দেশে মাদকাসক্তদের মধ্যে বেশির ভাগই বেকার। যাদের কোনো আয় নেই; এই হার ৫৭.৮৭ শতাংশ। নিজের কৌতূহল থেকে মাদকে আসক্ত হয়েছে ৪০ শতাংশ। বন্ধুদের প্ররোচনায় মাদকে আসক্ত হয়েছে ৫৮ শতাংশ। বেশি ক্ষতিকর মাদকে আসক্ত হয়ে যারা রোগী হয়েছে তাদের বেশির ভাগই অশিক্ষিত; এই হার ২৫.৩৮ শতাংশ।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) বার্ষিক মাদকবিষয়ক সমীক্ষা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবছর ২৬ জুন মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে প্রকাশ করা হয়। এ বছর করোনার বিধি-নিষেধের কারণে সম্প্রতি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর কৌতূহল থেকে মাদকাসক্ত হয়েছে ৪০ শতাংশ রোগী। ২০১৯ সালে এই হার ছিল ৪৯.৪৯ শতাংশ; ২০১৮ সালে ১৭.১৩ শতাংশ; ২০১৭ সালে ২৪.১৫ শতাংশ এবং ২০১৬ সালে ৩২.৮৪ শতাংশ ছিল। ২০২০ সালে বন্ধুর প্ররোচনায় মাদকাসক্ত হয় সবচেয়ে বেশি ৫৮ শতাংশ। ২০১৯ সালে এভাবে আসক্ত হয় ৪৯.৮৩ শতাংশ; ২০১৮ সালে ৮১.২৭ শতাংশ (এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি); ২০১৭ সালে ৭৪.৯২ শতাংশ এবং ২০১৬ সালে হয় ৬৪.৪৪ শতাংশ। ২০২০ সালে সহজে আনন্দ পাওয়ার আশায়, পরিবারের প্রতিকূল অবস্থার কারণে এবং মাদকদ্রব্যের সহজ প্রাপ্তির কারণে ০.৫০ শতাংশ হারে রোগী মাদকাসক্ত হয়।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রসহ ডিএনসির চারটি সরকারি নিরাময়কেন্দ্র এবং ৩৭০টি বেসরকারি নিরাময়কেন্দ্রে ২০২০ সালে চিকিৎসা নেওয়া প্রায় ৩০ হাজার মাদকাসক্ত রোগীর ওপর এই সমীক্ষা চালানো হয়েছে।
জরিপে দেখা গেছে, মাদকাসক্তদের ২৬.৭৭ শতাংশেরই কোনো আয় নেই। পাঁচ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা মাসে আয় করে ১৬.৬৭ শতাংশ। ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা আয়ের ১৫.১৫ শতাংশ; ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় ১৩.৬৪ শতাংশের এবং ৩০ হাজার টাকার বেশি আয় ১০.১০ শতাংশের। আসক্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেকার ৫৭.৮৭ শতাংশ। গত বছর শিক্ষার্থী ছিল ১১.৬৮ শতাংশ; ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ৭.১১ শতাংশ; সরকারি ও বেসরকারি চাকরিজীবী ৮.১২ শতাংশ; শ্রমিক ৫.৮ শতাংশ; গাড়িচালক ৫.৮ শতাংশ এবং অন্যান্য পেশার ৫.৮ শতাংশ ব্যক্তি।
এ বিষয়ে ডিএনসির পরিচালক (নিরোধ শিক্ষা, গবেষণা ও প্রকাশনা) নূরুজ্জামান শরীফ গণমাধ্যমকে বলেন, মাদকে আসক্ত রোগীর হার ও ধরন সমীক্ষা করে সে অনুযায়ী আমরা ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করেছি। সচেতনতার জন্য বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম চলছে। পিআর গ্রুপ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বয়স ও পেশাকেন্দ্রিক সচেতনতার কাজ করছি। পাশাপাশি আভিযানিককাজও চলছে।
ডিএনসির পরিচালক (অপারেশনস) কুসুম দেওয়ান গণমাধ্যমকে বলেছেন, মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। যেসব ক্ষেত্রে মাদকের ঝুঁকি আছে সেগুলো চিহ্নিত করে আমরা নজরদারি করছি।