অক্টোবরে পায়রা সেতুতে চলবে দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নের চাকা

, জাতীয়

জহির রায়হান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল | 2023-08-30 04:31:10

দক্ষিণাঞ্চলে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। বড় ধরণের অবকাঠামো উন্নয়ন, পোর্ট,  শিল্পায়ন, কারখানা, বিশ্ববিদ্যালয়, সেনানিবাস, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজসহ দক্ষিণাঞ্চলে ধারাবাহিক উন্নয়নের দক্ষিণাঞ্চলে ছোঁয়া লেগেছে।  যোগাযোগ ব্যবস্থা এসেছে আমূল-পরিবর্তন। গড়ে উঠছে শিল্প কারখানা আর কর্মসংস্থান। পাশাপাশি সারা দেশের সাথে গড়ে উঠবে ব্যবসায়িক সর্ম্পক।

সর্বদক্ষিণের কুয়াকাটার সাথে সড়ক পথে ঢাকা অঞ্চলের ফেরিবিহীন যোগাযোগ ব্যবস্থার মেলবন্ধন সৃষ্টি করবে পায়রা সেতু। চলতি বছরের অক্টোবর মাসেই উদ্ধোধনের পর এই সেতুর ওপর দিয়ে চলবে গোটা দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নের চাকা। যা বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের একটি নতুন উন্নয়নের মাইলফলক । 

পায়রা সেতু নির্মাণ প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা-বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের লেবুখালীর পায়রা নদীর ওপরে  সেতুর ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধন করেন।

এরপর ২০১৬ সালের ২৪ জুলাই মাসে পায়রা সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সেতু প্রকল্পের কার্যাদেশে নির্মাণ কাজের জন্য  ৩৩ মাস সময় বেঁধে দেওয়া হলেও দুই দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।  তবে তার আগেই আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যে সেতু চালু করতে তৎপরতা চালাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

১ হাজার ৪৭০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৯.৭৬ মিটার প্রস্থের  সেতুটিতে দুইটি অ্যাবাটমেন্ট, ৩১টি পিলার, ২০০ মিটার করে দুটি স্প্যান ও নদীর তলদেশে ১৩০ মিটার দীর্ঘ পাইল বসানো, সেতুর উপরিভাগের পিচ ঢালাই, ১৬৫টি পোস্টের সোলার দ্বারা লাইটিং সিস্টেম লাগিয়ে চালু করা সহ মূল সেতুর কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

তবে ১ হাজার ২৬৮ মিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক, টোল প্লাজা, প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ, ইলেকট্রিফিকেশনসহ ফোরলেন সহ  এই সেতুর ৯৯ ভাগ নির্মাণ  কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে।

 প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা সম্ভাব্য নির্মাণ ব্যয়ে পায়রা সেতুটি  নির্মাণ করা হয়েছে চট্টগ্রামের তৃতীয় কর্ণফুলী সেতুর আদলে নান্দনিক নকশায়। যা বরিশাল তথা গোটা দক্ষিণাঞ্চলে সবচেয়ে  আকর্ষণীয় সেতু।

পর্যটন করপোরেশন ও স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল বিভাগজুড়ে পর্যটন শিল্পে ব্যাপক সম্ভবনা রয়েছে। বিশেষ করে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা, পায়রা সমুদ্রবন্দর ও তার পার্শ্ববর্তী গঙ্গামতী, কাউয়ারচর, বরিশালসহ পদ্মার পাড় এলাকা। এসব বানিজ্যিক জোনে এলাকায় গড়ে উঠছে শিল্প কারখানাসহ নানা ধরনের উন্নয়নমূখী প্রতিষ্ঠান।

স্থানীয় জনসাধারণ ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, দক্ষিণাঞ্চল সব সময়ই অবহেলিত ছিল। এখন পদ্মা ও পায়রা সেতু পুরোপুরি চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটবে। এই দুটি সেতু ঘিরেই গড়ে উঠছে হোটেল-মোটেলসহ বহু ছোট-বড় শিল্পায়ন-কল-কারখানা।

 ফলে দক্ষিণাঞ্চলের সাথে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগের যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটবে। পাশাপাশি গড়ে উঠবে ব্যবসায়ীক সর্ম্পক। এবং পর্যটন সেক্টর উন্নয়নের পাশাপাশি সম্ভবনার নতুন দ্বার উন্মোচন হবে।

বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস বার্তা২৪.কম-কে বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর তা বাস্তবায়ন করছেন তারই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি আরও বলেন, স্বপ্নের পদ্মা ও পায়রা সেতু নির্মাণ হওয়ায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও জীবন-জীবিকা বদলে যাবে। দক্ষিণাঞ্চল বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের দিক দিয়ে পিছিয়ে আছে। এই জনপদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির বিরাট সুযোগ সৃষ্টি করবে পদ্মা ও পায়রা সেতু।

পর্যটন করপোরেশনের কুয়াকাটার ব্যবস্থাপক সুভাষ চন্দ্র নন্দি বার্তা২৪.কম-কে জানান, পদ্মা ও পায়রা সেতুকে সামনে রেখেই পায়রা সমুদ্র বন্দর, গঙ্গামতী, কাউয়ারচর, কুয়াকাটাসহ বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় গড়ে উঠছে আধুনিক মানের হোটেল-মোটেল, শিল্পায়নসহ নানা স্থাপনা।

পদ্মা ও পায়রা সেতু চালু হলে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বিঘ্নে এখানকার পর্যটন এলাকাগুলো ঘুরে যেতে পারবেন। বিশেষ করে কুয়াকাটা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরে পর্যটকদের বেশি সমাগম হবে। এছাড়াও রেল সংযোগ চালু হলে এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থারও পরিবর্তন ঘটবে। এতে দক্ষিণাঞ্চলে বেকারত্বের হার কমার পাশাপাশি স্বাবলম্বী হবে এখানকার ব্যবসায়ীরা।

পায়রা সেতু নির্মাণ প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী  মোহাম্মদ আবদুল হালিম জানান, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর পর্যন্ত ঢাকার সাথে ফেরিবিহীন সড়ক যোগাযোগ চালু করার লক্ষ্যে লেবুখালীর পায়রা নদীর ওপর নির্মিত হয়েছে ফোরলেন বিশিষ্ট পায়রা সেতু।

প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী মূল সেতুর  সম্পূর্ণ নির্মাণ কাজ  শেষে সেতুটি এখন পুরোপুরি  দৃশ্যমান হয়েছে । এখন শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষায়।  এটি উদ্বোধনের পর যান চলাচল  শুরু হলে উপকূলের ৫০ লাখ মানুষের দীর্ঘদীনের লালিত  স্বপ্নপূরণ হবে। যা বর্তমান সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়নের একটি নতুন মাইলফলক হয়ে থাকবে।

বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. সাইফুল হাসান বাদল বার্তা২৪.কম-কে জানান, স্বপ্নের পদ্মা ও পায়রা সেতুতে পুরোপুরি যানবাহন চালু হলে গোটা দক্ষিণাঞ্চলের সাথে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগের যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটবে। একই সাথে এসব অঞ্চলের সাথে গড়ে উঠবে দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসায়ীক সর্ম্পক।

পাশাপাশি পায়রা সমুদ্র বন্দরসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক ভাবে গড়ে উঠবে কল-কারখানা। এতে করে দক্ষিণাঞ্চলের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর বিনিয়োগ বাড়বে, তৈরি হবে কর্মসংস্থানের।

বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালে যুক্ত হয়ে বরিশাল  বিভাগের ১১টি সেতুর উদ্বোধনকালে

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি বলেছেন,পায়রা বা লেবুখালি সেতুটি দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য আরেকটি পদ্মা সেতুর মতো।  আশা করছি আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যে উদ্ধোধনের মাধ্যমে  বরিশালের লেবুখালির পায়রা সেতু  দিয়ে যান চলাচল করতে পারবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর