‘স্বপ্ন দেখতে শিখেছি আমরাও’

রংপুর, জাতীয়

নাহিদ রেজা, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-25 21:36:57

‘আমরা প্রতিবন্ধীরাও স্বপ্ন দেখতে শিখেছি। আমরা আর পিছিয়ে থাকতে চাই না। সুযোগ পেলে আমরাও সমাজ তথা দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারি।’

ঠিক এভাবেই কথাগুলো বলছিল একতা প্রতিবন্ধী স্কুলের শিক্ষার্থী সুবর্ণা আক্তার। শুধু সুবর্ণাই নয় তার মতো প্রায় ৪২০ জন প্রতিবন্ধী শিশু আজ স্বপ্ন দেখতে শিখেছে। পিছিয়ে পড়ে থাকতে চায়না কেউই।

প্রতিবন্ধীরা আমাদের সমাজের বোঝা নয়। এমন চিন্তা নিয়ে ২০০৮ সালে প্রথম ১৫ জন প্রতিবন্ধী শিশু নিয়ে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নে আমিরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি নিজ উদ্যোগে একটি স্কুল ও পুনর্বাসন কেন্দ্র চালু করেন। এর নাম দেন একতা প্রতিবন্ধী স্কুল।

সমাজের মাঝে প্রতিবন্ধী শিশুদের মেধা বিকাশ করাই ছিল আমিরুল ইসলামের মূল লক্ষ্য। আর এই উদ্যোগে সফল হয়েছেন তিনি। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে এই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে তার এখানে মোট ৪২০ জন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে।

ঠাকুরগাঁও শহর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে রায়পুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী চুনিহাড়ি এলাকায় ১৬ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়ে চলে এই স্কুল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রটি। যেখানে রয়েছে ৩ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের প্রায় শত শত প্রতিবন্ধী শিশু।

স্কুলটির সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁওয়ের আশপাশের ৩ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের প্রতিবন্ধী শিশুরা এই পুনর্বাসন কেন্দ্রে লেখাপড়া করার সুযোগ পাচ্ছে। ৪২০ জন ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে এখানে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ৮০ জন, বাক-প্রতিবন্ধী ৫৭ জন, শ্রবণ-প্রতিবন্ধী ৩০ জন, শারীরিক-প্রতিবন্ধী ৬২ জন, দৃষ্টি-প্রতিবন্ধী ৪০ জন, মানসিক-প্রতিবন্ধী ৩৬ জন, অটিজম-প্রতিবন্ধী ৬২ জন, সেরিব্রাল ৫০ জন।

জানা গেছ, যাতায়াতের সুবিধার ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের পরিচালক নিজ উদ্যোগে দুটি পিকআপ গাড়ি কিনে প্রতিবন্ধী শিশুদের বাড়ি থেকে নিয়ে এসে যাতায়াত করতেন। তবে বর্তমানে গাড়ি দুটি অকেজো অবস্থায় রয়েছে। এরপরেও ২০ জন এতিম প্রতিবন্ধীকে রাখা হচ্ছে পুনর্বাসন কেন্দ্রে।

স্কুলের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী জিল্লুর রহমান, সাবিনা ইয়াসমিন জানায়, স্কুলে আসতে তাদের অনেক ভালো লাগে। কারণ এখানকার শিক্ষকরা তাদের অনেক ভালোবাসে। তাদের অনেক ভালোভাবে পড়ালেখা শেখায়। আজ তারা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। তাদের স্বপ্ন তারা বড় হয়ে সমাজের সাধারণ মানুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলবে। আর এই স্বপ্ন দেখার মূল কারণ হচ্ছে একতা প্রতিবন্ধী স্কুল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রটি।

একতা প্রতিবন্ধী স্কুলের পরিচালক আমিরুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে গিয়ে আমাকে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়েছে। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী অনুযায়ী শ্রেণিকক্ষ, টেবিল-চেয়ার, স্কুলের সীমানা প্রাচীর অর্থের অভাবে এখনো করতে পারছি না। প্রতিবন্ধী শিশুদের পাঠদানের জন্য আমাদের প্রতিষ্ঠানে কোনো প্রজেক্টর ও কম্পিউটার নেই। শিশুদের চিকিৎসার জন্য আমাদের স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র থাকলেও ডাক্তার ও ওষুধের অভাবে তা ব্যাহত হচ্ছে।’

ঠাকুরগাঁও উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমি ওই একতা প্রতিবন্ধী স্কুলটি পরিদর্শন করেছি। স্কুলটির ভেতরে অনেক সুন্দর পরিবেশ রয়েছে। সেখানকার বাচ্চারা এগিয়ে যেতে চায় এটা অনেক ভালো ব্যাপার। আমরা চেষ্টা করব তাদের জন্য ভালো কিছু করার।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর