বাণিজ্য মেলার উদ্বোধনের বাকি চার দিন, প্রস্তুত হয়নি স্টল

, জাতীয়

আরমান হেকিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-30 23:16:05

করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ায় এক বছর পর পূর্বাচলে স্থায়ী ভবনে বসছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা-২০২২। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ১ জানুয়ারি (শনিবার) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) মাসব‍্যাপী এই মেলার উদ্বোধন করবেন।

উদ্বোধনের আর মাত্র চারদিন বাকি থাকলেও মেলার কোন অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হয়নি। এখনও চলছে পুরোদমে কর্মযজ্ঞ। তবে মেলার দায়িত্বে থাকা রফতানি উন্নয়ন ব‍্যুরো (ইপিবি) বলছে, প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে।

মেলার প্রধান ফটক

সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) সরেজমিনে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, মেলার মূল আকর্ষণ প্রধান ফটক ও ভেতরে প্রবেশদ্বারে ৫টি মেগা প্রকল্পের কাঠামো ও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি তৈরির কাজ এখনও চলছে। এছাড়া মেলার ভেতরের রাস্তার নির্মাণ কাজ, সেন্টারের ভেতরে বঙ্গবন্ধু কর্নার ও কোনও স্টল তৈরির কাজ এখনও শেষ হয়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উদ্বোধন পর্যন্ত অনেক কাজ অসমাপ্তই থেকে যাবে।

ইপিবি সচিব ও বাণিজ্য মেলার পরিচালক মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বার্তা২৪.কম-কে বলেন, আমরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে চেষ্টা করছি। প্রতিবারই মেলা উদ্বোধনের আগে আমরা কাজ শেষ করতে পারি। এবারও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষের পর উদ্বোধন করা হবে। এবার মেলায় প্রবেশের জন্য ৪০ টাকা এন্ট্রি ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।

স্টল তৈরির কাজ চলছে

বগুড়া থেকে মেলায় কাজ করতে আসা কাঠমিস্ত্রী রফিক মিয়া বলেন, সকাল ৯টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত টানা কাজ করছি। ১১টার পরও কয়েকজন কাজ করেন। আমরা চেষ্টা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ‍্যে স্টল তৈরি করতে। তবে শেষ করতে পারব কিনা বলতে পারছি না।

এক্সিবিশন সেন্টারের সামনের ফাঁকা জায়গায় মেগা প্রকল্পের অবকাঠামো নির্মাণের কাজ করছেন সোহেল মিয়া ও জব্বার। তারা বলেন, ১ জানুয়ারির আগে কাজ কোনও ভাবেই শেষ করতে পারব না। কারণ ইট-সিমেন্ট জোড়া না লাগলে তার ওপর নতুন করে কাজ করা যায় না। জোড়া লাগতে কিছুটা সময় নেয়। তাই আমরা অনেক চেষ্টা করলেও চারদিনের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারব না।

ক্যাফেটেরিয়া

মেলায় দর্শনার্থীদের যাতায়াত সুবিধার্থে কুড়িল ফ্লাইওভারের নিচ থেকে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ৩০টি বিআরটিসি বাস চলাচল করবে।ন্যূনতম ভাড়া হতে পারে ২০ থেকে ২৫ টাকা। ৩০ থেকে ৪০ মিনিটের মধ্যে পৌঁছানো যাবে।

এ বিষয়ে বাণিজ্য মেলার পরিচালক মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে আমরা বিআরটিসিকে চিঠি দিয়েছি তারা সাড়া দিয়েছে। প্রাথমিকভাবে রাস্তার দুই পাশে ১৫টি করে মোট ৩০টি বাস চলাচল করবে। যদি দর্শনার্থীর চাপ সামাল দিতে কষ্ট হয় তাহলে প্রয়োজন সাপেক্ষে আরও বাস বাড়ানো হবে।

রাস্তা নির্মাণ কাজের অগ্রগতির বিষয়ে তিনি বলেন, মোট ১২ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে ১০ কিলোমিটার ডিসেম্বরের মধ্যেই সম্পন্ন হবে। দুই লেন করে দুই পাশে চার লেন ক্লিয়ার থাকবে। কোনো কোনো জায়গায় হয়তো বেশিও থাকবে। এখনই অনেক জায়গায় প্রধান সড়ক দিয়ে চলাচল করা যাচ্ছে। সড়কের কাজ শেষ হলে এখন যে সময় লাগে তখন আর সে সময় লাগবে না। ৩০ থেকে ৪০ মিনিটের মধ্যে পৌঁছানো যাবে।

এবার মেলার কেন্দ্রের ভেতরে ও সামনের ফাঁকা জায়গা মিলে ২২৫টি স্টল থাকবে। এরমধ্যে প্রিমিয়ার ও মিনি প্যাভিলিয়ন থাকবে ৫০টি, জেনারেল স্টল, ফুড কোড, মিনি স্টল, প্রিমিয়ার স্টল ১৫৪টি এবং ইউটিলিটি বুথ রাখা হয়েছে ২০-২২টি।

ইপিবির সহকারি পরিচালক (প্রশাসন) ও বাণিজ্য মেলার দফতর সম্পাদক মোহাম্মদ আ. হালিম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, এবার মেলায় ১০টি বিদেশি স্টল অংশ নিচ্ছে। গত মেলায় বিদেশি স্টল ছিল ২৭টি। করোনার কারণে এ বছর বিদেশি স্টল কমেছে।

মেলার চারদিন বাকি এখনও চলছে স্টল তৈরির কাজ

মেলায় ৮টি ব্যাংকের বুথ রয়েছে। ইতিমধ্যে ইসলামী ব্যাংকসহ ৫টি ব্যাংকের বুথ স্থাপন হয়েছে। দর্শনার্থীদের খাবারের জন‍্য কেন্দ্রের ভেতরে একটি ক্যাফেটেরিয়া রয়েছে। সেখানে একসঙ্গে ৫০০ লোক বসে খাবার খেতে পারবে। আরও ১২-১৩টি ফুড কোড থাকবে মেলা প্রাঙ্গণে।

দর্শনার্থীদের গাড়ি রাখার জন‍্য সাত হাজার ৯১২ বর্গমিটার প্রস্থের দোতলা পার্কিং বিল্ডিং রয়েছে। যেখানে ৫০০টি গাড়ি রাখা যাবে। এছাড়া রাজউকের পানির প্ল্যান্ট ভাড়া নেওয়া হয়েছে। সেখানে এক হাজার গাড়ি পার্কিং হবে এবং এক্সিবিশন বিল্ডিংয়ের সামনের খোলা জায়গায় আরও এক হাজার গাড়ি পার্কিং করার সুযোগ আছে।

উল্লেখ্য, ঢাকার শেরেবাংলা নগরে ১৯৯৫ সাল থেকে অস্থায়ী জায়গায় বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল। প্রতিবছর জানুয়ারির ১ তারিখ প্রধানমন্ত্রী এ মেলার উদ্বোধন করেন। করোনার কারণে চলতি বছর বাণিজ্য মেলা হয়নি। গত ৭ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির কাছে ৭৭৩ কোটি টাকা ব‍্যয়ে নির্মিত বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার হস্তান্তর করেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। পরে ২১ অক্টোবর প্রদর্শনী কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক্সিবিশন সেন্টারে তৈরি করা ফ্লোরের আয়তন ৩৩ হাজার বর্গমিটার, বিল্ডিংয়ের ফ্লোরের আয়তন ২৪ হাজার ৩৭০ বর্গমিটার, এক্সিবিশন হলের আয়তন ১৫ হাজার ৪১৮ বর্গমিটার।

এ সম্পর্কিত আরও খবর