ধানের ফুলের সৌন্দর্য

, জাতীয়

রুহুল সরকার, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজীবপুর (কুড়িগ্রাম) | 2023-09-01 23:28:29

এখন আমন ধানের মৌসুম। দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ জুড়ে সবুজ রঙের ধান ক্ষেতের সমারোহ। রৌদ্র উজ্জ্বল আবহাওয়া মৃদু বাতাস বইছে। বাতাসে দোল খাচ্ছে সদ্য বের হওয়া ধানের শীষ। দূর থেকে দৃশ্যটি ভালো লাগায় জমির কাছে গিয়ে দেখা মিললো ধান গাছের ফুলের।

ধানের ইংরেজি নাম Paddy, বৈজ্ঞানিক নাম Oryza Sativa এবং Graminea গোত্রের অন্তর্ভুক্ত।

ধানের ফুল দেখতে কেমন এই প্রশ্ন করলে হয়তো বেশিরভাগ মানুষ উত্তর দিতে পারবে না!

সদ্য বের হওয়া ধানের শীষে সারিবদ্ধভাবে ঝুলে আছে সাদা রঙের ফুলগুলো। কাছে থেকে দেখলে এই সৌন্দর্য নজর কাড়ে। মাঠ জুড়ে ধানের জমিতে বিক্ষিপ্ত ভাবে ফুটে আছে ফুল যদিও পরাগায়নের ফলে বেশিরভাগ গাছে শীষ বের হয়েছে।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) সূত্রে জানা গেছে, ধান গাছের শীষ দন্ডের প্রশাখায় তুষ আবৃত ফুলকে ধান বলে।একেকটি শীষে ৫০ থেকে ৫০০টি পর্যন্ত ধান থাকতে পারে। তুষের দুটি অংশ থাকে বড় অংশটিকে লেমা এবং ছোট অংশকে পোলিয়া বলে। লেমা এবং পোলিয়া পুং স্তবক এবং স্ত্রী স্তবক অংশ ঢেকে রাখে। ধানে ৬টি পুংকেশর আছে এবং প্রতিটি পুংকেশরের মাথায় পরাগদানীতে অসংখ্য পরাগরেণু থাকে। ধানকে স্বপরাগায়ন জাতীয় উদ্ভিদ বলা হয়।

সকালের দিকে ধানের ফুল বেশি চোখে পরে। পরাগায়নও ঘটে দুপুরের মধ্যেই। ৪ থেকে ৫ দিন ব্যাপি ফুল ফোটে এরমধ্যেই পরাগায়ন হয়ে ধানে পরিণত হয়।

বাংলাদেশে আউশ, আমন ও বোর এই তিন মৌসুমে ধানের চাষ করা হয়। আবার বিভিন্ন ফসল চাষাবাদের মৌসুমকেও তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। রবি মৌসুম ১৬ অক্টোবর হতে ১৫ মার্চ পর্যন্ত বাংলা কার্তিক মাস হতে ফাল্গুন মাস। খরিফ-১ মৌসুম ১৬ মার্চ হতে ১৫ জুলাই পর্যন্ত বাংলা চৈত্র মাস হতে আষাঢ় মাস। খরিফ-২ মৌসুম ১৬ জুলাই হতে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলা শ্রাবণ মাস হতে আশ্বিন মাস।

ছবি: বার্তা২৪.কম

ধান গাছের বৃদ্ধি পর্যায়কে ৩টি এবং জীবন চক্রকে ১১টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

প্রথম, দৈহিক বৃদ্ধি পর্যায় (Vegetative Phase)
অঙ্কুরোদগম স্তর (Garmination Stage) ২-৩ দিন।
চাড়া স্তর (Seedling Stage)৩০-৪০ দিন।
রোপন ও পুনরুদ্ধার স্তর (Transplantating & Recovery Stage)৭-৮ দিন।
কুশি স্তর (Tillering Stage)৪০-৪২ দিন।

দ্বিতীয়, প্রজনন পর্যায় (Reproductive Phase)
কাইচ থোর (Panicle Initiation Stage) ৫-৭ দিন।
থোর স্তর (Booting Stage) ৮-১০ দিন।
শীষ বের হওয়া স্তর (Heading Stage) ৮-১০ দিন।
ফুল অবস্থা (Flowering Stage) ৪-৫ দিন।

তৃতীয়, পাকা পর্যায় (Ripening Phase)
দুধ অবস্থা (Milking Stage) ৮-১০ দিন।
ক্ষীর অবস্থা (Dough Stage) ৮-১০ দিন।
পরিপক্ব অবস্থা (Maturity Stage) ১০-১০ দিন।

দেশে চাষকৃত বিভিন্ন জাতের ধানের জীবনকাল গড়ে সর্বনিম্ম ৯৯ থেকে সর্বোচ্চ ১৬৫ দিন।

ধান গাছের পরাগায়ন হয় বাতাসের মাধ্যমে। বীজ অঙ্কুরোদগম হওয়ার পর ভ্রুণকাণ্ড ও ভ্রুণমূল যাথাক্রমে ধানের কাণ্ড ও গুচ্ছমূলে পরিণত হয়। কাণ্ড পর্বসন্ধি ও পর্বমধ্যে দ্বারা গঠিত। কাণ্ড থেকে উৎপন্ন পাতা একটি লম্বা পত্রফলক ও চ্যাপ্টা বৃন্তের সমন্বয়ে গঠিত। সর্বশেষ পাতাকে ধ্বজাপত্র বলে, যাতে থাকে শেষ পর্বমধ্যে বা যোগমঞ্জুরি।বাতাসের মাধ্যমে পরাগ সংযোগ ঘটার পর পরাগ ঝড়ে পরে। রাজীবপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে এই তথ্য।

ছবি: বার্তা২৪.কম

ধান গাছের জীবন চক্রের বিভিন্ন পর্যায়ে ক্রিটিক্যাল (নিম্ন) তাপমাত্রার একটি স্কেল নির্ধারণ করা হয়েছে। ধানের জীবন চক্রের অঙ্কুরোদগম অবস্থায় ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, চারা অবস্থায় ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, কুশি অবস্থায় ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, থোড় অবস্থায় ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ফুল ফোটা অবস্থায় ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর নিচে তাপমাত্রা চলে গেলে ফলনে মারাত্মক প্রভাব পড়ে। এতে ফলন অনেক কমে যায়।

স্বাভাবিক দৃষ্টিতে ধানে শতকরা ১৫ থেকে ২০ ভাগ চিটা হয়। চিটার পরিমাণ এর চেয়ে বেশি হলে ধরে নিতে হবে থোড় থেকে ফুল ফোটা এবং ধান পাকার আগ পর্যন্ত ফসল কোনো না কোনো প্রতিকূলতার শিকার হয়েছে, যেমন অসহনীয় ঠাণ্ডা বা গরম, খরা বা অতিবৃষ্টি, ঝড়, পোকা ও রোগবালাই।

ধানের জন্য অসহনীয় তাপমাত্রা হলো ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি। তবে ফুল ফোটার সময় ১-২ ঘণ্টা এ তাপমাত্রা বিরাজ করলে মাত্রাতিরিক্ত চিটা হয়ে যায়।এছাড়াও ঝড়ো বাতাস হলে গাছ থেকে পানি প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় বেরিয়ে যায়। এতে ফুলের অঙ্গগুলো গঠন বাধাগ্রস্ত হয়। আবার ঝড়ো বাতাস পরাগায়ন, গর্ভধারণ ও ধানের মধ্যে চালের বৃদ্ধি ব্যাহত করে। এতে ধানের সবুজ খোসা খয়েরি বা কালো রঙ ধারণ করে। ফলে ধান চিটা হয়ে যেতে পারে। খরার কারণে শীষের শাখা বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং বিকৃত ও বন্ধ্যা ধানের জন্ম দেয়ায় চিটা হয়ে যায়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর