টিউশনি করে খরচ চালানো সাগরিকা পেলেন পুলিশে চাকরি

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, বগুড়া | 2023-08-27 09:44:13

ক্ষুদ্র নৃগোষ্টির হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে সাগরিকা মাহাতো। কিছুদিন আগে বগুড়ার শেরপুর কলেজ বাজারে টিউশনি শেষে বাড়ি ফেরার পথে প্রজেক্টরের মাধ্যমে ভিডিও প্রচারনায় দেখতে পান পুলিশে কনস্টেবল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি।

প্রচারনায় বলা হয় সম্পূর্ণ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। কোন তদবির আর্থিক লেনদেন চলবে না নিয়োগের ক্ষেত্রে। সাগরিকা মাহাতো পড়াশোনা করেন বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে অর্থনীতি বিভাগে অনার্স প্রথম বর্ষে।

তিনি শেরপুর উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের বাগমারা গ্রামের সুবাস মাহাতোর মেয়ে। বাড়িতে গিয়ে বাবা- মার সাথে আলোচনা করে পুলিশে নিয়োগের জন্য অনলাইনে আবেদন করেন তিনি।

বাবা সুবাস মাহাতো চাউল কলে শ্রমিকের কাজ করেন। আর মা জোৎস্না মাহাতো মাঠে কৃষি শ্রমিকের কাজ করেন। বাবা মা আর তিন বোন নিয়ে অভাবের সংসার তাদের। ছোট বোনদের মধ্যে স্বরস্বতি মাহাতো বগুড়া সরকারি কলেজ থেকে এবার উচ্চ মাধ্যমিক পরিক্ষায় অংশ গ্রহন করবে।

আরেক ছোট বোন প্রতিমা মাহাতো গ্রামের স্কুলে ৩য় শ্রেনীতে লেখাপড়া করে। সাগরিকা মাহাতো তার আরেক বোন স্বরস্বতি গ্রামের বাড়িতেই বসবাস করে টিউশনি করে নিজেদের লেখাপড়ার খরচ চালানোর পাশাপাশি সংসারে ঘাটতি পূরন করে থাকেন।

সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে সাগরিকা মাহাতো পুলিশের চাকরি পাওয়ার জন্য আবেদন করে শারিরিক যোগ্যতা থেকে শুরু করে কয়েক ধাপের পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

চূড়ান্ত নাম ঘোষনার সময় নিজের নামটি শুনে চোখে জল চলে আসে সাগরিকার। চাকরি হওয়ার খবর নিজ কানে শুনে চোখ দিয়ে জল বের হয় তার। সাগরিকা বলেন, তাদের বংশে কেউ সরকারি চাকরি পায়নি। নারী পুরুষ সবাই শ্রমিকের কাজ করে।

বাবার সামর্থ না থাকায় কঠোর পরিশ্রম করে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া শুরু করে সাগরিকা। পুলিশে চাকরি পেয়ে সাগরিকা বলেন, ছোট বোনকে আর টিউশনী করাতে হবে না। সংসারে কিছুটা হলেও ফিরে আসবে স্বচ্ছলতা।

শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) রাতে বগুড়া পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ অডিটোরিয়ামে ট্রেইনী রিক্রুট কনস্টেবল নিয়োগ পরিক্ষার চুড়ান্ত ফল প্রকাশ করেন বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী।

তিনি বলেন বগুড়া জেলায় কনস্টেবল পদে ৭১ জন চুড়ান্ত ভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। এরমধ্যে ৬০ জন পুরুষ এবং ১১ জন নারী। পুলিশ কনস্টেবল পদের জন্য ২ হাজার ৮৪০ জন আবেদন করেন। এরমধ্যে ৪৪০ জন ছিলেন নারী।

আবেদন যাচাই বাছাই শেষে গত ১৬ নভেম্বর ৯৪৪ জনকে পরিক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতি দেয়া হয়। পরদিন ২য় ধাপের পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ৮১২ জন। সেখান থেকে ৩য় ধাপে উত্তীর্ন হন ৬৩৯ জন। এর মধ্যে ৫৮৬ জন পুরুষ এবং ৫৩ জন নারী।

গত ১৯ নভেম্বর ৬৩৯ জন লিখিত পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। লিখিত পরিক্ষার ফলাফলে উত্তীর্ন হয়ে মোখিক পরিক্ষায় অংশ নেন ২০৪ জন। এর মধ্যে ১৮৭ জন পুরুষ এবং ১৭ জন নারী। মনস্তাত্ত্বিক এবং মোখিক পরিক্ষা থেকে ৬০ জন পুরুষ এবং ১১ জন নারীকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়।

পুলিশ সুপার বলেন সাগরিকার মত হতদরিদ্র এবং ক্ষুদ্র পেশার সাথে জড়িত পরিবার থেকে অনেকেই নিয়োগ পেয়েছেন। তিনি বলেন নিয়োগ প্রক্রিয়া শতভাত স্বচ্ছ এবং মেধার ভিত্তিতে সম্পন্ন করা হয়েছে। পরে নিয়োগ প্রাপ্তদেরকে ফুল দিয়ে বরন করে নেয়া হয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর