বীরপ্রতীক তারামন বিবির মৃত্যুবার্ষিকী আজ

, জাতীয়

নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 21:56:07

বীরপ্রতীক তারামন বিবির তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ বুধবার। ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলা সদরের কাচারীপাড়া এলাকায় নিজ বাড়িতে শ্বাসযন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগে ভোগার পর মারা যান তিনি। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে কাচারীপাড়া তালতলা কবরস্থানে সমাধিস্থ করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য তাকে বীরপ্রতীক খেতাব দেওয়া হলেও সে কথা তিনি দীর্ঘ ২৫ বছর জানতে পারেননি। ১৯৯৫ সালের শেষ দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে তার হাতে বীরপ্রতীক খেতাবের পদক তুলে দেওয়া হয়। বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মাত্র দু'জন নারীর মধ্যে তারামন বিবি একজন।

তারামন বিবি ১৯৫৭ সালে কুড়িগ্রাম জেলার চর রাজিবপুর উপজেলার শংকর মাধবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আবদুস সোহবান এবং মায়ের নাম কুলসুম বিবি। সাত ভাই-বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয় ছিলেন তারামন বিবি। তিনি লেখাপড়ার সুযোগ পাননি। কাজ করতেন অন্যের বাড়িতে।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে রান্না, তাদের অস্ত্র লুকিয়ে রাখা এবং পাকিস্তানি বাহিনীর খবর সংগ্রহ করতেন ১৪ বছর বয়সী তারামন। রান্না করতে করতে অস্ত্র চালাতে শেখেন তিনি। তারপর রান্নার খুন্তি ফেলে রাইফেল হাতে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে অংশ নেন সম্মুখ সমরে।

বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭৩ সালে তৎকালীন সরকার মুক্তিযুদ্ধে তারামন বিবিকে তার সাহসীকতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য 'বীর প্রতীক' উপাধিতে ভূষিত করেন। কিন্তু ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত তাকে খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি। ১৯৯৫ সালে ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক বিমল কান্তি দে প্রথম তার সন্ধান পান। এ কাজে বিমল কান্তিকে সহায়তা করেন কুড়িগ্রামের রাজীবপুর কলেজের অধ্যাপক আবদুস সবুর ফারুকী।

এরপর নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা কয়েকটি সংগঠন তাকে ঢাকায় নিয়ে আসে। সেই সময় তাকে নিয়ে পত্রিকায় প্রচুর লেখালেখি হয়। অবশেষে ১৯৯৫ সালের ১৯ ডিসেম্বর তৎকালীন সরকার এক অনাড়ম্বর পরিবেশে আনুষ্ঠানিকভাবে তারামন বিবিকে বীরত্বের পুরস্কার তার হাতে তুলে দেন।

তারামন বিবিকে নিয়ে আনিসুল হকের লেখা ‘বীর প্রতীকের খোঁজে’ নামক একটি বই রয়েছে। আনিসুল হক রচিত ‘করিমন বেওয়া’ নামক একটি বাংলা নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র ছিলেন তারামন বিবি।

তারামন বিবির স্বামীর নাম আবদুল মজিদ। এই দম্পতির এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ২০১৮ সালে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি কুড়িগ্রামের রাজিবপুরে স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন।

মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাড়িতে কোরআনখানি এবং মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারামন বিবির ছেলে আবু তাহের। এ ছাড়া জেলা শহরের ব্যাপারীপাড়ায় অবস্থিত উত্তরবঙ্গ জাদুঘরের আয়োজনে সন্ধ্যায় জাদুঘর চত্বরে মোমবাতি প্রজ্বালন ও স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা এস এম আব্রাহাম লিংকন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর