‘শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি এখন সময়ের দাবি’

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-09-01 22:07:11

দ্রব্যমূল্য, বাড়ি ভাড়াসহ সবকিছুর দাম বাড়লেও বাড়েনি শ্রমিকদের মজুরি। তাই কোনও বিলম্ব ছাড়াই শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি এখন সময়ের দাবি।

বুধবার (১০ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের হলরুমে আয়োজিত গোল টেবিল বৈঠকে এ দাবি তুলে ধরেন আইবিসির নেতৃবৃন্দ।

গোল টেবিলে বৈঠকে বক্তারা বলেন, করোনাকালে চিকিৎসক, চিকিৎসা কাজে নিয়োজিতদের পরেই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে ছিলেন পোশাক শিল্পের ৪০ লাখ শ্রমিক। করোনাকালে চিকিৎসক, আইনশৃঙ্খলাবাহিনী এবং সরকারি কর্মচারীরা মারা গেলে তাদের জন্য বড় অংকের প্যাকেজ থাকলেও শ্রমিকদের জন্য অতিরিক্ত সুযোগ না দিয়ে বরং আরও কর্মচ্যুতসহ ৩৫ শতাংশ বেতন কেটে রাখা হয়েছে।

বক্তারা বলেন, করোনায় সরকারের কাছ থেকে ১১ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা পেলেও কারখানা লে-অফ করে শ্রমিকদের চরম বিপদে ঠেলে দেয় মালিকরা।এছাড়া সকল যানবাহন বন্ধ থাকার পরেও পোশাক শ্রমিকদের কাজে আসতে বাধ্য করে। এসব পরিস্থিতি সরকার এড়াতে পারে না বলে মন্তব্য করেন বক্তারা।

বক্তারা আরও বলেন, তিন বছর আগে শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে। এ যাবত দ্রব্যমূল্য, বাড়ি ভাড়াসহ সবকিছুর দাম বাড়লেও বাড়েনি শ্রমিকদের মজুরি। তাই কোন বিলম্ব ছাড়াই মজুরি বৃদ্ধি এখন সময়ের দাবি।

এছাড়া বক্তারা ৮দফা দাবি তুলে ধরেন।

দফাগুলে হলো-

>> বিশেষ পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে শ্রম আইনের ১৪০ক ধারা অনুযায়ী গার্মেন্টস সেক্টরে পুনরায় মজুরি হার ঘােষণা দিতে হবে এবং তা ডিসেম্বর ২০২১ হতে কার্যকর করতে হবে।

>> ১ আগস্ট ২০২১ কারখানা খােলার পর যে সকল কারখানা লকডাউনে বন্ধের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ছুটির দিনে অতিরিক্ত কাজ করিয়েছে, সে সকল কারখানার শ্রমিকদেরকে অতিরিক্ত কাজের জন্য ওভারটাইম ভাতা পরিশােধ করতে হবে।

>> যে সকল কারখানা লকডাউনে বন্ধের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শ্রমিকদের মজুরি কর্তন করেছে, সে সকল কারখানা কর্তৃপক্ষকে কর্তনকৃত মজুরির টাকা শ্রমিকদেরকে ফেরত প্রদান করতে হবে।

>> ঈদের ছুটির পর শ্রমিকরা কর্মস্থলে আসতে যে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করেছিল তা পুষিয়ে নিতে প্রত্যেক শ্রমিককে যাতায়াত বাবদ ৩ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

>> করােনাকালীন সময়ে শ্রমিকদেরকে বেতনের ২৫% ঝুঁকি ভাতা হিসেবে পরিশােধ করতে হবে। লকডাউনে শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করানাে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের মূল বেতনের ৫০% ঝুঁকি ভাতা পরিশােধ করতে হবে।

২।

>> ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে সকল প্রকার প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষ বাঁধা দূর করে রেজিস্ট্রেশন দিতে হবে এবং অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। একাধিক ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশনে বাধা সৃষ্টি করা যাবে না।

>> শ্রম অধিদফতর (ডিওএল) এবং কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরকে (ডাইফে) আরাও সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন তথা দায়ী মালিকদের অন্যায় অনিয়মের বিরুদ্ধে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

>> শ্রম অধিদফতর (ডিওএল) এবং কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর (ডাইফে) নিয়ােজিত সকল কর্মকর্তাকে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে অনিয়ম এবং অবহেলার জন্য জবাবদিহি করতে হবে।

>> শ্রম অধিদফতর (ডিওএল) এবং কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর (ডাইফে) উভয় প্রতিষ্ঠান থেকে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদেরকে প্রত্যাহার করতে হবে।

৩। শ্রম আইন এবং শ্রম বিধিমালা আই.এল.ও কনভেনশন ৮৭ ও ৯৮ অনুযায়ী সংশােধন করতে হবে এবং শ্রম আইন ও বিধিতে অতীতে যুক্ত আইএলও কনভেনশন বিরােধী বিভিন্ন ধারাসহ সকল কালা কানুন বাতিল করতে হবে।

৪।

>> দেশের সকল পােশাক শিল্প অঞ্চলে সরকারি উদ্যোগে শ্রমিকদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা করতে হবে।
>> গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

৫।

>> শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষার জন্য সােশ্যাল সেইফটি নেট গড়ে তুলতে হবে।
>> এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি ইস্যুরেন্স, আন এমপ্লয়মেন্ট জীবিকা ভাতা নিশ্চিত করতে হবে।
>> আইএলও কনভেনশন ১২১ অনুযায়ী আহত এবং নিহত শ্রমিকদের জন্য ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।
>> কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের প্রতি সকল প্রকার জুলুম নির্যাতন বন্ধে আইএলও কনভেনশন ১৯০সহ ১০২ ও ১৮৯ বাংলাদেশ সরকারকে অনুসমর্থন করতে হবে।
>> দ্রুততম সময়ের মধ্যে একযােগে কারখানা পর্যায়ে শ্রমিকদেরকে করােনার টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

৬।

>> শ্রমিক ছাঁটাই, শ্রমিক নির্যাতন ও প্রােডাকশন টার্গেট দিয়ে শ্রমিক হয়রানি বন্ধ করতে হবে।
>> যে সকল কারখানার মালিক শ্রমিকদের বকেয়া বেতনসহ অন্যান্য পাওনা না দিয়ে পালিয়ে যায়, সে সকল কারখানার শ্রমিকদের পাওনা পরিশােধের দায় বিজিএমইএ/ বিকেএমইএ/ অথবা সরকারকে বহন করতে হবে।

৭।

>> দেশের চারটি বৃহত্তর পােশাক শিল্প অঞ্চল (গাজীপুর, সাভার-অশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম) এলাকায় শ্রমিকদের জন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এছাড়াও পেশাগত স্বাস্থ্যহানির জন্য ঢাকায় একটি বিশেষায়িত শ্রমজীবী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
>> শ্রমিক/ শ্রমিকদের সন্তানের জন্য লেবার ইনিস্টিটিউট স্কুল/কলেজ/ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে।
>> প্রত্যেক কারখানায় ওএইচএস কমিটি এবং অ্যান্টি হেরেসমেন্ট কমিটি গঠন করতে হবে।
>> সরকারি চাকরিজীবী নারীদের মতো পােশাক শিল্পে নিয়োজিত নারী শ্রমিকদেরও মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ (মাস করতে হবে।

৮।

>> পক্ষ অবলম্বনকারী শিল্প পুলিশকে অবিলম্বে বিলুপ্ত করিতে হইবে।
>> কোন কারণে শিল্প এলাকায় শ্রম অসন্তোষ দেখা দিলে নিয়মিত পুলিশকে নিরপেক্ষ আচরণ করতে হবে।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, আইবিসি'র সভাপতি মীর আবুল কালাম আজাদ, সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদুল ইসলাম রাজুসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর