এটি আসলে হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ।
ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশুরোগ বিভাগের চিকিৎসক ডা. রওনক জাহান বলেছেন, হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ এবং জলবসন্ত দুটোই ভাইরাসজনিত অসুখ। দুটোর মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজে গলা ব্যথা, জ্বর এবং খাবারে অরুচি প্রথম দিকের উপসর্গ। এর কয়েকদিন পর মুখ ও জিহ্বায় পুঁজযুক্ত ঘায়ের মত ফুসকুড়ি হয়। এই অসুখে হাতে এবং পায়ে ত্বকের রঙ অনুযায়ী গোলাপি, লাল অথবা কাল রঙের উঁচু গোটা দেখা দেয়। পরে তা পানিযুক্ত ফুসকুড়ির মতো হয়ে ওঠে।
তিনি বলেন, বেশিরভাগ সময় হাত, পা এবং জিহ্বাতেই ফুসকুড়ি দেখা দেয় তবে উরু অথবা নিতম্বেও মাঝে মাঝে হয়ে থাকে। শিশু এবং বড়দের একই রকম লক্ষণ থাকে। তবে পাঁচ বছরের নিচের বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে লক্ষণগুলো বেশি কষ্টদায়ক হয়ে থাকে। অসুখটি একাধিকবার হতে পারে। সাধারণত বর্ষার সময় এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে অসুখটি কম হয়। 'ফুট অ্যান্ড মাউথ' নামে গবাদি পশুর একটি অসুখ রয়েছে যা এক নয়।
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস বা এনএইচএস এই অসুখ দুটির চিকিৎসা হিসেবে বেশ কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করেছে। হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ অসুখের কোন অ্যান্টিবায়োটিক অথবা ঔষধ নেই। সাধারণত ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে অসুখটি সেরে যায়। এসময় চিকিৎসকেরা প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে বলেন, ফলের জুস খেতে নিষেধ করেন। নরম খাবার খাওয়ার কথা বলেন, বেশি মশলাযুক্ত খাবার খেতে বারণ করা হয়। ঔষধ হিসেবে শুধু প্যারাসিটামল সেবন করতে বলা হয়।