ভাঙা কাঁচেই নির্ভর আমিরের জীবন

, জাতীয়

মীর ফরহাদ হোসেন সুমন, বার্তা২৪.কম, লক্ষ্মীপুর | 2023-08-29 13:47:47

এ পেশা ওই পেশা, এ জায়গা ওই জায়গা এমন করে ভাগ্যান্বেষণে ঘুরে বেড়ায় জীবন যুদ্ধে অতৃপ্ত মানুষগুলো। তবুও কখনও বা কোথাও জীবনের প্রত্যাশা পূর্ণ হবে এমন স্বপ্ন লালন করে চলতেই থাকে ভাগ্যান্বেষীরা। তবুও হয়তো এদের কারও জীবন গাড়ি সুখের দুয়ারে ভীড়ে না কখনও। ভাগ্যান্বেষণে ছুটা ছুটির জীবন অতৃপ্তই থেকে যায় ভাগ্য বিড়ম্বনায়। তেমনি এক জন আমির হোসেন। ৫৫ বছর বয়সী এ মানুষটা এখন বয়সের ভারে একটু নুয়ে পড়েছেন।

অভাবের তাড়নায় কাজের খোঁজে ২০ বছর আগে আসেন লক্ষ্মীপুর। স্ত্রী, তিন মেয়ে আর এক ছেলে নিয়ে ভাড়ায় থাকেন জেলার পৌর শহরের ডিবি রোড এলাকার হামিদ মাস্টারের পুরান বাড়িতে। শহরের অলিগলি ঘুরে কাঁচ ভাঙা কুড়িয়ে ভাঙারি দোকানে বিক্রি করে চালান পাঁচ সদস্যের সংসার। প্রায় ২০ বছর ধরে এই ভাঙা কাঁচে স্বপ্ন দেখছেন আমির হোসেন। জীবনের অনেক দূর পথ পাড়ি দিয়ে এসেও লুকানো স্বপ্ন ছুঁতে না পারার অতৃপ্তি মনের ভেতরে যেন পোড়ায় তাকে। তার চোখজুড়ে পানি টলমল করছে, তবুও এক টুকরো কাঁচ পেয়ে অতৃপ্ত হাসি তার মুখে। অর্ধাহার-অনাহারে কাটে দিন। জীবন তার কাছে এক যন্ত্রণার নাম। তবুও স্ত্রী-সন্তানদের মুখে আহার জোগাতে অবসর নেই এই জীবনযোদ্ধার।

আমির হোসেনের পৈত্রিক বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে। বাবার বাড়িতে এক টুকরো সম্পত্তি না থাকায় স্ত্রীকে সাথে নিয়ে চলে আসেন লক্ষ্মীপুরে। আটানা (পঞ্চাশ পয়সা) কেজিতে ভাঙা কাঁচ বিক্রি শুরু করেন তিনি। এখন দেড় টাকা কেজিতে ভাঙা কাঁচ বিক্রি করে প্রতিদিন তার আয় হয় ১৫০-২০০ টাকা। শহরের অলিগলি ঘুরে কাঁচ কুড়িয়ে ভাঙারি দোকানে বিক্রি করে কোনোভাবে চলেন।

প্রতিনিয়ত অভাবের তাড়নায় চাপা পড়ে তাদের জীবনের কোলাহল। দূর থেকে শহরের মায়াময় আলো ছড়ানো বাতিগুলো তাদের জীবনকে রাঙিয়ে তোলে না। অর্ধাহার-অনাহারে কাটে তাদের দিন। কেমন আছেন জানতে চাইলে হাসি মুখে আমির হোসেন বলেন, বালা (ভালো) আছি।

ছবিঃ বার্তা২৪.কম

তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন সকালে এক টুকরো ভাঙা কাঁচের খোঁজে ঘর থেকে বেড়িয়ে পড়ি। কোনোদিন ৪০ কেজি, কোনোদিন ৩ মণ আবার কোনোদিন খালি হাতেও ফিরতে হয়। বাড়িতে তীর্থের কাকের মতো খাবারের আশায় বসে থাকেন আমার পরিবারের সদস্যরা। কাঁচ কুড়িয়ে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার স্বপ্নও দেখি।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, বড় দুই মেয়েকে বিয়ে দিলেও অর্থাভাবে জামাতারা তাড়িয়ে দিলে তারাও থাকে আমার কাছেই। এক ছেলে ও এক মেয়ে মাদ্রাসায় পড়াশুনা করে। জাতীয় পরিচয়পত্র নোয়াখালীর হওয়ায় ওএমএস বা সরকারি কোনো সহায়তাও পাই না।

লক্ষ্মীপুর পৌরসভার এক কাউন্সিলর বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্রে লক্ষ্মীপুরের না হওয়ায় তাকে কোনো সহযোগিতা করা যাচ্ছে না। তবে ঠিকানা পরিবর্তন করতে পারলে তাকে সরকারি ভাতা সুবিধার আওতায় আনা যাবে।

লক্ষ্মীপুর জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক বলেন, আমির হোসেন চাইলে তার ব্যবসা প্রসারের ক্ষেত্রে সমাজ সেবা কার্যালয় থেকে সহযোগিতা করা হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর