কাঁটাতার আটকে দিল বাবার আদর

রংপুর, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-25 07:35:43

মেয়ের বিয়ের ৪২ বছর পর তাকে দেখতে পেয়ে চোখে অশ্রু ধরে রাখতে পারেনি বৃদ্ধ বাবা শ্যামা বর্মণ (৮৮)। যদিও মেয়েকে দেখে বাবার তৃপ্তি হয়নি। কারণ কাঁটাতারের বেড়ার কারণে তারা পরস্পরকে ছুঁতে পারেনি। তবে দূর থেকে দাঁড়িয়ে প্রায় আধাঘণ্টা কথা বলেছে তারা।

পরে বৃদ্ধ বাবা শ্যামা বর্মণ আক্ষেপ করে বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘৪২ বছর পর মেয়েকে দেখতে পেলাম। কিন্তু কাঁটাতারের বেড়ার কারণে আদর করতে পারলাম না। মাত্র আধাঘণ্টা কথা বলেছি। পরে বিজিবি বলল সময় শেষ। তখন মেয়ে ও জামাইর উদ্দেশে চিৎকার করে বলেছি এটাই হয়ত আমাদের মধ্যে শেষ দেখা। ভালো থেকো তোমরা।’

বৃদ্ধ শ্যামা বর্মণ থাকেন নীলফামারীর ডোমারের ভোগডাবুড়ি গ্রামে। অল্প বয়সে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন ভারতে। এরপর কেটে গেছে ৪২ বছর। এই সময়ের মধ্যে কাঁটাতারের বেড়ার কারণে বাবা-মেয়ের মধ্যে আর দেখা হয়নি। তবে দীর্ঘদিন পরে আজ দেখা হলেও কাছে আসতে পারেনি তারা। তাই আক্ষেপ বাবার। শেষ বয়সে আর হয়ত দেখা হবে না তাদের। মেয়ের জন্য তিনি একটি শাড়ি ও তিনটি মাঝারি সাইজের ইলিশ নিয়ে এসেছিলেন।

মূলত বুধবার (৭ নভেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে এপার-ওপার বাংলার লাখো মানুষের ঢল নেমেছিল লালমনিরহাটের পাটগ্রাম আলাউদ্দিন নগর সীমান্তে। এই মিলনমেলা চলে বিকেল ২টা পর্যন্ত। দীর্ঘ ৬ কিলোমিটার সীমান্তজুড়ে নারী-পুরুষ-শিশু-বৃদ্ধের আনন্দের অশ্রুধারায় আবেগাপ্লুত হয়ে উঠেছিল ওই এলাকা।

সীমান্তে ওই সময় ধনির উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি তার বোনের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। তিনি বলেন, ‘৩০ বছর পর আজ বোনটাকে দেখতে পেলাম।’

ভোগডাবুড়ি গ্রামের ৭০ বছরের বৃদ্ধ মনি শীলের সঙ্গে প্রায় ২০ বছর পর দেখা হয় ভারতের হলদিবাড়ির প্রধানপাড়ায় বসবাসরত ছোট বোন অনিমা শীলের। কাঁটাতারের বেড়ার ফাঁকে দাঁড়িয়ে দুই ভাই-বোনের কান্নার আহাজারি ছিল খুবই হৃদয়বিদারক। বাংলাদেশে বসবাসকৃত ওই ভাই বিএসএফের মাধ্যমে বোনকে দেশীয় ছোট মাছ দিয়েছেন। অপরদিকে বোন অনিমা তার ভাইকে দিয়েছেন শার্ট-লুঙ্গি।

একইভাবে অনেকেই উপহার হিসাবে তাঁরকাটার উপর দিয়ে স্বজনদের ইলিশ মাছ, শাড়ি-কাপড়, কমলা, আপেল, বিস্কুট, চানাচুর দিয়েছেন। এ সময় তাঁরকাটার এপারে দাঁড়িয়ে ওপারে স্বজনদের দেখা আর কথা বলার সুযোগ পেলেও কেউ কাউকে ছুঁতে পারেনি। এই মিলন মেলায় শুধু নীলফামারী জেলা নয়, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, রংপুর, লালমনিরহাটের মানুষজনও এসেছিল।

বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বিজিবি ও ভারতের সীমান্তরক্ষী বিএসএফ সূত্র জানায়, বিলুপ্ত ছিটমহলের ৪৭৮ জন ভারতে চলে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই দুই বাংলায় বসবাসকৃত মানুষজন যাতে পরস্পরের সঙ্গে দেখা করতে পারে তার জন্য এই মিলনমেলার আয়োজন করা হয়েছিল।

এ সম্পর্কিত আরও খবর