জায়গা সংকটে বেনাপোল স্থলবন্দরে ভয়াবহ পণ্যজট

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বেনাপোল (যশোর) | 2023-08-29 09:12:01

বেনাপোল স্থলবন্দরে জায়গা সংকট আর অব্যবস্থাপনায় মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হচ্ছে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য। বন্দরে পণ্য রক্ষণাবেক্ষণে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় সড়কে পণ্যবাহী ট্রাকের দীর্ঘ লাইন পড়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় প্রায় ২ হাজার ট্রাক রফতানি পণ্য নিয়ে বন্দর সড়কে দাঁড়িয়ে রয়েছে। বেনাপোল বন্দরে প্রবেশের অপেক্ষায় ভারতের কালিতলা পার্কিংয়ে রয়েছে প্রায় ৫ হাজার ট্রাক। বন্দরে জায়গা না থাকায় চাহিদা মত পণ্য আমদানি করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নের দাবি জানিয়ে আসলেও কাঙ্ক্ষিত সাড়া মেলেনি। এতে সময় মত পণ্য পরিবহন করতে না পারায় যেমন লোকশানের কবলে পড়ছেন তেমনি ব্যাহত হচ্ছে শিল্প কলকারখানার উৎপাদন প্রক্রিয়া। এদিকে পণ্যজটের সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির শ্রমিক নামধারীরা ট্রাক চালকদের জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে বিষয়টি নিয়ে মাথা ব্যথা নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।

রফতানি পণ্য বহনকারী বাংলাদেশি ট্রাক চালক রহমত জানান, তিনি ১২ সেপ্টেম্বর রফতানি পণ্য নিয়ে বেনাপোল বন্দরে এসেছেন । এখন পর্যন্ত তিনি ভারতে ঢুকতে পারেননি। অথচ শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা ট্রাক প্রতি ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়ে পিছনের ট্রাক আগে পার করছে। টাকা দিতে না পারায় আমরা যেতে পারছি না। এনিয়ে বন্দর, কাস্টমসের কোন মাথাব্যথা নেই।

ভারতীয় ট্রাক চালক অনিমেষ জানান, ভারতের কালিকতা ট্রাক পার্কিংয়ে ১৬ দিন দাঁড়িয়ে থাকার পর সে বেনাপোল বন্দরে এসেছে। কবে ট্রাক থেকে পণ্য খালাস হবে গত ৫ দিনে কেউ যোগাযোগ করেনি। বন্দরে চোরের উৎপাতও বেড়েছে।

পথচারী জলিল বলেন, বেনাপোল চেকপোস্ট থেকে শার্শা বাজার পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার পণ্যজট। মানুষের চলাচলের কোন রাস্তা নেই। পায়ে হেঁটে রাস্তা পার হতে হচ্ছে। এপথে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য ছাড়াও ভ্রমণ ও চিকিৎসার জন্য ভারত যাতায়াত করে থাকে। সবাইকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গত এক মাস ধরে এ অবস্থা বিরাজ করলেও দেখার কেউ নেই।

বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক জানান, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতের সাথে আমদানি-রফতানির চাহিদা বেড়েছে। তবে চাহিদা মত বন্দরের অবকাঠামোর উন্নয়ন হয়নি। বেনাপোল বন্দরের ধারণ ক্ষমতা ৫০ হাজার মেট্রিক টন পণ্যের । কিন্তু এখানে সব সময় পণ্য থাকে প্রায় দেড় লাখ মেট্রিক টন। প্রতিবছর বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতের সাথে ৪৫ হাজার কোটি টাকার আমদানি ও ৮ হাজার কোটি টাকার রফতানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। বর্তমানে জায়গার অভাবে আমদানি পণ্য ঢুকতে পারছে না বন্দরে। ভারতের বনগায় কালিকতা পার্কিংয়ে প্রায় ৫ হাজার ট্রাক বেনাপোল বন্দরে আসার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। রফতানি অপেক্ষায় বেনাপোল বন্দর এলাকায় প্রায় ২ হাজার ট্রাক ভারতে যাওয়া অপেক্ষায়। এসব ট্রাক প্রতি প্রতিদিন অতিরিক্ত দুই হাজার রুপি গুণতে হচ্ছে। এতে আমদানি ও রফতানি খরচ বেড়ে যাচ্ছে। আর খরচ পোষাতে বাধ্য হয়ে ব্যবসায়ীরা দেশীয় বাজারে পণ্যের মূল্য বাড়াচ্ছেন। বিভিন্ন বাণিজ্যিক বৈঠকে এসব বিষয় তুলে ধরা হলেও গুরুত্ব নেই।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, বন্দরের অবকাঠামো নিয়ে কোন ভাবে ব্যবসায়ীরা সন্তুষ্ট না। ক্ষোভ রয়েছে ভারতীয় ব্যবসায়ীদেরও। জায়গার অভাবে খোলা আকাশের নিয়ে মূল্যবান আমদানি পণ্য ফেলে রাখতে হচ্ছে। রোদ, বৃষ্টিতে ভিজে পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে। মাঝে মধ্যে চুরির ঘটনাও ঘটে। এতে লোকশানের কবলে পড়ে অনেক ব্যবসায়ীরা বেনাপোল বন্দর ছেড়েছেন। ফলে গত ৯ বছর ধরে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আহরণ হচ্ছে না। প্রয়োজনীয় জায়গা অধিগ্রহণ করে চাহিদামত অবকাঠামো উন্নয়ন হলে চলমান সমস্যার সমাধান হবে। বছরে ১০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় সম্ভব বলে জানান তিনি।

বেনাপোল বন্দরের উপপরিচালক (প্রশাসন) আব্দুল জলিল বলেন, সম্প্রতি রফতানি বাড়ায় বন্দরে পণ্য জট বেশি হয়েছে। তবে পণ্যজট কমাতে ইতিমধ্যে কিছু জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়ছে। সেখানে কিছু অবকাঠামো তৈরি হয়েছে। অবকাঠামো আরও বাড়াতে জায়গা অধিগ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে। এসব নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হলে এপথে বাণিজ্য আরও গতিশীল হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর