আশুলিয়া থেকে সংঘবদ্ধ ইজিবাইক চোর চক্রের মূলহোতাসহ ৫ সদস্যকে গ্রেফতার এবং চোরাইকৃত বিভিন্ন রংয়ের ব্যাটারি চালিত ১৮টি ইজিবাইক উদ্ধার করেছে র্যাব-৩।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মো. বশির আহম্মদ, মো. মোস্তফা কামাল, মো. জিয়াউর রহমান, মো. জলিল, মো. ওসমান শেখ।
আশুলিয়া থানাধীন জিরানি এলাকায় বিভিন্ন গ্যারেজের ভিতরে অভিযান চালিয়ে সংঘবদ্ধ ইজিবাইক চোর চক্রটিকে গ্রেফতার করা হয়।
মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) র্যাব-৩ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বীণা রানী দাস এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, আশুলিয়া থানাধীন জিরানি এলাকায় বিভিন্ন গ্যারেজের ভিতর কয়েকজন সংঘবদ্ধ চোর চক্রের সদস্যরা দীর্ঘদিন যাবৎ চোরাই ও ছিনতাইকৃত বিভিন্ন রংয়ের ব্যাটারি চালিত চোরাই এবং ছিনতাইকৃত ইজিবাইক মজুদ করে পরে তা রং পরিবর্তন করে বিক্রয় করে আসছে। এই সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৩ এর একটি দল দুপুরে জিরানি এলাকায় বিভিন্ন গ্যারেজের ভিতরে অভিযান পরিচালনা করে সংঘবদ্ধ ইজিবাইক চোর চক্রের মূলহোতাসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করে।
তিনি আরো জানান, আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, তারা অভিনব কায়দায় ইজিবাইক চুরি করত। তারা প্রথমে প্রাইভেট কার বা মাইক্রোবাস যোগে টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জসহ পার্শ্ববর্তী জেলায় গিয়ে নতুন ইজিবাইকের ওপর নজরদারী করত। তারপর ইজিবাইকের সামনে গিয়ে ইজিবাইকের ড্রাইভারকে শুনিয়ে উচ্চস্বরে মোবাইলে কথা বলত “আম্মা হাসপাতালে ভর্তি। মাঝ পথে গাড়িটা নষ্ট হয়ে গেল, কিভাবে আম্মার কাছে পৌছাঁবো। আম্মাকে গিয়ে জীবিত পাব কিনা জানি না।” তখন অপর প্রান্ত থেকে বলত, একটা ইজিবাইক নিয়ে চলে আয়। তারপর তারা ইজি বাইকের ড্রাইভারকে গন্তব্যে পৌছেঁ দেওয়ার জন্য অনুনয় বিনয় করত। এরপর ইজি বাইক যাত্রা শুরু করার কিছুক্ষণ পর তারা জানাত, তাদের কিছু জরুরি কাগজপত্র গাড়িতে রয়ে গেছে এবং ইজি বাইকের ড্রাইভারকে কাগজ গাড়ি থেকে নিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করত। এরপর ইজিবাইকের ড্রাইভার গাড়ি থেকে নেমে গেলে আসামিরা ভিক্টিমের ইজিবাইক নিয়ে পালিয়ে যেত। এছাড়াও আসামিরা বিভিন্ন সময় ইজিবাইক ভাড়া করে নির্জন স্থানে গিয়ে কখনও চালকের হাত পা বেঁধে, আবার কখনও চালককে অজ্ঞান করে তাকে রাস্তায় ফেলে রেখে তার ইজিবাইক ছিনতাই করত।
বীণা রানী দাস আরও বলেন, চক্রের সকলেই গাড়ি চালনায় পারদর্শী। চক্রের মূল হোতা বশির। তিনি ইজিবাইক চুরি ও ছিনতাইয়ের মূল পরিকল্পনাকারী। ধৃত মোস্তফা প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাস সরবরাহ করত। ধৃত জিয়া মোবাইল ফোনে কথা বলার অভিনয় করত। জলিল ও ওসমান ইজিবাইক চালিয়ে গ্যারেজে পৌঁছে দিত। এসব চোরাই ও ছিনতাইকৃত ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক বিভিন্ন গ্যারেজে এনে লুকিয়ে রাখত।
তিনি আরো জানান, চক্রের মূলহোতা বশির ও তার অন্যতম সহযোগী জিয়ার সহায়তায় চোরাইকৃত ব্যাটারি চালিত ইজিবাইকের রং, সিট কভার পরিবর্তন করে একটি বাম্পার লাগিয়ে বিভিন্ন লোকজনের কাছে বাজার দামের অর্ধেক দামে বিক্রয় করে দিত। এভাবে উক্ত চক্র টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জসহ পার্শ্ববর্তী জেলার বিভিন্ন এলাকা হতে বিগত ৩ বছর যাবত ৫০০ এর অধিক ইজিবাইক চুরি ও ছিনতাই করে গরীব ও নিরীহ ইজিবাইক মালিকদের সর্বশান্ত করেছে।
তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত আসামিরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়া বিভিন্ন গ্যারেজকে নিরাপদ স্থান হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করে আসছে। আসামীদের এরূপ কার্যকলাপের ফলে গরীব ও নিরীহ মটর ও ব্যাটারি চালিত ইজিবাইকের মালিকগণ আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
র্যাবের অভিযানে উক্ত আসামিরা আটক হওয়ার ফলে গরীব ও নিরীহ ইজিবাইক মালিকদের মনে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
র্যাব তিনের কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।