বৃহস্পতিবার উদ্বোধন হচ্ছে কুষ্টিয়া শহর বাইপাস

খুলনা, জাতীয়

এস এম জামাল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-23 03:15:17

দেশের উত্তরবঙ্গের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম কুষ্টিয়া শহর। কুষ্টিয়া শহরকে নিরাপদ রাখতেই ব্যস্ততম সড়কের বিকল্প বাইপাস সড়ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। যদিও এটি কুষ্টিয়াবাসীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি ছিল।

জেলা সদরে বাইপাস সড়ক না থাকায় সব যানবাহনই মজমপুর গেটের উপর দিয়ে চলাচল করছে। এর ফলে শহরে প্রায় প্রতিদিনই সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। পাশাপাশি দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ঘটছে অনেক প্রাণহানির ঘটনা।

মজমপুর রেলগেটে ট্রেন চলাচলের সময় গেট বন্ধ থাকলে যানজট চরম আকার ধারণ করে। শহরতলী বটতৈল মোড় থেকে শুরু হয়েছে বিসিক শিল্পনগরী, বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিড, সমাজসেবা অধিদপ্তরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অফিস, বিএটিবির কারখানা, চৌড়হাস মোড় ও বাজার, মুকুল সংঘ স্কুল, প্রতীতি বিদ্যালয়, স্টেডিয়াম কাস্টমস মোড়, বিআরবি হাসপাতাল, উপজেলা মোড়, এলজিইডি অফিস, ডিসি কোর্ট, সাদ্দাম বাজার মোড়, সার্কিট হাউজ, জেলা স্কুলসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। গুরুত্বপূর্ণ এসব প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ চলাচল করছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে।

এছাড়াও ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া-পাকশী-রাজশাহী একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় মহাসড়ক। যা কুষ্টিয়া শহরের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করেছে। এ মহাসড়কে প্রতিদিন অসংখ্য ট্রাকসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল করে। মংলা বন্দর চালু হওয়ার পর থেকে আরও বেশি চাপ বাড়ে এ সড়কে। যার ফলে শহরে প্রতিনিয়তই যানজট সৃষ্টির পাশাপাশি দুর্ঘটনার শিকার হয়ে অনেক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। গেল বছরে শতাধিক মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে।

এছাড়া মজমপুর রেলগেটে ট্রেন চলাচলের সময় গেট বন্ধ থাকায় যানজট মারাত্মক আকার ধারণ করে। তবুও কোনো সঠিক পথ পায়নি শহরবাসী।

বিএনপি সরকারের আমলে বটতৈল এলাকায় এই বাইপাস সড়কের উদ্বোধন করা হয়। তারপরও হয়নি কিছু কাজ। তবে আওয়ামী লীগ সরকার দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসার পর ৬ দশমিক ৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ কুষ্টিয়া শহর বাইপাস সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের এ কাজটি বাস্তবায়ন করছে মনিকো লিমিটেড নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

আগামী ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ বাইপাস সড়কের উদ্বোধন করবেন।

বাইপাসটি খুলে দেয়া হলে এ অঞ্চলের সড়ক ব্যবস্থায় নবদিগন্তের সূচনা হবে। সাড়ে ২২ লাখ মানুষের স্বপ্নের বাইপাস সড়ক দিয়ে এ মাস থেকে গাড়ি চলবে জেনে আনন্দিত জেলাবাসী।

সড়ক ও জনপথ অফিস সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে সব কাজ শেষ হয়েছে। দুই প্রান্তে সড়ক বর্ধিতকরণ ছাড়াও গোল চত্বর নির্মাণের কাজও শেষ।

এতে ছোট বড় মিলিয়ে ২৩ সেতু ও কালভার্ট এবং একটি রেল ওভারপাস রয়েছে। দৃষ্টিনন্দন এ সড়টি নির্মাণের ফলে এলাকার চেহারা বদলে গেছে। সড়কের দুই পাসে গড়ে উঠছে নতুন অনেক প্রতিষ্ঠান। এ সড়ক ঘিরে শিল্প কারখানা গড়ে ওঠার বিপুল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। দৃষ্টিনন্দন এ সড়কে অনেকেই বিকেলে ঘুরতে আসে। সড়কের পাশে অনেকেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে বসেছে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে জানান, বাইপাস সড়কের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। এখন শুধু খুলে দেয়ার অপেক্ষা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সড়কটি উদ্বোধন করবেন। সড়কটি খুলে দেওয়া হলে শহরে গাড়ির চাপ যেমন কমবে, তেমনি কমে যাবে দুর্ঘটনা। সড়কের দুই পাশে দৃষ্টিনন্দন করতে গাছও লাগানো হয়েছে।

কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ২৮ জানুয়ারি ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬ দশমিক ৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ কুষ্টিয়া শহর বাইপাস সড়ক নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০০৫ সাল থেকে বাইপাস সড়ক নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হলেও ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় তা আটকে যায়। পরে ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ফের শুরু হয় অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া। নানা অনিশ্চয়তার পর শেষ পর্যন্ত ২০১৬ সালে আলোর মুখ দেখতে পায় প্রকল্পটি। এরপর দ্রুতগতিতে বাইপাস সড়ক নির্মাণকাজ এগিয়ে যায়। প্রকল্পের ৭ দশমিক ৩ মিটার প্রশস্তের ডাবল লেন বিশিষ্ট প্রায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বাইপাস সড়ক, একটি পিসি গার্ডার সেতু ও ২১টি আরসিসি বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে।

এদিকে, সড়কটি চালু হলে জেলার আর্থ-সামাজিক চিত্র বদলে যাবে বলে মনে করছে সাধারণ মানুষ। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জেলা কুষ্টিয়া। উর্বর কৃষিজমি এ জেলার অর্থনীতির মূল ভিত্তি হলেও গত তিন দশকে এখানে গড়ে উঠেছে নানামুখী শিল্প। তবে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার দিক দিয়ে জেলাটি দীর্ঘদিন পিছিয়ে ছিল।

বিশেষ করে শহরের উপর দিয়ে যাওয়া মহাসড়কটি নিয়ে স্থানীয়দের অভিযোগ ছিল দীর্ঘদিনের। কারণ সড়কটিতে যানজট ও দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ছিল নিত্য ঘটনা। এ অবস্থায় দীর্ঘদিন ধরেই জেলাবাসীর দাবি ছিল, একটি শহর বাইপাস সড়ক নির্মাণের। এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই বাস্তবায়িত হয়েছে শহর বাইপাস সড়ক।

কুষ্টিয়া জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাহবুল আলম বার্তা২৪.কমকে জানান, উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যোগাযোগের মহাসড়কটি কুষ্টিয়া শহরের মধ্য দিয়ে যাওয়ায় এখানে নানামুখী বিড়ম্বনা ও যানজট ছিল নিত্য ঘটনা। তাছাড়া দুর্ঘটনায় প্রাণহানির চিত্রও ছিল উল্লেখযোগ্য। তবে বাইপাস সড়কটি খুলে দেয়া হলে সব বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পাবে শহরবাসী।

কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি হাজী রবিউল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে জানান, কুষ্টিয়া শহর বাইপাস বহু আগেই নির্মাণের প্রয়োজন ছিল। এখন এ সড়কটি বাস্তবায়নে জেলার মানুষের দীর্ঘদিনের আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে। এই বাইপাস সড়ক নির্মাণের ফলে কুষ্টিয়া শহরের উপর চাপ কমবে।

তিনি বলেন, উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন দিক উন্মোচিত হবে। পরিবর্তন আসবে এখানকার আর্থসামাজিক উন্নয়নে। ব্যবসা-বাণিজ্যে আমূল পরিবর্তন হবে। সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশের সঙ্গে কুষ্টিয়ার যোগাযোগের নতুন মাত্রা তৈরি হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর