নওগাঁয় বেড়েছে চিকন চালের দাম, কমেছে মোটা চালের দাম

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ | 2023-09-01 06:16:43

ধান-চালের ভান্ডার হিসেবে খ্যাত উত্তরের জেলা নওগাঁ। এই জেলায় ভরা মৌসুমেও বেড়েছে চালের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে জিরা, কাটারি, বিআর-২৮ ও বিআর-২৯ চালের সরবরাহ কমে যাওয়ায় সরু ও মাঝারি চালের দাম বেড়েছে। শম্পা কাটারি জাতের চাল এক সপ্তাহ আগে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছিল, তা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৪ টাকায়। তবে মোটা জাতের স্বর্ণা চালের দাম কেজিতে ৩ টাকা পর্যন্ত কমে এখন ৪৪ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে  এমন পরিস্থিতিতে চরম কষ্টে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। বাজার থেকে চড়া দামে চাল কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। ভরা মৌসুমেও এমন দর বৃদ্ধিতে হতাশ তারা।

সোমবার (৬ ডিসেম্বর) নওগাঁ শহরের আলুপট্টি এলাকায় চালের মোকামে বিভিন্ন আড়তে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক সপ্তাহ আগে যে স্বর্ণা-৫ ও গুটি স্বর্ণা জাতের চালের বস্তা (৫০ কেজি) বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ১৫০ টাকায়, তা এখন ২ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর সরু চালের (মিনিকেট ও শম্পা কাটারি) দাম বস্তাপ্রতি ২০০ টাকা বেড়ে ৩ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিআর-২৮ ও বিআর-২৯ জাতের চাল বস্তাপ্রতি ১০০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে আমন মৌসুমের ধান স্বর্ণা-৫ ও গুটি স্বর্ণা ধানের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় এসব ধানের দাম পড়ে গেছে। ফলে মোটা চালের দাম কমেছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে মোটা চালের দাম আরও কমতে পারে বলে জানা গেছে।  অন্যদিকে বোরো মৌসুমের জিরা, কাটারি, বিআর-২৮ ও বিআর-২৯ চালের সরবরাহ কমে যাওয়ায় সরু ও মাঝারি চালের দাম বেড়েছে। সরু ও মাঝারি জাতের চালের দাম আর কমার সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছেন মিলমালিক ও খুচরা ব্যবসায়ীরা।

নওগাঁ শহরের পৌর বাজার খুচরা চাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি উত্তম কুমার সরকার জানান, মোকাম থেকেই সরু ও মাঝারি চাল বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। তাই সরু ও মাঝারি জাতের চাল বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বিক্রেতাদের চালের দাম বাড়ানো বা কমানোর কোন সুযোগ নেই। আমরা যারা খুচরা চাল বিক্রেতা আছি। তারা পাইকারী চাল ক্রয় করে কেজি প্রতি সামান্য কিছু লাভ করে বিক্রি করে থাকি। চালের বাজার মাঝে মধ্যেই উঠা নামা করে।

নওগাঁ সদর উপজেলার পিরোজপুরের মের্সাস জাহেরা রাইস মিলের মালিক এনামুল হক বলেন, গত ৫-৭ দিন ধরে নতুন ধানের (স্বর্ণা-৫ ও গুটি স্বর্ণা) দাম কমতে শুরু করেছে। যেসব জেলায় বড় বড় আড়ত আছে, সেখানেও ধানের দাম কমতির দিকে। প্রতি মণ ধানের দাম আগের চেয়ে ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। বর্তমানে নওগাঁর বাজারে প্রতি মণ স্বর্ণা-৫ ও গুটি স্বর্ণা ধান ১ হাজার ১০-১ হাজার ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ধানের দাম কমে যাওয়ায় উৎপাদন খরচেও হেরফের হচ্ছে। এ কারণে মোটা চালের দাম কমিয়েছেন মিলের মালিকেরা বলে তার দাবি।

চৌমসিয়া এলাকার টুম্পা রাইস মিলের মালিক শাহদত হোসেন বলেন, বোরো মৌসুমে জিরা ও কাটারি ধানের সরবরাহ এখন বাজারে নেই বললেই চলে। তবে বাজারে সরু ও মাঝারি চাল হিসেবে পরিচিত জিরা ও কাটারি জাতের চালের চাহিদা রয়েছে প্রচুর। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় মিল মালিক ও খুচরা ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।

নওগাঁ শহরের সুলতানপুরের শেখ রাইস মিলের মালিক ফরিদ উদ্দিন বলেন, খুচরা ব্যবসায়ীদের এমন অভিযোগের কোনো মানে নেই। মোকামে গত ২০ দিন চালের দাম বাড়তি হয়নি। বাড়তি সুবিধা নিতেই সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়েছে খুচরা ব্যবসায়ীরা। এমন পরিস্থিতে দাম বাড়ার কারণ খতিয়ে দেখতে বিভাগের জেলাগুলোতে মনিটরিং জোরদার করেছে খাদ্য বিভাগ। 

রাজশাহী বিভাগীয় খাদ্য কর্মকর্তা জিএম ফারুখ হোসেন পাটওয়ারী জানান, বাজারে ধান এবং চালের দাম নিয়ন্ত্রণ রাখতে আমাদের সব রকম চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। কোনোভাবেই যেন অসাধু ব্যবসায়ী বাজার অস্থির করতে না পারে এ বিষয়ে খাদ্য কর্মকর্তা নিয়মিত মনিটরিং করছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর