ইভিএম‘র বিধিমালা নিয়ে আপত্তি তোলেননি মাহবুব তালুকদার

ঢাকা, জাতীয়

ইসমাঈল হোসাইন রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম | 2023-08-02 06:38:58

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের বিধি চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে বিধিমালা চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে কোনো আপত্তি তোলেননি ইতোপূর্বে ভিন্নমত পোষণ করা নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।

শনিবার (৩ নভেম্বর) ও রোববার (৪ নভেম্বর) দুইদিন টানা বৈঠক শেষে কমিশন এ বিধিমালা চূড়ান্ত করে। জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক যুগ্ম-সচিব মো. আবদুল বাতেন বার্তা২৪.কমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, কমিশন সভায় ইভিএম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সভায় কোন কমিশনার ইভিএমের পক্ষে বিপক্ষে কথা বলেননি। ইতোপূর্বে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে আইন সংস্কারের উদ্যোগে ভিন্নমত পোষণ করলেও বিধিমালা চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে গতকাল এবং আজ কোন আপত্তি তোলেননি মাহবুব তালুকদার।  তিনি শুধুমাত্র বিধিমালায় দাড়ি কমা সংশোধন করতে কিছু জায়গায় পরামর্শ দিয়েছেন।

এরআগে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে আইন সংস্কারের উদ্যোগে ভিন্নমত পোষণ করেছিলেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন নিয়ে গত ৩০ আগস্ট কমিশন সভা শুরুর আধা ঘণ্টার মাথায় তিনি সভা বর্জন করে বেরিয়ে যান এবং পরে কর্মচারীর মাধ্যমে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ পাঠিয়ে দেন।

সেখানে তিনি লিখেছিলেন, “আমি মনে করি, স্থানীয় নির্বাচনে ধীরে ধীরে ইভিএমের ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারে আরপিও সংশোধনের উদ্যোগ সমর্থন করি না। ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে কমিশনের সিদ্ধান্তে ভিন্নমত পোষণ করে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ প্রদান করছি।” এই আপত্তির কারণ হিসেবে ইভিএম নিয়ে ‘বিদ্যমান রাজনৈতিক বিরোধিতা’ এবং ‘দক্ষ জনবলের অভাব’ এর কথা বলা হয় ওই নোট অব ডিসেন্টে।

এরআগে আজ দুপুর তিনটায় ইভিএম বিধিমালা  চূড়ান্ত করতে শনিবারের মূলতবি করা কমিশন বৈঠক শুরু হয়। আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সভাকক্ষে বৈঠক শুরু হয়।

বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে (সিইসি) এম নূরুল হুদা ও নির্বাচন কমিশনার  মাহবুব তালুকদার,  মো. রফিকুল ইসলাম, বেগম কবিতা খানম ও অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদত হোসেন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বার্তা২৪.কমকে জানান, কমিশন বৈঠকে সংসদ নির্বাচনে কতটি ইভিএম ব্যবহার করা হবে তা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তবে সিটি এলাকাগুলোতেই ইভিএম ব্যবহারেরর বিষয়গুলো বলে আলোচনায় উঠে আসে। ধারণা করা যায় ৪১ হাজার ভোটকেন্দ্রের মধ্যে এক হাজার ইভিএম মেশিন ব্যবহার করা হতে পারে।

‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইভিএম বিধিমালা ২০১৮-এ রিটার্নিং অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসার, ভোট গণনা, ফল একীকরণসহ নানা বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ইভিএমে আঙ্গুলের ছাপ, ভোটার নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর বা স্মার্ট পরিচয়পত্র ব্যবহার করে ভোটারকে শনাক্ত করা হয়।

নির্দিষ্ট কেন্দ্রের ভোটকক্ষে একজন করে ভোটার ভেরিফিকেশন করেন পোলিং অফিসার।

ডেটাবেজে ভোটার বৈধ হিসেবে শনাক্ত হলেই ভেরিফিকেশনের সঙ্গে যুক্ত প্রজেক্টের মাধ্যমে তা পোলিং এজেন্টের কাছে দৃশ্যমান হবে। মেশিনটিতে কুইক রেসপন্স কোড QR CODE সহ আরও কিছু তথ্য সম্বলিত টোকেন মুদ্রণ করে ভোটারকে দেওয়া হয়।

ভোটার টোকেন নিয়ে সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তার কাছে এলে ভোটিং মেশিনের QR CODE স্ক্যানারের মাধ্যমে শনাক্ত করে গোপন কক্ষে থাকা তিনটি পদের জন্য ব্যালট ইউনিটে ব্যালট ইস্যু করা হয়। ভোটার পছন্দের প্রার্থী ও প্রতীক দেখে বাম দিকে বোতামে চাপ দিয়ে সিলেক্ট করেন এবং ওই ব্যালট ইউনিটের সবুজ রংয়ের CONFIRM বোতাম চেপে তার ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

কখনো ভুলবশত কোনো প্রতীক সিলেক্ট করা হলে, ব্যালট ইউনিটের লাল রংয়ের CANCEL বোতাম চেপে পরবর্তীতে যে কোনো প্রার্থীকে আবার সিলেক্ট করা যাবে। এভাবে দুই বার CANCEL করা যাবে, তৃতীয়বার যেটি সিলেক্ট করা হবে সেটি বৈধ ভোট হিসেবে গৃহীত হবে।

সম্প্রতি নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের জন্য আরপিও সংশোধনের তোড়জোড় শুরু হয়। দেড় লাখ ইভিএম কিনতে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাবও ইসি করামকর্তারা তৈরি করেন। পরে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদন দেয়া হয়।

আগামী সংসদ ভোটে ইভিএম ব্যবহার করতে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) আরপিও সংশোধনেরও উদ্যোগ নিয়েছে কমিশন। গত ৩০ আগস্ট কমিশন সভায় বিষয়টি অনুমোদন পায়। পরে তা ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় ইসি। ভেটিং শেষে আরপিও (সংশোধনী) বিল-২০১৮ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। পরে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনীর অধ্যাদেশ জারি হয়। পরের দিন আইন মন্ত্রণালয় তা গেজেট আকারে প্রকাশ করে।

প্রসঙ্গত, স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে ইভিএম চালুর ৮ বছর পর প্রথমবারের মতো সংসদ নির্বাচনে এ প্রযুক্তি ব্যবহার হবে। ২০১০ সালের জুন মাসে স্বল্প পরিসরে চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে ইভিএম চালু হয়। ২০১৫ সালের এসে ওই ইভিএম বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ডিজিটাইজড সুবিধা সম্বলিত নতুন ইভিএম তৈরি করে ইসি। ২০১৬ সালে রংপুর সিটি নির্বাচনে তা চালু হয়। এর দু’বছরের মাথায় সংসদে নতুন প্রযুক্তিটি চালু হচ্ছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর