সরকারের সাড়া না পেয়ে পরিবহন ধর্মঘট

ঢাকা, জাতীয়

সাব্বির আহমেদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-27 03:56:26

মাস দুয়েক আগে মন্ত্রিসভায় সড়ক পরিবহন আইন যখন অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় ছিলো- তখন এটা নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত ছিলেন মালিক-শ্রমিক নেতারা। আইনটি অনুমোদনের পর পরিবহন মালিকরা কিছু ধারা সংশোধন করার বিষয়ে সরকারের কাছে দাবি তুললেও জোরালো কোনো ভূমিকায় ছিলেন না। পরে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ব্যানারে এই আইনের বিরুদ্ধে একের পর কর্মসূচি দেওয়া হয়।

একাধিক পরিবহন শ্রমিক ও মালিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন শ্রমিকদের সংগঠন হলেও এখানে মালিকদের আধিপত্য বেশি। শ্রমিক নেতার পরিচয়ে এই মালিক শ্রেণি আট দফা নির্দিষ্ট করে আন্দোলন শুরু করেছিলেন।

এটা নিয়ে গেল কয়েকদিন থেকে একের পর এক কর্মসূচি পালন শেষে ধর্মঘট কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হলো। সবশেষ গত ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত সরকারকে দাবি মানতে আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন তারা। এ সময় স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছিল।

তবে মালিকদের মূল সংগঠন সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা এ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়নি।

সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ শুরুতে আলোচিত এ আইনের কিছু ধারা সংশোধন করার বিষয়ে সরকারের কাছে দাবি নিয়ে গেলেও কাজ হয়নি। তার সংগঠন এটা তখন মেনে নেয়। এনায়েত উল্ল্যাহ ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন।

তার সংগঠনের বাইরে গিয়ে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন তখন আন্দোলন জমাতে থাকে। পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের এসব কর্মসূচি যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে এবং ধর্মঘটের ডাক আসে তখন খন্দকার এনায়েত পারিবারিক কারণে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। মোবাইল ফোনে তাকে তাৎক্ষণিক পাওয়া যায়নি।

সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতা উসমান আলী বলেন, তিনি গত এক মাস ধরে সরকারের সঙ্গে দাবিগুলো নিয়ে যোগাযোগ করেও পরিবর্তনের কোনো আভাস পাননি।

এ অবস্থায় কিছু কর্মসূচি পালনের পর চূড়ান্ত কর্মসূচির দিকে গেলেন তারা।

তাদের দাবি সড়ক দুর্ঘটনার সব মামলা জামিনযোগ্য করা, দুর্ঘটনায় চালকের পাঁচ লাখ টাকা জরিমানার বিধান বাতিল, চালকের শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণির পরিবর্তে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত করা, ৩০২ ধারার মামলার তদন্ত কমিটিতে শ্রমিক প্রতিনিধি রাখা, পুলিশি হয়রানি বন্ধ, ওয়ে স্কেলে জরিমানা কমানো ও শাস্তি বাতিল এবং গাড়ি নিবন্ধনের সময় শ্রমিক ফেডারেশন প্রতিনিধির প্রত্যয়ন বাধ্যতামূলক করা।

শ্রমিকদের এই সংগঠনের আরেক নেতা জানান, সরকার অন্তত একটি প্রধান দাবি মেনে নিলে আন্দোলন তারা আপাতত শিথিল করতে পারতেন। কিন্তু সরকারের কাছে বিশেষ করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কাছে এ নিয়ে একাধিক চিঠি পাঠিয়ে কাযত কোনো ফল পাওয়া যায়নি। রাজনৈতিকভাবে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় তারা দেখা করার চেষ্টা করেও ওবায়দুল কাদেরের সাক্ষাৎ পাননি।

এই নেতা জানান, মামলার জামিন অযোগ্য ধারা বাতিল করে জামিনযোগ্য করা শ্রমিকদের মূল দাবি।

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাক ওসমান আলী ব্যাখা দিয়ে বলেন, দুর্ঘটনার পর মামলায় চালকের জামিন হবে না- এমন আইন পৃথিবীর আর কোনো দেশে নেই। তড়িঘড়ি করে বাংলাদেশে এ আইন করা হলো। যেখানে আরও অনেক ভুল-ত্রুটি রয়ে গেছে।

পরিবহন শ্রমিকরা যে আট দফা দাবিতে ধর্মঘট পালন করছে সেগুলো হলো- সড়ক দুর্ঘটনায় সব মামলা জামিনযোগ্য করা, শ্রমিকের অর্থদণ্ড ৫ লাখ টাকা করা যাবে না, সড়ক দুর্ঘটনা তদন্ত কমিটিতে শ্রমিক প্রতিনিধি রাখা, ড্রাইভিং লাইসেন্সে শিক্ষাগত যোগ্যতা ৫ম শ্রেণি করা, ওয়েস্কেলে জরিমানা কমানো ও শাস্তি বাতিল করা, সড়কে পুলিশ হয়রানি বন্ধ করা, শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া ও লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়ম বন্ধ করা এবং যানবাহন নিবন্ধনের সময় শ্রমিকের নিয়োগপত্রে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সত্যায়িত থাকার ব্যবস্থা রাখা।

এসব দাবির সঙ্গে ট্রাক ও ট্যাংক লরি মালিকদের সংগঠন সমর্থন জানিয়ে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। এ পরিস্থিতির মধ্যে পরিবহন মালিকরাও ঢাকা থেকে বাস ছাড়বেন না বলে জানিয়েছেন। বাস ট্রাক অনার্স অ্যাসোসিয়েশন দাবিতে সমর্থন না জানালেও বিরোধীতা করছে না।

এ সম্পর্কিত আরও খবর