এইতো সেদিনের কথা…

ময়মনসিংহ, জাতীয়

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | 2023-12-11 14:18:10

জামালপুর থেকে: পুর্ব দিকের কাঠের সেলফে বিংশ শতাব্দীর দাপুটে ক্যাসেটে ময়লার আস্তরণ জমেছে। অপর দু’টি সেলফে শোভা পাচ্ছে ইলেকট্রনিক্স সরঞ্জাম। আগে অবশ্য তিনটি সেলফেই থরে থরে সাজানো থাকত ক্যাসেট।

ডিজিটালাইজেশনের ধাক্কায় লাহিড়ীকান্দা বাজারের জমসেদ রেকডিং হাউস এখন জমসেদ ইলেক্ট্রনিক্স ও রেকডিং হয়ে গেছে। তিনটি সেলফ থেকে এখন একটিতে এসে ঠেকেছে ক্যাসেট।

এক সময় জমশেদ আলীর নিজস্ব রেকডিং হাউজ ছিলো। তার দোকানের পেছনেই হতো গান রেকর্ড। দূর দূরান্ত থেকে শিল্পীরা আসতো। এলাকাতেই ছিলো অনেক যন্ত্রী। তাদের দেখাদেখি অনেক ছোট ছেলেরাও বাদ্য যন্ত্রের তালিম নিতো। ঢাকা থেকে সাদা ক্যাসেট এনে গান ভরে বিক্রি করতেন। ব্যস্ততার কারণে অনেক দিন সময় মতো দুপুরের খাওয়া হয়ে উঠতো না তার।

 

জমশেদ আলীর অনেক কদর ছিলো। এলাকাবাসীর কাছে তিনি ছিলেন সম্মানীয় ব্যক্তি। এমপিথ্রি-এমপিফোর প্রজন্মের সংগীত অনুরাগীদের দাপটে আর সেই ক্যাসেট এখন অনেকটা তার গলার কাটার মতো হয়ে আছে। দুই-আড়াইশ ক্যাসেট আছে কালে- ভাদ্রে আসেন ক্রেতা। সর্বশেষ ১৫ দিন আগে একটি ক্যাসেট বিক্রি হয়েছে।

শুধু জামালপুর নয়, গাইবান্ধা, রংপুর, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ থেকে লোক আসতো ক্যাসেট কিনতে। বয়াতীদের আনাগোনায় মুখর থাকতো লাহিড়ীকান্দা বাজার। অনেকে ভিড় করতো শিল্পীদের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার জন্য। অনেকে তার সঙ্গে ভাব জমানোর চেষ্টা করতেন, শিল্পীদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার জন্য।

তিনি বলেন, এইতো সেদিনের কথা, বাইসাইকেলের পেছনে থাকতো ব্যাটারি, আর সামনে বাঁধা থাকতে টেপরেকর্ডার। বাজাতে বাজাতে চলে যেতো। বিয়েসহ বিভিন্ন উৎসবেও এমনিভাবে ক্যাসেট বাজানো হতো। উচ্চ ভলিয়মে ক্যাসেট বাজতো, তার চারদিকে ঘিরে বসে শুনতো গ্রামের লোকজন। কিন্তু এখন সেই দিন সুদূর অতীত। সিডির ধাক্কায় টেপ রেকর্ডারের সঙ্গে ক্যাসেটও হারিয়ে গেছে।

যদিও, সিডিও বেশিদিন দাপট ধরে রাখতে পারেনি। মেমোরি কার্ড  পেনড্রাইভের কাছে ধরাশায়ী হয়েছে। এখন ইউটিউবের কাছে মেমোরি কার্ডও ধরাশায়ী। আগে গান লোড করতে দোকানে যেতো লোকজন। এখন নিজেরাই গান ডাউনলোড করছে।

জমশেদ আলী বলেন, আগে ক্যাসেট বাজতো সবাই শুনতো,পাশাপাশি কাজও চলতো। কৃষকরাও ক্যাসেট চালু করে ক্ষেতে কাজ করতো। আর এখন মেমোরি কার্ড দিয়ে ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা গান শোনেন। তারা কিন্তু কাজ করছে না। এতে কাজের ক্ষতিই হচ্ছে।

জমশেদে আলীর কাছে এইতো সেদিনের কথা। চোখের সামনে হারিয়ে গেলো ক্যাসেট (গ্রামবাসীর কাছে ক্যাসেটের ফিতা)।

সবচেয়ে আতঙ্কের হচ্ছে গ্রামের সংস্কৃতি চচ্চা কিন্তু আর আগের মতো হচ্ছে না। যে কারণে ছেলে মেয়েরা মাদকে জড়াচ্ছে। সংস্কৃতির চচ্চা বাড়ানো না গেলে মাদককে ঠেকানো সম্ভব নয় বলেও মনে করেন জমশেদ আলী।

এ সম্পর্কিত আরও খবর