বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফের জন্মভিটার বেহাল দশা

, জাতীয়

সোহেল মিয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজবাড়ী | 2023-09-01 09:53:46

বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফের জন্মভিটা রক্ষণা-বেক্ষণের জোড় দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফের জন্মভিটা এখন জরাজীর্ণ ও বসবাসের অনুপযোগী। যে জায়গার আলো-বাতাসে বেড়ে উঠেছে জাতির এই সূর্য সন্তান সেই জায়গাটি এখন অবহেলিত। অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে রয়েছে ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনের পর তৎকালীন সরকারের তুলে দেওয়া পাকা ঘরটি।

বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফের বাস্তুভিটাটি সংরক্ষণ করে তার স্মৃতি ধরে রাখার জন্য এখানকার পরিত্যক্ত ঘরটি দ্রুত সংরক্ষণ করবেন প্রশাসন এমনটাই প্রত্যাশা করছেন এলাকাবাসী। তাদের দাবি- পরিত্যক্ত ঘরটির জায়গাতেই শৈশব-কৈশোর কেটেছে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফের। তাই তার স্মৃতি রক্ষার্থে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে এখানেই করা উচিত।


এলাকাবাসীর এই দাবির প্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রশাসন বলছেন- বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফের স্মৃতি সরক্ষার্থে ইতিমধ্যে সরকার বেশ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। মহান এই শহিদের নামে এখানে একটি স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। তবে যে বাড়িটিতে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফের শৈশব কেটেছে সেই বাড়িটি বাউন্ডারিসহ পরিমার্জিত ও সুরক্ষা করা হবে।

বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) সরোজমিন ফরিদপুরের মধুখালীর কামারখালী ইউনিয়নের সালামতপুর (রউফ নগর) গিয়ে দেখা যায়, যেখানে শৈশব-কৈশোর কেটেছে এই বীর সন্তানের সেখানে তার স্মৃতি হিসাবে ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনের পর একটি পাকা ঘর নির্মাণ করে দেন তৎকালিন সরকার। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এই ঘরটি এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। লতা-পাতা আর আবর্জনায় ছেঁয়ে গেছে ঘরটি। ঘরের ছাদ থেকে খসে পড়ছে পলেস্তার। দরজা-জানালাও ভাঙা। ঘরের মধ্যে ময়লা আর আবর্জনায় ভরা।


স্থানীয়বাসিন্দা মো: হামিদুর রহমান চুন্নু মিয়া বার্তা২৪.কমকে বলেন, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফের স্মৃতি রক্ষার্থে সরকার এই গ্রামে একটি স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠিত করেছেন। দর্শনার্থীরা এখানে এসে যখন তার বাড়ি দেখতে যান তখন আর কিছুই খুঁজে পায় না। একটি ভাঙা বিল্ডিং ছাড়া। আমরা চাই- সরকার যেন বীরশ্রেষ্ঠ আব্দুর রউফের স্মৃতি বিজড়িত এই বিল্ডিংটি মেরামত করে এখানে একটি মিউজিয়াম তৈরি করেন।

বীরশ্রেষ্ঠ আব্দুর রউফের সহপাঠি মো: খবির হোসেন মোল্লা বার্তা২৪.কমকে বলেন, যেখানে আব্দুর রউফের জরাজীর্ণ বসত ঘরটি দেখতে পাচ্ছেন এটাই তার স্মৃতি বিজড়িত জায়গা। এই বাড়ির চারিপাশ দিয়েই তার ছোটাছুটি। পাশে যে মধুমতি নদী দেখতে পাচ্ছেন এই নদীটিতেই সেই ঝাঁপিয়ে বেড়াত। আমরা চাই- সরকার যেন এই বসত ভিটাতে একটি সুন্দর ঘর নির্মাণ করে তার স্মৃতি রক্ষায় এগিয়ে আসেন।


বীরশ্রেষ্ঠ আব্দুর রউফের ভাগ্নে মো: হায়দার মিয়া (৩৫) বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমার মামা বীরশ্রেষ্ঠ আব্দুর রউফের রক্তের সম্পর্কের মধ্যে তার দুই বোন জহুরা বেগম (৬৫) ও হাজেরা বেগমই (৬২) এখন জীবিত রয়েছেন। বিজয় দিবস উপলক্ষে বর্তমান এই দুজনকে সরকার ঢাকাতে নিয়ে গেছেন। আমাদের নিজেদের থাকার ঘরটিও ভালো না। আবার সরকার আমার নানী বেঁচে থাকার সময় যে ঘরটি তুলে দিয়েছিলেন সেটিও এখন বেহাত। তাই আমরা চাই বীরশ্রেষ্ঠ আব্দুর রউফ যেখানে থাকতেন সেই জায়গাটি যেন সরকার রক্ষণা-বেক্ষণ করে তার স্মৃতি ধরে রাখেন।

মধুখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: আশিকুর রহমান চৌধুরী বার্তা২৪.কমকে বলেন, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফের বসতভিটাটি সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয় এরই মধ্যে মধুমতি নদীর ভাঙন থেকে স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগারটি রক্ষা করতে এলাকা পরিদর্শন করেছেন। বীরশ্রেষ্ঠ আব্দুর রউফের স্মৃতি বিজড়িত বসতভিটাটি বাউন্ডারিসহ পরিমার্জিত ও সুরক্ষা করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর