১০ মাসে স্বামীর হাতে ১৯৭ খুন

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম ঢাকা | 2023-08-29 00:46:13

মহিদুল ও রোজিনার মধ্যে প্রায় প্রতিদিনই ঝগড়া হতো। ঘটনার সময় ঝগড়ার এক পর্যায়ে মহিদুল বঁটির হাতল দিয়ে তার স্ত্রীর মাথায় আঘাত করেন। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু ঘটে। ঘটনাটি ঘটে ৫ নভেম্বর, ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার চাঁদরতনপুর গ্রামে।

স্ত্রী মিনারাকে হত্যার পর স্বামী আমিনুল ইসলাম নিজেই থানায় ফোন করেন। তিনি বলেন, আমার স্ত্রীকে আমি হত্যা করেছি। আপনারা এসে আমাকে নিয়ে যান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আমিনুলকে আটক করে। ঘটনাটি ঘটে ২০ নভেম্বর, টাঙ্গাইলের ঘাটাইলের ভাবনদত্ত পন্ডিত কাছড়া গ্রামে।

শুধু রোজিনা কিংবা মিনারা নয়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে স্বামীর হাতে খুন হয়েছেন ১৯৭ জন নারী। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) এক পরিসংখ্যানে এ তথ্য জানা যায়।

গত বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানিয়েছে সংস্থাটি।

আসক জানায়, বাংলাদেশে নারী অধিকার পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে নারীরা এখনো প্রতিনিয়ত পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে নানা ধরনের বৈষম্য, নিপীড়ন এবং শারীরিক, মানসিক ও অর্থনৈতিক নির্যাতনের শিকার।

আসকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১০ মাসে পারিবারিক সহিংসতার কারণে আত্মহত্যা করেছেন ১২৮ নারী। এছাড়া ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক হাজার ১৭৮ জন নারী। এর মধ্যে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়েছে ২২০ জনকে এবং ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৪৩ জন নারীকে। ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা ঘটে ২৭৬টি এবং আত্মহত্যা করেছেন ৮ নারী।

আসক আরও জানায়, বিগত ১০ মাসে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ১১৬ নারী, যার মধ্যে আত্মহত্যা করেছেন ১০ জন নারী। যৌতুককে কেন্দ্র করে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১০১ নারী। নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে ৬৩ জনকে। অ্যাসিড নিক্ষেপের শিকার হয়েছেন ২০ জন।

বিজ্ঞপ্তিতে আসক জানায়, সহিংসতার এমন চিত্রের বিপরীতে আমরা প্রত্যক্ষ করি খুব কমসংখ্যক ঘটনার ক্ষেত্রে মামলা হচ্ছে, বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে এবং ন্যায়বিচার পাওয়া গেছে। নারীর প্রতি সহিংসতার এমন চিত্রের মূল কারণ বৈষম্য ও পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা। দেশের নানা ক্ষেত্রে উন্নয়ন ঘটলেও এই মানসিকতা বাংলাদেশের সমাজে এখনও ভয়ানক মাত্রায় রয়ে গেছে। এছাড়াও, বিদ্যমান আইন ও বিচারিক কাঠামো এখনও নারীবান্ধব নয় এবং নারীর জন্য সহজগম্য নয়। এসব কাঠামো নারীর অধিকারের প্রতি সংবেদনশীল না হওয়ায় নারীরা আইনের আশ্রয় নেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা পান, নিরুৎসাহিত হন।

নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবসে নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে ও ন্যায়বিচার সুনিশ্চিত করতে আসক 'ভুক্তভোগী ও সাক্ষী সুরক্ষা আইন' প্রণয়নের দাবি জানায়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর