বেগুনের দাম কম, শঙ্কিত চাষিরা

রংপুর, জাতীয়

নিয়াজ আহমেদ সিপন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 16:30:43

কৃষকের হাড়ভাঙ্গা কষ্টে উৎপাদিত সবজি বেগুন। কিন্তু প্রকৃতি আর বাজার দরের কারণে এবার চাষিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। অন্য মৌসুমের তুলনায় এবার এই সবজির উৎপাদন অনেক কম হয়েছে। একইসাথে বাজার দরও গত বছেরর তুলনায় কম হওয়ায় খরচ তুলতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে বেগুন চাষিদের।

টানা অনাবৃষ্টির ফলে এ বছর বেগুন উৎপাদনের আবহাওয়া যথার্থ ছিল না। এই জন্য অন্য বছরের তুলনায় লালমনিরহাট অঞ্চলে বেগুন উৎপাদন অনেক কম। সেই সাথে গতবার যেখানে প্রতি মণ বেগুন বিক্রি হয়েছে দেড় হাজার টাকা দরে। এবার তা কমে চাষিদের প্রতি মণ বেগুন বিক্রি করতে হচ্ছে মাত্র ৪০০ শত টাকায়। তবে বেগুন উৎপাদন কমলেও অন্যান্য সবজির উৎপাদন বেশ ভালো হয়েছে।

চাষিরা জানান, বন্যাকালীন সবজির চাহিদা পূরণে জুলাই-আগস্ট মাসে আষাঢ়ি বেগুনের চারা রোপন করেন লালমনিরহাটের উচু এলাকার সবজি চাষিরা। সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে বেগুন বাজারে উঠতে শুরু করে। কিন্তু এ বছর বন্যা না হওয়ায় অন্যান্য সবজিতে বাজার ভরে যাওয়ায় বেগুনের চাহিদা অনেকটাই কম। তাই দামও অনেক কম।

গত বছর ৫৪ শতাংশ জমিতে বেগুন চাষ করে লক্ষাধিক টাকা আয় করেছেন আদিতমারির কমলাবাড়ি গ্রামের ইদ্রিস মিয়া। তাই এ বছরও ৪০ হাজার টাকা খরচ করে বেগুন চাষ করেছেন। সপ্তাহে দুই দিন স্প্রে করছেন আড়াই হাজার টাকা খরচে। আর প্রতি সপ্তাহে বেগুন পাচ্ছেন ২০ মণ। যার বাজার মুল্য প্রায় ৮ হাজার টাকা। খরচ উঠলেও লাভের খাতা শূন্য হওয়ার আশংকা তার।

শুধু কমলাবাড়ি নয়, উপজেলার সারপুকুর, ভেলাবাড়ি, দুর্গাপুর, সাপ্টিবাড়ি, সদর উপজেলার বড়বাড়ি, হারাটি, মহেন্দ্রনগর, মোগলহাট, হাতীবান্ধার ভেলাগুড়ি, গোতামারী, সিংগিমারী, কালীগঞ্জের চন্দ্রপুর, চলবলা প্রভুতি এলাকায় ব্যাপক হারে চাষ হয় বেগুনসহ বিভিন্ন জাতের সবজি।

এসব বেগুন প্রতিদিন ট্রাকে করে ঢাকা, চট্রগ্রাম ও কুমিল্লাসহ সারা দেশে পাঠানো হয়। এ সময় মৌসুমি সবজি ব্যবসায়ীদেরও আয়ের পথ খুলে যায়। তারা সারা দিন চাষিদের সবজি ক্ষেত থেকে কিনে সারা দেশের বড় পাইকারি বাজারে পাঠায়। বছরে নয় মাস চলে তাদের সবজি ব্যবসা।

আদিতমারীর মৌসুমী সবজি ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন, নুর হোসেন ও সাইদুর রহমান জানান, তারা চাষিদের সবজি ক্ষেত থেকে কিনে ট্রাকে ভরে পাঠিয়ে দেন দেশের বিভিন্ন বড় বাজারে। সেখানকার ব্যবসায়ীরা পরদিন সকালে এসব টাটকা সবজি বিক্রি করে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে দেন।

দিন যতই যাবে অন্যান্য শীতকালিন সবজি এলে আরো কমে যাবে বেগুনের এই বাজার দর। ফলে উৎপাদনে ব্যয়কৃত খরচ নিয়ে এখন দুঃচিন্তায় আছে বেগুন চাষিরা।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিদু ভুষণ রায়  জানান, সারা দেশে সবজির ব্যাপক চাষাবাদ হওয়ায় বাজারে বেগুনের চাহিদা কিছুটা কমে গিয়েছে। কিছুদিন পরে শীতকালীন নানান সবজিতে বাজার ভরে উঠবে। তখন বেগুনের চাহিদা আরো কমে যেতে পারে। তবে লোকসান নয়, বিগত বছরের তুলনায় এ বছর মুনাফা কিছুটা কম হবে বেগুন চাষিদের।

এ সম্পর্কিত আরও খবর