জন্মনিয়ন্ত্রণের দায় কেবল নারীর একার নয়। পুরুষকেও অংশীদার হতে হবে। পরিকল্পিত গর্ভধারণ নারী আর পুরুষ দুজনের সিদ্ধান্তে হতে হবে।
আজ বিশ্ব জন্মনিয়ন্ত্রণ দিবস। বিভিন্ন দেশে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করছে। ২০০৭ সাল থেকে প্রতিবছর ২৬ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিকভাবে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশ শুরু থেকেই এ যাত্রার সঙ্গী।
দিবসটি পালনের মূল উদ্দেশ্য সন্তান হবে পারিকল্পিত পরিবারের অংশ। অপরিকল্পিত গর্ভধারণ বাচ্চা ও বাচ্চার মায়ের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। বাচ্চা জন্মের সময় মা, বাচ্চা বা উভয়ের মৃত্যুও হতে পারে। এ ছাড়া অপরিকল্পিত গর্ভধারণে রক্তচাপের সমস্যা, ডায়াবেটিস, ইনফেকশন, গর্ভস্রাব বা মৃত সন্তান প্রসবের মতো ঘটনা ঘটতে পারে। স্বাস্থ্যঝুঁকি ছাড়াও বাচ্চার পারিবারিক, সামাজিক ও মানসিক নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে।
করোনাকালে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারে অনেকটা চ্যালেঞ্জ ছিল বলে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ঘাটতি ছিল। জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারে বাধাগ্রস্ত হয়েছে । ফলে এই সময় জনসংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেড়েছে। দেশে প্রজননসক্ষম দম্পতির প্রায় অর্ধেকর কাছাকাছি এখনো আধুনিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করেন না। জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারে অনিয়মিত হয়ে পড়ার হারও বাড়ছে।
পরিবার-পরিকল্পনা অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, বাংলাদেশে যে সব পদ্ধতি এখন ব্যবহার হচ্ছে সেগুলো হলো জন্মবিরতিকরণ পিল বা খাবার বড়ি, কপারটি, জন্মনিয়ন্ত্রণ ইনজেকশন, লাইগেশন, চামড়ার নিচে বসিয়ে দেওয়া ক্যাপসুল (ইমপ্লান্ট), কনডম ও ভ্যাসেকটমি। তবে খাবার বড়ি ব্যবহার সবগুলো পদ্ধতির মধ্যে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ এবং ইজেকশন ১১ শতাংশ। সেই হিসাবে পুরুষদের জন্য যে দুটি পদ্ধতি তার মধ্যে কনডমের ব্যবহার হচ্ছে মোট ৭ শতাংশ। পুরুষদের ভ্যাসেকটমির হার মোট ১ শতাংশ।
বিভিন্ন জরিপে উঠে এসেছে, বাংলাদেশের পুরুষদের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিতে আগ্রহ কম। নানা কারণে বাংলাদেশে জন্মনিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমগুলো নারীকেন্দ্রিক হয়ে থাকে। এর প্রধান কারণ, নারীরা গর্ভধারণ করেন। সন্তান জন্ম দেন। তাই সেই জন্ম রুখতে বেশির ভাগ পদ্ধতিই নারীদের জন্য প্রযোজ্য। কিন্তু জন্মনিয়ন্ত্রণের দায় কেবল নারীর একার ঘাড়ে চাপালে চলবে না। এর দায়িত্ব একা নারীর নয়। পুরুষকেও সমানভাবে তার অংশীদার হতে হবে।
পরিবার-পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ড. আশরাফুন্নেসা গণমাধ্যমকে বলেছেন, পুরুষদের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণের হার কম। বর্তমানে জোর দেওয়া হচ্ছে শুধু নারী নয়, নারীর পাশাপাশি পুরুষদেরকেও জন্মনিয়ন্ত্রণে এগিয়ে আসতে হবে। কিন্তু জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ড ও প্রচারে কোনো কিছুতেই তার প্রতিফলন দেখা যায় না।