এইডসের ঝুঁকিতে দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর ৫ হাজার মানুষ

, জাতীয়

সোহেল মিয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজবাড়ী | 2023-09-01 23:03:43

আজ বিশ্ব এইডস দিবস। এ উপলক্ষে সারাবিশ্বে পালন করা হচ্ছে নানা জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও পালন করা হবে দিবসটি। তুলনামূলকভাবে অন্যান্য দেশের থেকে বাংলাদেশে এইডসে আক্রান্তের হার অনেক কম হলেও চরম ঝুঁকিতে রয়েছে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর প্রায় পাঁচ হাজার বাসিন্দা। সেই সঙ্গে ঝুঁকিতে রয়েছে পল্লীতে আসা খদ্দেররা। অবাধ মেলামেশার জন্য যৌনকর্মী ও খদ্দেররা সহজেই এইডস রোগে আক্রান্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ।

দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখানে আসা খদ্দেরসহ পল্লীর পাঁচ হাজার যৌনকর্মী ও বাসিন্দারা মরণব্যাধি এইডসের ঝুঁকির মুখে রয়েছে। দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা থেকে আসা ট্রাক চালকসহ প্রতিদিন কয়েক হাজার খদ্দের এখানে প্রবেশ করেন।

পল্লীর একাধিক সূত্র জানায়, এখানে আসা বেশির ভাগ খদ্দেরই দৈহিক মিলনে কনডম ব্যবহারে অনাগ্রহী প্রকাশ করে থাকে। খদ্দেরদের ইচ্ছাপূরণ ও অধিক টাকার আশায় এখানকার যৌনকর্মীরারও প্রতিনিয়ত অনিরাপদ যৌন মিলন করে থাকে। তবে যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করা একটি বেসরকারি সংগঠনের দাবি এখানে প্রতি মাসে যৌনকর্মীদের মাঝে প্রায় দেড় থেকে পৌনে দুই লাখ কনডম বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়।

খদ্দেরের অপেক্ষায় যৌনকর্মীরা

জানা যায়, যৌনপল্লীতে তালিকাভুক্ত যৌনকর্মীর সংখ্যা ১ হাজার ৫২৬ জন, তাদের বাবুর সংখ্যা ৫৬২ জন, বাড়িওয়ালি ২৮১ এবং যৌনজীবীদের শিশুর সংখ্যা ৬৫৩ জন। এর বাইরেও বয়স্ক নারী ও ব্যবসায়ী মিলে আরও প্রায় ২ হাজার মানুষের বসবাস এ পল্লীতে। অর্থাৎ যৌনপল্লীর প্রায় ৫ হাজার বাসিন্দা যারা প্রত্যেকেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এইচআইভি এইডসসহ নানাবিধ যৌনরোগের চরম ঝুঁকিতে রয়েছে।

সরেজমিন যৌনপল্লীর বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন কয়েক হাজার পুরুষ এ পল্লীতে যাতায়াত করে। এর মধ্যে স্কুলছাত্র থেকে শুরু করে বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে আসা ট্রাকচালকরাও রয়েছে। যার বেশির ভাগ লোকজন দৈহিক মিলনে কনডম ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনাগ্রহী। খদ্দেরের ইচ্ছা ও বেশি টাকার লোভে অনেক মেয়েই প্রতিনিয়ত অনিরাপদ মিলন করে থাকে। এ ছাড়া পল্লীর বহু মেয়ে দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্ত। তাদের আয়-রোজগার কম। নেশার টাকা যোগানো, খাবার ও ঘর ভাড়ার টাকা যোগাতে এ সকল মেয়েরা দৈহিক মিলনে নিজেদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করার সুযোগ পায় না।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কিছু মেয়ে রয়েছে বাড়িওয়ালিদের কাছে জিম্মি। যার ফলে দৈহিক মিলনে এদেরও নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভাবার সুযোগ নেই। এছাড়া করোনা পরিস্থিতির কারণে পল্লীতে খদ্দের আসা কমে যাওয়ায় যৌনকর্মীরা যে কোনও উপায়ে খদ্দের টানতে মরিয়া থাকে। অর্থাৎ অবাধ যৌনতার কারণে দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে এইচআইভি এইডস আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশি।

 দৌলতদিয়া যৌনপল্লী

বেসরকারি সংগঠন পায়াক্ট বাংলাদেশ দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক মজিবর রহমান জুয়েল জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে তারা এখানে এইচআইভি এইডস বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করছেন। পাশাপাশি তারা ২ জন অভিজ্ঞ মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টের (কাউন্সিলর) মাধ্যমে নানাবিধ যৌনরোগ শনাক্ত এবং বিনামূল্যে ঔষুধ ও চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। কর্মসূচির অংশ হিসেবে তারা প্রতি মাসে যৌনজীবীদের মাঝে প্রায় দেড় থেকে পৌনে ২ লাখ কনডম বিনামূল্যে বিতরণ করছেন। সচেতনতা বাড়াতে পল্লীতে তাদের নারী কর্মী বাহিনী প্রতিদিন উঠান বৈঠক, আলোচনা সভা, পোস্টার ও লিফলেট বিতরণ করছেন। তবে যৌনজীবীদের নানাবিধ ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে তাদের এ কর্মসূচিগুলোর সুফল পেতে বেগ পেতে হচ্ছে।

যৌনকর্মীদের সংগঠন ‘অসহায় নারী ঐক্য’র সভাপতি ঝুমুর আক্তার বার্তা২৪.কম-কে বলেন, প্রায় ১০-১১ বছর আগে সর্বশেষ এই পল্লীতে এইডস রোগী শনাক্তের জন্যে আইসিডিডিআরবি যৌনকর্মীদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেছিল। তার ফলাফল এখনো আমরা জানি না। বৃহত্তর স্বার্থে এইচআইভি এবং এইডস আক্রান্ত শনাক্ত করার জন্য নিয়মিত রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করা খুবই জরুরি।

গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আসিফ মাহমুদ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, দৌলতদিয়া দেশের বৃহত্তর একটি যৌনপল্লী। এখানকার যৌনকর্মী ও খদ্দেররা মারাত্মক এইডস ঝুঁকিতে রয়েছেন। এখানে সবাইকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। সচেতন না হলে সারাদেশ ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

এইডস ও অন্যান্য যৌন রোগের ঝুঁকি কমাতে বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য বিভাগ এ পল্লীতে নানাবিধ কাজ করছে। তাদের কাজের নিয়মিত মনিটরিং ছাড়াও জটিল এবং সন্দেহজনক রোগীদের ক্ষেত্রে তারা চিকিৎসা ও পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর