তিনটি ছোট পদক্ষেপেই গণপরিবহন সংকট কমানো সম্ভব বলে জানিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর উন্নয়ন পরিকল্পনা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ঢাকার যানজট নিয়ন্ত্রণে সবার আগে সমস্যা সমাধানের মানসিকতা তৈরি করতে হবে। তা না হলে যতই ব্রিজ আর ফ্লাইওভার বানানো হোক না কেন তা কখনোই ভালো ফল বয়ে আনবে না।’
সম্প্রতি বার্তা২৪.কম’র সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
ঢাকার ট্র্যাফিক সমস্যার সমাধানের বিষয়ে ড. শফিকুর রহমান বলেন, ‘ঢাকার পুরো ট্র্যাফিক ব্যাবস্থা একটি নিরবিচ্ছিন্ন নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। যেমন: যা করেন তা পুরো ঢাকা শহরকেন্দ্রিক হতে হবে। উত্তরা থেকে মিরপুর ফ্লাইওভার বা মেট্রোরেল করে দিলে সেখানে থেকে মানুষ কিভাবে মতিঝিল যাবে? সেটা চিন্তা করতে হবে। ঢাকার প্রতিটি মানুষ প্রতিদিন কত কিলোমিটার চলাফেরা করে? ২-৪ কিলোমিটারের মধ্যে পায়ে হেঁটে যাতায়ত করা সম্ভব। সরকার যদি বড় ও দখলমুক্ত ফুটপাথ নিশ্চিত করতে পারতো তাহলে ৬০ শতাংশ মানুষের ট্রাফিক সমস্যা দূর হয়ে যেতো। এছাড়া ৫-১০ কিলোমিটার দূরত্বের রাস্তার জন্য সাইকেল লেন থাকতে হবে এবং ৩০-৩৫ কিলোমিটারের জন্য থাকবে যথাযত বাস সার্ভিস।’
তিনি আরো বলেন, ‘এসব ছোট ও সহজ সমাধান বাস্তবায়ন না করে যদি ফ্লাইওভারের মতো উচ্চাভিলাষী প্রকল্প নিয়ে ব্যস্ত থাকেন তাহলে ট্র্যাফিক সমস্যার সমাধান হবে না।’
বেপরোয়া বাস ও যাত্রী হয়রানির বিষয়ে ড. শফিকুর রহমান বলেন, ‘ঢাকা শহরে বাসের ফ্রিকোয়েন্সি কম। তাই নগরে বাসের চাহিদা ও যোগানের মধ্যে ব্যবধান বেশি। ফলে মানুষ নিরুপায়। সরকার যদি সমস্ত পরিবহন খাতকে জনবান্ধব না করে তাহলে এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব না।’
ফ্লাইওভার বানিয়ে যানজট নিরসন সম্ভব কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ঢাকার জন্য ফ্লাইওভার ডিজাস্টার। বিশ্বের কোনো বড় শহরে কি ফ্লাইওভার দেখাতে পারবেন? তার মানে কি তাদের টাকা পয়সা নেই? তাদের দেশে কি উন্নয়ন নেই? কিন্তু আমাদের দেশের মন্ত্রী-এমপিদের ভুল বুঝিয়ে কিছু লোভী মানুষ তাদের স্বার্থ হাসিল করে নিচ্ছে। জনগণকে বুঝতে হবে দৃশ্যমান উন্নয়ন মানেই সব সমস্যার সমাধান না।’
ঢাকায় রাইড শেয়ারিং করে সংকট মোকাবিলা সম্ভব হবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক রাইড শেয়ারিং আসার ফলে সাময়িকভাবে সংকট মোকাবিলা করা যাচ্ছে। কিন্তু এটা কখনোই টেকসই সমাধান হতে পারে না। আগে যে গাড়ি পার্কিংয়ে থাকতো এখন সেটা রাস্তায় ঘুরছে। ফলে রাস্তার গাড়িগুলোর সাথে যুক্ত হয়েছে আরো কয়েকটি ব্যবসায়িক গাড়ি। এটা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, এই নগরের ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম গণপরিবহনবান্ধব না। কেননা রাইড শেয়ারিংয়ের খরচ গণপরিবহনের চেয়ে অনেক বেশি। দেখা যায়, এখন শহরে মোটরসাইকেলের সংখ্যা বেড়ে গেছে। এতে কিছু মানুষের বেকারত্ব কমছে ঠিক কিন্তু দুর্ঘটনাও বাড়ছে।’
ট্রাফিক নিয়ম মানার বিষয়ে এই অধ্যাপক বলেন, ‘ট্রাফিক নিয়ম করে ছেড়ে দিলেই হবে না। সেটা মেনে চলার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। অধিকাংশ মানুষ মনে করে, ট্রাফিক নিয়ম শুধু চালকরা মানবেন। আসলে বিষয়টা তেমন না। যাত্রীদেরও বুঝতে হবে আইন সব মানুষের জন্য। বাংলাদেশে আইন মানাতে সবাইকে তাগিদ দিতে হয়। তাই আমাদের চালক ও যাত্রী উভয় পক্ষকে ট্রাফিক আইন মানার বিষয়ে সচেতন করতে হবে। নয়তো এই সেক্টরে বিশৃঙ্খলা লেগেই থাকবে।’