এখন অভ্যন্তরীণ পর্যটনই ভরসা

, জাতীয়

নিউজ ডেস্ক, বার্তা ২৪ | 2023-08-17 00:04:07

দীর্ঘ লকডাউনে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়া দেশের পর্যটন খাত আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। গত দেড় বছরে পর্যটনকেন্দ্র, হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট, ট্রান্সপোর্ট, ট্যুর অপারেটরস, ট্রাভেল এজেন্সিসহ পর্যটনের ৪১টি খাত বন্ধ ছিল। বেকার হয়েছে লাখ লাখ পর্যটন শ্রমিক, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিনিয়োগকারী। বর্তমানে বিদেশি পর্যটক না এলেও কিংবা দেশ থেকে বিদেশে পর্যটক না গেলেও আপাতত অভ্যন্তরীণ পর্যটনই খাতটিকে বাঁচিয়ে রেখেছে।

অভ্যন্তরীণ পর্যটন ঘিরে ঘুরে দাঁড়ানোর আশাবাদ নিয়ে আজ সোমবার দেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব পর্যটন দিবস। এ বছর 'অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির জন্য পর্যটন' এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে দিবসটি পালিত হচ্ছে।

বাংলাদেশ ট্যুরিজম অ্যান্ড হোটেল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের আহ্বায়ক রাশেদুর রাশেদ গণমাধ্যমকে বলেছেন, পর্যটন খাতে প্রায় ৩৫ লাখ পর্যটনকর্মী এবং তাদের ওপর নির্ভরশীল প্রায় দুই কোটি মানুষ করোনাকালে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এখন অভ্যন্তরীণ পর্যটনই আমাদের একমাত্র ভরসা।

ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. কামরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেছেন, অভ্যন্তরীণ রুটগুলোতে যাত্রী ধীরে ধীরে বাড়ছে। প্রায় ৮০ শতাংশ যাত্রী আমরা পাচ্ছি।

রিজ ট্যুরিজমের কর্ণধার মো. শফিকুল ইসলাম ভূঞা বার্তাটোয়েন্টিফোরকে বলেন, করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত খাত পর্যটন। এই খাতের অনেক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। কিছু বড় ব্যবসায়ী জনবল কমিয়ে, ধার-কর্জ করে বিশাল দেনার বোঝা নিয়ে কোনো মতে টিকে আছে সুদিনের অপেক্ষায়। এই পর্যন্ত ব্যাংক ঋণ, সরকারি প্রনোদনা কিছুই মেলেনি। সরকারি আনুকল্য না পেলে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন হবে।

বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) জাবেদ আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেছেন, পর্যটনের তিনটি অনুষঙ্গ। অভ্যন্তরীণ, বিদেশি পর্যটক ও বিদেশগামী। এর মধ্যে এখন শুধু অভ্যন্তরীণ ট্যুরিজম চালু আছে। ট্যুর অপারেটররা লাভবান না হলেও অন্য খাতের ব্যবসায়ীদের আয় বেড়েছে।

পর্যটন খাতের সর্ববৃহৎ সংগঠন ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সভাপতি মো. রাফেউজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেছেন, পর্যটনের সব উপখাত মিলে করোনায় ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। হোটেল-মোটেল দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। এখন অভ্যন্তরীণ পর্যটন শুরু হওয়ায় আমাদের স্টেকহোল্ডাররা কিছুটা ঝুঁকিমুক্ত হয়েছে।

১৯৮০ সাল থেকে জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এ দিবস পালিত হচ্ছে। দিবসটির প্রধান উদ্দেশ্য পর্যটন নিয়ে জনসচেতনতা বাড়ানো, পর্যটনের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উপযোগিতাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া।

পর্যটন দিবস উপলক্ষে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন, পর্যটন বোর্ড, ভ্রমণ ও পর্যটন খাতের বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন আজ তাদের বিভিন্ন মোটেলে ৩০ শতাংশ ছাড় ঘোষণা করেছে। সকাল থেকে আগারগাঁওয়ে অবস্থিত পর্যটন ভবনে দিনব্যাপী লাইভ কুকিং শো অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।

বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে রবিবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পর্যটন সচিব মোকাম্মেল হোসেন বলেছেন, এই শিল্পের জন্য প্রধানমন্ত্রী দেড় হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। দ্রুত প্রণোদনা দেওয়ার জন্য কাজ চলছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের হোটেল-মোটেলগুলোতে কীভাবে আধুনিক সুবিধা দেওয়া যায় সেই লক্ষ্যে কাজ চলছে। তার আশা, পর্যটনকেন্দ্র আর বন্ধ করা না হলে দুই বছরের মধ্যে অভ্যন্তরীণ পর্যটন চাঙ্গা হবে। তখন কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে লাভের আশা করা যাবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর