পাবনা-৫: প্রিন্স-শিমুলই সম্ভাব্য প্রার্থী

রাজশাহী, জাতীয়

আরিফ আহমেদ সিদ্দিকী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | 2023-09-01 16:26:56

চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সব স্থানে বইছে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের উষ্ণ উত্তাপ। কে হচ্ছেন কোন দলের প্রার্থী এ নিয়ে চলছে আলোচনা। কাকেই বা দেয়া হচ্ছে দলীয় মনোনয়ন। সে আলোচনা থেমে নেই পাবনা-৫ (সদর) আসনেও। তবে জেলার অন্য আসনগুলোর মতো এই আসনের প্রার্থীদের তেমন নির্বাচন মুখী তৎপরতা নেই।

পাবনা-৫ সদর উপজেলা মোট ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এ জেলার রাজনীতিতে এটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আসন। এই আসনটিতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত তিন দলেরই রয়েছে ভালো ভোট ব্যাংক।

১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের রফিকুল ইসলাম বকুল ও বিএনপির অ্যাডভোকেট আবুল আহসানকে হারিয়ে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন জামায়াতের মাওলানা আব্দুস সোবহান। ১৯৯৩ সালে আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপিতে যোগ দেন রফিকুল ইসলাম বকুল। পরে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এ কে খন্দকার ও জামায়াতের মাওলানা সোবহানকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিএনপির রফিকুল ইসলাম বকুল। ২০০০ সালের নির্বাচনে বিএনপির রফিকুল ইসলাম বকুল সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলে জামায়াত নেতা মাওলানা আব্দুস সোবহানকে মনোনয়ন দেয়া হয়। তিনি আওয়ামী লীগের ওয়াজি উদ্দিন খানকে হারিয়ে সাংসদ হন। ২০০৮ সালে মাওলানা আব্দুস সোবহানকে হারিয়ে চমক দেখান আওয়ামী লীগের সাবেক জনপ্রিয় ছাত্রনেতা গোলাম ফারুক প্রিন্স। ২০১৪ সালে তিনি আবারো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন।

বকুলের মৃত্যুর পর এ পর্যন্ত প্রায় সকল নির্বাচনেই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে জোটগত জামায়াত প্রার্থী আর আওয়ামী লীগের মধ্যে। এ আসন থেকে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কারাবন্দী জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুস সোবহান নিজদল ও জোট থেকে ৫ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তবে জামায়াত মনে করে এই আসনটি সারাদেশের মধ্যে তাদের অন্যতম দুর্গ। ফলে জোটগত হোক আর এককভাবে হোক, আসনটিতে জামায়াতের প্রার্থী আশা করেন তারা। মাওলানা সোবহান নির্বাচন করতে না পারলে সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য ক্লিন ইমেজের কোনো নেতাকে প্রার্থী করতে চান তারা। তাদের দাবি গত উপজেলা ও পৌর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা ইকবাল হুসাইন পরিচিতি পেয়েছে অনেক। তাকে প্রার্থী করার ব্যাপারে দলের মধ্যে আলোচনা চলছে। এর বাইরে নাম শোনা যাচ্ছে মাওলানা সোবহানের ছেলে নেছার আহমেদ নান্নুর।

এদিকে এ আসনে বিএনপির কোনো নেতা নিজেকে প্রার্থী হিসেবে এখনো ঘোষণা দেন নাই। তবে ২০ দলীয় জোটে ও এলাকার মানুষের মুখে মুখে রয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের নাম। দলে প্রকাশ্যে কোনো কোন্দল না থাকায় এ আসনে মনোনয়ন নিয়ে দলীয় নেতাদের মধ্যে বিভেদ বা দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা নেই বলেই মনে করছে দলটির সিনিয়র নেতারা। দলের অনেক নেতাকর্মী ও জোটের কতিপয় নেতাকর্মীরা নিজেদের উদ্যোগে শিমুল বিশ্বাসের নাম ঘোষণা দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে।

বিএনপির একাধিক প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাশার কথা শোনা গেলেও সদর আসনে তেমন কারো নাম এখন পর্যন্ত মাঠে নেই। কোনো নেতাকর্মীর বিলবোর্ড বা পোস্টার এখন পর্যন্ত চোখে পড়েনি।

নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, দলের জেলা নেতাকর্মীরা শিমুল বিশ্বাসের প্রার্থী হওয়ার কথা বললেও তিনি এখন পর্যন্ত কিছুই পরিষ্কার করে বলেননি। তার কোনো পোস্টার বা ব্যানার কিছুই নেই। তিনি আদৌ প্রার্থী হবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তিনি নিজে কিছু না বলা পর্যন্ত প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া সম্ভব নয়।

তবে একটি সূত্র জানায়, শিমুল বিশ্বাস প্রার্থী না হয়ে তার নিজের পছন্দসই কোনো প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়ার চেষ্টা করবেন।

এদিকে জেলা কাউন্সিল হওয়ার পর থেকে সদর আসনে আওয়ামী লীগের অবস্থান অনেক শক্ত হয়ে গেছে। বর্তমান সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন এটা নিশ্চিত। দলে প্রকাশ্যে কোনো দলাদলি নেই। দলটির সিনিয়র নেতারা মনে করেন দলাদলি বা কোন্দল না থাকায় এই আসনে মনোনয়ন নিয়ে দলীয় নেতাদের মধ্যে বিভেদ বা দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা নেই। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বর্তমান সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্সের মনোনয়ন প্রাপ্তিকে একরকম নিশ্চিতই ধরে রেখেছেন তারা।

অপরদিকে জামায়াতের ভোট ব্যাংক বেশ ভালো বলে সদর আসনে প্রার্থী থাকার সম্ভাবনাও বেশি। যদি জোটগতভাবে না হয়, তাহলে জামায়াত তাদের দলীয় প্রার্থী দেবে। সেক্ষেত্রে জেলা জামায়াত নেতা পাবনা আলিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা ইকবাল হুসাইনের জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পাবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।

আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের বাইরেও মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের খান কদর। তিনিও শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পোস্টার লাগিয়েছেন।

এছাড়াও জেলা জাসদের সভাপতি আমিরুল ইসলাম রাঙা, ওয়ার্কার্সপার্টির সভাপতি কমরেড জাকির হোসেন ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষে মাওলানা মুহাম্মদ আরিফ বিল্লাহের নাম শোনা যাচ্ছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর