অনলাইনে তালিম নিয়ে ফের জঙ্গিবাদে জড়ায় মেঘলারা

ঢাকা, জাতীয়

শাহরিয়ার হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 02:15:57

নরসিংদীর জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযানে আকলিমা আক্তার মণি ও তার স্বামী আবু আবদুল্লাহ আল বাঙালি নিহত হন। তবে আত্মসমর্পণ করেন মেঘলা ও মৌ নামের দুই নারী জঙ্গি। প্রায় ২ বছর আগে জঙ্গিসংশ্লিষ্টতার অভিযোগে মণিসহ এই তিন নারীকে একই সঙ্গে গ্রেফতার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। কারাভোগের পর জামিন পেয়ে সংগঠনের কাউকে খুঁজে না পেয়ে যুক্ত হন অনলাইন গ্রুপে। অনলাইনে তালিম নিয়ে আবারও জড়িয়ে পড়েন জঙ্গিবাদে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এদিকে র‍্যাব সদর দফতর থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৪ ও ১৫ আগস্ট গাজীপুর ও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে সন্দেহভাজন চার নারী জঙ্গিকে গ্রেফতার করে র‍্যাব। সেই চার জনের মধ্যে নরসিংদীর জঙ্গি আস্তানায় ছিলেন আকলিমা আক্তার মণি, খাদিজা পারভীন মেঘলা ও ইশরাত জাহান মৌসুমী ওরফে মৌ। তারা মানারাত ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী। 

তাদের জঙ্গিবাদে যোগ দেওয়া নিয়ে সিটিটিসি সূত্র জানা যায়, ২০১৫ সালের দিকে জুমার নামাজ পড়তে মসজিদে যেতেন আকলিমা। মসজিদে এক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় হয় তার। একপর্যায়ে ঐ ব্যক্তির মাধ্যমে মুফতি জসিম উদ্দিন রাহমানীর লেখা কিছু বই পেয়ে যান তিনি। সেসব বই পড়ে ধীরে ধীরে জঙ্গিবাদের দীক্ষা লাভ করেন আকলিমা।

পরবর্তীতে উচ্চ দীক্ষার আশায় অনলাইনে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের সাইট নিয়মিত দেখতে থাকেন আকলিমা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, র‌্যাবের হাতে গ্রেফতারের পর জামিনে ছাড়া পেয়ে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরেন আকলিমা, মৌ ও মেঘলা। একই প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়ার জন্য তাদের তিনজনের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।

পরে আবার নতুন করে একসাথে অনলাইনে জঙ্গিবাদের কানেকশন খুঁজতে থাকেন তারা। নব্য জেএমবির একটিও গ্রুপও পেয়ে যান। এবার আকলিমার মাধ্যমে মেঘলা ও মৌ জঙ্গিবাদে জড়ায়।

এদিকে মৌ আর মেঘলা সম্পর্কে সূত্রটি জানায়, তারা দুই জনই ১৯৯৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। আহম্মদনগর উচ্চ বিদ্যালয়ে থেকে এসএসসি ও ক্যামব্রিয়ান কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন মেঘলা। আর মিরপুরের ইসলামিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও বিসিআইসি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন মৌ।

এ বিষয়ে সিটিটিসির এক কর্মকর্তা বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘মেঘলা ও মৌ এর কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। ঐ নেটওয়ার্কের প্রত্যকের সম্পর্কে জানার চেষ্টা চলছে।’

অন্যদিকে জঙ্গিদের দ্রুত জামিন আবার নতুন করে জঙ্গিবাদে জড়ানোর বিষয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আব্দুর রশিদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘জঙ্গিদের জামিনের বিষয়ে আরো সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। জঙ্গিবাদ একটি মতবাদ ভিত্তিক বিষয়। চিন্তা চেতনার পরিবর্তন ছাড়া শাস্তির ভয়ে নির্মূল হওয়া কঠিন বলেই এরা আত্মাহুতি দেয়। জামিনের পরে নজরদারিও আরো বাড়ানো উচিৎ।’

জঙ্গিদের কর্মকাণ্ডের উপর নজরদারি বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক সোহেল রানা বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘হলি আর্টিজানের ঘটনার পর থেকে জঙ্গিদের উপর কঠোর নজরদারি রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যার ফলেই এতগুলো সফল অভিযান করতে পেরেছি।’

‘জঙ্গি নির্মূল না হলেও জঙ্গিবাদ নিয়ে কোন হুমকি নেই। জামিনপ্রাপ্ত জঙ্গিরা যেন জঙ্গিবাদে আবার না জড়ানোর সুযোগ পায়, সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি ছিল, আর এখনও আছে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর