সিনিয়র পাইলট ও বাপা সভাপতি মাহবুবকে চাকরিচ্যুত করল বিমান

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-30 14:57:47

বাংলাদেশ বিমান পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সভাপতি ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সিনিয়র পাইলট ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমানকে চাকরিচ্যুত করেছে বিমান। ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান বোয়িং-৭৮৭ এর পাইলট ছিলেন।

বিমানের কার্যক্রম পরিচালনায় পাইলটদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে আন্দোলন করেছিল পাইলটরা। সেটির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান। তবে ঠিক কী কারণে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে সেটি সুনির্দিষ্ট করে বলা হয়নি।

গত ২৯ নভেম্বর এক চিঠিতে ক্যাপ্টেন মাহবুবকে চাকুরিচ্যুত করা হয়। তবে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে মঙ্গলবার।

গত ২৮ নভেম্বর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ২৬৫তম বোর্ড সভায় মাহবুবুরের বিরুদ্ধে বিমানের কার্যক্রম পরিচালনায় বাধা সৃষ্টির অভিযোগ আনা হয়। সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ক্ষমতা প্রদান করা হয়। এর একদিন পরেই বাপা সভাপতিকে চাকুরিচ্যুত করার চিঠি দেয়া হয়।

চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের আর্টিকেল ৫৯(বি) অনুযায়ী বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল এই চাকরিচ্যুতির আদেশ দিয়েছেন।’

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ক্যাপ্টেন মাহবুব বিমানে চাকরি করোনাকালীন কোনো পাওনা থাকলে সেগুলো পরিশোধসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে। অবিলম্বে এ আদেশ কার্যকর করতে বিমানের অ্যাডমিন শাখাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, ক্যাপ্টেন মাহবুবের চাকরিচ্যুতির ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। আতঙ্ক নেমে এসেছে পাইলটদের মধ্যে। জানা গেছে, চাকরিচ্যুতির তালিকায় নাম আছে বাপার একাধিক পাইলটের। এ ঘটনায় বিকালে জরুরি বৈঠক ডাকে বাপা নির্বাহী কমিটি। শুধু বিমানের ফ্লাইট অপারেশন শাখাই নয়, এ ঘটনায় বিমানের সব বিভাগেই কর্মচারী-কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

পাইলটরা বলেছেন, এ ঘটনায় বিমানের সব ধরনের ফ্লাইট চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে। কারণ এরকম আতঙ্ক নিয়ে যেকোনো পাইলটের পক্ষে ফ্লাইট পরিচালনা বড় ঝুঁকিপূর্ণ।

এর আগে, ২০২০ সালের মে মাস থেকে বিমানের পাইলটদের তাদের বেতন ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কাটার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তবে ২০২১ সালের ১৩ জুলাই বিমানের পরিচালক (প্রশাসন) জিয়াউদ্দীন আহমেদের একটি অফিস আদেশে সংস্থাটির সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন কর্তনের সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়। কিন্তু পাইলটদের বেতন কাটার বিষয়টি বহাল থাকে। এরপর থেকেই ক্ষুব্ধ হন পাইলটরা।

বেতন সমন্বয় না করায় পাইলটরা মাসে ৭৫ ঘণ্টার বেশি ফ্লাই করবেন না বলে এর আগে আলটিমেটাম দিয়েছিলেন। পাইলটরা বলেছেন, বারবার আন্দোলন করার পরও বিমান ম্যানেজমেন্ট তাদের দাবি পূরণ করছে না। এ কারণে তারা মাসে ৭৫ ঘণ্টার বেশি ফ্লাইট এবং ৮ দিনের কম ডে-অফ নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন।

তাদের অভিযোগ ছিল, করোনাভাইরাসের কারণে অর্থ সাশ্রয় করতে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ হারে পাইলটদের বেতন কর্তনের যে সিদ্ধান্ত ছিল কর্তৃপক্ষ সেটি সমন্বয় করেছে। কিন্তু ওভারসিস অ্যালাউন্স উড্ডয়ন ঘণ্টার অনুপাতিক হারে প্রদানের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সেটি বাতিল করেনি। অথচ ওভারসিস অ্যালাউন্স তাদের মূল বেতনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

এটি উড্ডয়ন ঘণ্টার আনুপাতিক হারে বণ্টন সম্পূর্ণ অবৈধ। এটা করতে গিয়ে জুনিয়ন পাইলটদের ৪৮ শতাংশ এবং সিনিয়র পাইলটদের মূল বেতনের ২২ শতাংশ কমে গেছে। বেশ কিছু দিন ধরে বাপা সভাপতি হিসাবে ক্যাপ্টেন মাহবুব এ নিয়ে আন্দোলন করে আসছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, এর জেরেই এ চাকরিচ্যুতির আদেশ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে বিমানের কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে মন্তব্য করেনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর