পরিবহন শ্রমিকদের উদ্ধত আচরণে স্তম্ভিত নগরবাসী!

ঢাকা, জাতীয়

মনি আচার্য্য, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-06-26 21:34:32

বেলা ১২টা, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী মোড়। পরিবহন ধর্মঘটের যাতাকলে পড়ে রাস্তায় শতশত মানুষ। মোড়ের ঠিক পুলিশ বক্সের বিপরীত পাশেই অবস্থান নিয়েছে পরিবহন শ্রমিকরা। ধর্মঘটকে সমর্থন জানিয়ে তাদের অবস্থান। এসময়  হঠাৎ শোনা যায় ধর ধর সিএনজিটারে ধর।

এগিয়ে দেখা যায়, শনিআখড়া থেকে এক যাত্রী সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করে গন্তব্যস্থলে যাচ্ছেন। ধর্মঘটের দিনে গাড়ি চালোনোর অপরাধে ধর্মঘটকারীরা যাত্রী নামিয়ে সিএনজির তেলের লাইন ছিড়ে দেন। চালকের হাজার কাকুতি মিনতি কানে তুলেননি তারা। আর এ ঘটনা ঘটেছে পুলিশের সামনেই। আকস্মিক ঘটে যাওয়া এমন ঘটনায় স্তম্ভিত যাত্রী আমিনুল ইসলাম।

রোববার (২৮ অক্টোবর) বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটের নামে এমনই নৈরাজ্য চলছে রাজধানীতে।

রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সরেজমিনে দেখা গেছে, অধিকাংশ যাত্রী পরিবহন ধর্মঘটের কথাই জানেন না। ফলে পূর্ব প্রস্তুতি না থাকায় সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে রাজধানীবাসীকে।

তবে চরম দুর্ভোগের থেকেও পরিবহন মালিক শ্রমিকদের উদ্ধত আচরণ মানুষজনের মনে ক্ষত সৃষ্টি হচ্ছে। যাত্রীদের মারধোর করা থেকে শুরু করে তাদের সঙ্গে জঘন্য আচরণের অভিযোগ উঠেছে সঙ্গে পরিবহন মালিক শ্রমিকদের বিরুদ্ধে। কোনো কোনো স্থানে গাড়ি চালানোর দায়ে চালকের মুখে মবিল মেখে দিচ্ছে। এমনকি যাত্রীরা পার পাচ্ছে না এমন নোংরামি থেকে।

আর যাত্রীদের এমন অভিযোগের সত্যতা মিলছে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে। সরেজমিনে দেখা যায়, কার্যত পরিবহন ধর্মঘট কর্মসূচি নয়, রাস্তা অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। রাজধানীর সড়ক পথের নিয়ন্ত্রণ এখন পুলিশের হাতে নেই, ধর্মঘটকারীদের হাতে।

তারা নিজেদের মতো গাড়ি থামাচ্ছেন, ভাংচুর করছে, যাত্রীদের মারধোর করছে ও সাংবাদিকেরা এসব ঘটনার ছবি তুলতে গেলে তাদের দিকে তেরে আসছে। তাদের এমন উদ্ধত আচরণ দেখলে সহজেই মনে হবে রাজধানী এখন পরিবহন সন্ত্রাসীদের দখলে বলে অভিযোগ করেছে শ্রমিকরা।

হেঁটে নিজ গন্তব্যে রওনা দেওয়া যাত্রী মো.ইভান বার্তা২৪.কমকে বলেন, এ কি অবস্থা চলছে। তারা তো এখন রাস্তায় আমাদের শাসক হয় গেছে। সিএনজি ভাড়া করে নিয়ে গেলেও থামিয়ে দিয়ে নামিয়ে দিচ্ছে। তাদের এ অধিকার কে দিয়েছে। তারা গাড়ি চালাবে না সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কিন্তু অন্যদের কেন চালাতে দিচ্ছেন না। তাদের এতো শক্তির পিছনে কার হাত রয়েছে দেশের মানুষ তা জানে।

ধানমন্ডির ২৭ নাম্বারে সিএনজি থেকে নামিয়ে দেওয়া যাত্রী মো.কামরুল বার্তা২৪.কমকে বলেন, তাদের মাথার ওপর তো নৌ-মন্ত্রীর হাত রয়েছে। তাই তারা ধর্মঘটের নামে নগরবাসী সঙ্গে যা ইচ্ছা তাই করছে। রাস্তার নিয়ন্ত্রণ এখন ট্রাফিক পুলিশদের হাতে নয় অশিক্ষিতদের হাতে। তাদের এই আচরণ ও সাহস দেখে আমি রীতিমত অবাক।

এদিকে সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে এ ধর্মঘটের কারণে হাজার হাজার যাত্রী হেঁটে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রাওনা দিয়েছেন। সড়কে থাকা বিআরটিসির স্বল্পসংখ্যক বাস মানুষে ঠাসা। কিছু সংখ্যক সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করলেও তাতেও বাঁধা দিচ্ছেন ধর্মঘটকারীরা।

অন্যদিকে দাবি আদায় না হলে ৩০ অক্টোবর থেকে লাগাতার ধর্মঘটের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর