চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৬১ জন সদস্য নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে এককভাবে পুলিশ বাহিনীর সদস্য নিহত হয়েছেন ৪৬ জন, অর্থাৎ ৭৫.৪০ শতাংশ। গত ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ২২ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছিলেন। এই হিসেবে চলতি বছরের ৯ মাসে নিহতের হার বৃদ্ধি পেয়েছে ৫২.১৭ শতাংশ।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ৭টি জাতীয় দৈনিক, ৫টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে অনুযায়ী সড়ক দুর্ঘটনায়, পুলিশ বাহিনীর সদস্য ৪৬ জন, সেনাবাহিনীর সদস্য ৪ জন, নৌ-বাহিনীর সদস্য ১ জন, র্যাব সদস্য ৩ জন, বিজিবি সদস্য ২ জন, এনএসআই সদস্য ১ জন, এপিবিএন সদস্য ১ জন এবং আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্য ৪ জন নিহত হয়েছেন।
পুলিশের মোটরসাইকেলে ট্রাকের ধাক্কা/চাপায় ২৮ জন (৬০.৮৬%), পুলিশের মোটরসাইকেলে বাসের ধাক্কা/চাপায় ৮ জন (১৭.৩৯%), পুলিশের মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ৪ জন (৮.৬৯%) এবং পথচারী হিসেবে হাঁটার সময় ও সড়কে দায়িত্ব পালনকালে যানবাহনের ধাক্কায় ৬ জন (১৩.০৪%) নিহত হয়েছেন।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, মহাসড়কে ২৫ জন (৫৪.৩৪%), আঞ্চলিক সড়কে ৯ জন (১৯.৫৬%), রাজধানীসহ অন্যান্য শহরের সড়কে ১১ জন (২৩.৯১%) এবং সদরঘাট নৌ-টার্মিনালে দায়িত্ব পালনকালে পানিতে পড়ে ১ জন (২.১৭%) নিহত হয়েছেন।
দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, সকালে ৮.৬৯%, দুপুরে ১৩.০৪%, বিকালে ১৫.২১% এবং রাতে ৬৩.০৪% নিহতের ঘটনা ঘটেছে।
প্রতিবেদনে সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে বলা হয়, দেশে সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর না থাকা, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঠিকভাবে ট্রাফিক আইন মেনে না চলা, মোটরসাইকেল চালানোর সময় পুলিশ বাহিনীর অনেক সদস্যের হেলমেট পরিধান না করা, বিশ্রামহীনভাবে ড্রাইভিংয়ের কারণে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চালকদের মানসিক অসুস্থতা, বেখায়ালী ও বেপরোয়া মনোভাব, সড়কে পুলিশ কতৃক বৈধ কাগজপত্র যাচাই, জরিমান, মামলা দায়ের এবং অন্যান্য কারণে পুলিশের প্রতি যানবাহন চালকদের মনে বিরক্তিভাব তৈরি হওয়া, শহরের সড়কে যানজটের কারণে যানবাহন চালকরা মানসিক অস্থিরতায় থাকেন। এ সময় পুলিশ দেখলে তাদের মধ্যে বিক্ষুব্ধ ও বেপরোয়া আচরণ সৃষ্টি হয়।
প্রতিবেদনে কিছু সুপারিশ দিয়েছে রোড সেফটি। এর মধ্যে রয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ট্রাফিক আইন মেনে চলতে উৎসাহিত করতে হবে, সড়ক পরিবহন আইন পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে, আইনটি সকল নাগরিকের ক্ষেত্রে সমান ও বাধাহীনভাবে প্রয়োগ করতে হবে ও টেকসই সড়ক পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
উল্লেখ্য, গত ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ২২ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছিলেন। এই হিসেবে চলতি বছরের ৯ মাসে নিহতের হার বৃদ্ধি পেয়েছে ৫২.১৭ শতাংশ। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাহিনীর সদস্যদের সড়ক দুর্ঘটনায় এমন ব্যাপক সংখ্যক নিহতের ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক। পুলিশ সদস্যদের নিহতের সংখ্যাই বলে দিচ্ছে দেশে সড়ক নিরাপত্তা বলে তেমন কিছু নেই। অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে মোটরসাইকেলের সঙ্গে পণ্যবাহী যানবাহনের সংঘর্ষে। মূলত সড়কে পণ্যবাহী ট্রাক, পিকআপ ভ্যান, কাভার্ডভ্যান এবং মোটরসাইকেল এখন মরণদূত হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তেমন কোনো কার্যকর ও টেকসই পরিকল্পনা এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান নয়।