শ্মশান দিপালী উৎসব ঘিরে মহা আয়োজন

বরিশাল, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-25 20:58:10

একদিন পরেই উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী শ্মশান দিপালী উৎসব। প্রতি বছরের মতো এ বছরও কাউনিয়ার বরিশাল মহাশ্মশানে অনুষ্ঠিত হবে এই উৎসব। তাছাড়া দিপালী উৎসবকে ঘিরে মহাশ্মশানে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।

ইতোমধ্যে শ্মশান ও শ্মশানের সমাধি স্থাপনাগুলো ধোয়ামোছার কাজ শেষে চলছে রঙ ও লেখার কাজ। স্বজনদের পাশাপাশি পুরনো সমাধিগুলো নিজ উদ্যোগে সংস্কারের কাজ করছে মহাশ্মশান রক্ষা সমিতি।

বরিশাল নগরীর লাকুটিয়া খাল ঘিরে প্রায় সাড়ে পাঁচ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত দেশের অন্যতম বৃহৎ এ মহাশ্মশান। প্রায় পৌনে দুইশ বছর সময় ধরে চলে আসা এই রেওয়াজ অনুযায়ী প্রিয়জনের স্মৃতির উদ্দেশে দিপালী উৎসবে জ্বালানো হয় প্রদীপ।

এছাড়াও প্রতিবছর ভূত চতুর্দ্দশীর পূণ্য তিথিতে আয়োজন করা হয় এই উৎসবের। শুধুমাত্র বরিশালেরই নয়, শ্মশানে দিপালী উৎসব দেখতে দেশ-বিদেশ থেকে আসেন ভক্ত অনুসারী ও পর্যটকরা।

প্রিয়জনের স্মৃতিতে মোমের আলো জ্বালানো ছাড়াও সমাধিতে তার প্রিয় খাদ্যসহ বিভিন্ন উপাচার ও ফুল দিয়ে সমাধি সাজিয়ে তোলা হয়। পূর্ব-পুরুষের স্মৃতি স্মরণ করে প্রার্থনা করা হয়। তবে যাদের স্বজনরা দিপালী উৎসবে এখানে আসে না। সেসব সমাধিগুলোতে মহাশ্মশানের তত্ত্বাবধানে দীপ প্রজ্জ্বলন করা হয়।

সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের শিক্ষার্থী সঞ্জয় রায় বার্তা২৪.কমকে জানান, শ্মশান দিপালী উৎসবকে ঘিরে সমাধি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং রঙ করার কাজ করছেন। এখানে তার ঠাকুরদাদা, ঠাকুরমাসহ পরিবারের ৫ জনের সমাধি রয়েছে। তাদের স্মরণ করতেই শ্মশানে এসেছেন তিনি।

জানা গেছে, সোমবার (৫ নভেম্বর) রাত ৯টা ৪৮ মিনিটে ভূত চতুর্দ্দশী আরম্ভ হবে ও (৬ নভেম্বর) মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত এই তিথি থাকবে। সে সময়ে উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী দিপালী উৎসব অনুষ্ঠিত হবে এখানে। এরপর রাত ১২টা ১ মিনিটে শ্রী শ্রী শ্মশান কালীমাতার পূজা বরিশাল মহাশ্মশান ও নতুন বাজারস্থ অমৃতাঙ্গন আদি শ্মশান প্রাজ্ঞনে অনুষ্ঠিত হবে। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে এই উৎসব উদযাপন হয়ে থাকে।

বরিশাল মহাশ্মশান রক্ষা সমিতির সাধারণ সম্পাদক তমাল মালাকার বার্তা২৪.কমকে জানান, ঐতিহ্যবাহী এই মহাশ্মশানে প্রায় লক্ষাধিক সমাধি রয়েছে। এই শ্মশানে শ্রদ্ধা জানাতে ইউরোপ, নেপাল এবং ভারতসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লাখ লাখ মানুষের সমাগম ঘটে। এখানে বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের অনেক জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিত্বসহ সমাজসেবীদের সমাধি রয়েছে।

তিনি আরও জানান, দিপালী উৎসবকে ঘিরে ইতোমধ্যে স্বজনবিহীন ৮৫০ সমাধি মহাশ্মশান রক্ষা সমিতির পক্ষ থেকে রঙ করা হয়েছে। সমিতির বাইরে স্বজনরা নতুন করে সমাধি সংস্কার এবং ধোয়ামোছার কাজ করছেন। এছাড়া মহাশ্মশান রক্ষা সমিতির পক্ষ থেকে করা হবে বাহারি আলোকসজ্জা। যার কাজও এখন শেষের দিকে।

তমাল মালাকার জানান, দিপালী উৎসবকে ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে প্রতিবারের মতো কঠোর অবস্থানে থাকবে পুলিশ ও র‌্যাব। এর পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী পুরো শ্মশানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে কাজ করবে। এছাড়া শ্মশান এলাকাজুড়ে সিসি ক্যামেরা বসানো হবে।

উল্লেখ্য, বরিশাল মহাশ্মশানে মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অগ্নিপুরুষ বিপ্লবী দেবেন্দ্র নাথ ঘোষ, মনোরমা বসু মাসিমা, রাজনীতিবিদ শরৎচন্দ্র গুহ, শিক্ষাবিদ কালি চন্দ্র ঘোষ, কবি জীবনানন্দ দাশের বাবা সত্যানন্দ, পিতামহ সর্বানন্দ দাশ, শ্যামপুরের জমিদার কুমুদ বন্ধু রায় চৌধুরী (নাটু বাবু), সাংবাদিক ও আইনজীবী মিহির লাল দত্তসহ বিভিন্ন খ্যাতনামা ব্যক্তিদের সমাধি রয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর