করোনা, নতুন স্থান- বাণিজ্যমেলার জন্য চ্যালেঞ্জ!

, জাতীয়

সুলতান মাহমুদ আরিফ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-26 21:49:38

নতুন বছরে নতুন সাজে পর্দা উঠেছে মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৬তম আসরের। এবারের মেলা সম্পূর্ণ ভিন্ন এক পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কারণ করোনা পরিস্থিতি আর নতুন স্থানে বাণিজ্যমেলা, যা নতুন চ্যালেঞ্জ।

মেলা শুরুর তৃতীয় দিন সোমবার (৩ জানুয়ারি) সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মেলার স্টলগুলো এখনও অনেকটাই অপ্রস্তুত। স্টল তৈরিতে ব্যস্ত শ্রমিকেরা।

মেলা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রাজধানী থেকে দূরে হওয়াতে এবার মেলায় এখনও লোকসংখ্যা কম। তবে দিন যত যাবে মেলায় দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়বে বলে আশা করছি।

এদিকে, গত কয়েকদিন ধরেই দেশে আবারও বাড়তে শুরু করেছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। গত এক সপ্তাহে তার আগের সপ্তাহের তুলনায় করোনা সংক্রমণ বেড়েছে ৬০ শতাংশ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

পূর্বাচলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা

গত বছর করোনার কারণে মেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। ফের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় এবারও অনেকে মনে করছেন মেলা মাঝপথে বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

আগত দর্শনার্থীরা রাজধানীর অদূরে যানজটহীন এলাকায় বাণিজ্যমেলা হওয়াতে স্বস্তি প্রকাশ করলেও অস্বস্তি প্রকাশ করছেন যাতায়াত ব্যবস্থা নিয়ে।

জানা যায়, সাধারণ দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে কুড়িল থেকে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত বিআরটিসি ডেডিকেটেড সার্ভিসের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড থেকে বাণিজ্য মেলা পর্যন্ত ৩০টি স্পেশাল বাস চলবে। ভাড়া জনপ্রতি ৩০ টাকা। মতিঝিল ও মিরপুর থেকে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত বিআরটিসি বাস চলবে।

মতিঝিল থেকে আসা মো. সালমান বলেন, আমি আমার পরিবারসহ মেলায় এসেছি। এখানকার পরিবেশ ভাল হলেও যাতায়াত ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটছে। বিআরটিসি বাস নির্দিষ্ট সময়ে চলছে না। অভিযোগ বিআরটিসি বাস যাত্রী পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত না ছাড়াতে নির্দিষ্ট সময়ে মেলায় আসতে পারছেন না তারা।

বিআরটিসির একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা যাত্রীর জন্য অপেক্ষায় থাকি। যাত্রী পূর্ণ না হলে আমাদের আসা সম্ভব হয় না। যার কারণে মেলায় আসতে আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে।

স্টল তৈরির কাজ চলছে

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্যমেলার প্রকল্প কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন বার্তা২৪-কে বলেন, আমাদের সামান্য কিছু স্টলের কাজ এখনও বাকি আছে। তবে দু'একদিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। এছাড়া বিআরটিসি বাস সব সময় আসা যাওয়ার মাঝেই আছে, তবে মাঝে মাঝে যাত্রী পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত না আসার সমাধানও কিছুদিনের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে।

পার্কিং ব্যবস্থা নিয়েও রয়েছে দর্শনার্থীদের অভিযোগ। তারা বলছেন, গাড়ি ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। বাহিরে গাড়ি পার্কিং এ রয়েছে অনিশ্চয়তা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসমাইল হোসেন বলেন, যে পার্কিং রয়েছে সেটা ভিআইপিদের জন্য। তাছাড়া মেলার দায়িত্বে যারা রয়েছেন তারা সেখানে গাড়ি পার্কিং করবেন। সাধারণ মানুষের জন্য মেলার ডানপাশে জায়গা রাখা হয়েছে। সেটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদারকি করছে।

মেলায় দেশীয় বস্ত্র, পাট ও পাটজাত পণ্য, জুতা ও চামড়াজাত পণ্য, হস্তশিল্প পণ্য, কসমেটিক্স অ্যান্ড বিউটিএইডস, ইমিটেশন জুয়েলারি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, স্যানিটারিওয়্যার, খেলনাসহ নানাবিধ পণ্য প্রদর্শন করা হচ্ছে।

এবারের বাণিজ্যমেলায় থাকছে ১১টি প্রতিষ্ঠানের বিদেশি স্টল। পাকিস্তান, ভারত, ইরানসহ আশপাশের দেশগুলো থেকে আসবে ব্যবসায়ীরা। মেলায় বিভিন্ন ক্যাটাগরির মোট ২৩টি প্যাভিলিয়ন, ২৭টি মিনি প্যাভিলিয়ন, ১৬২টি স্টল এবং ১৫টি ফুড স্টল দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে থাকছে প্রায় ২২৭টি স্টল। যা অন্য বছরের তুলনায় অর্ধেক।

নারী উদ্যোক্তাদের স্টল

তাছাড়া মেলায় মুক্তিযুদ্ধ, মুজিববর্ষ, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণসহ বঙ্গবন্ধুর কীর্তি তুলে ধরার জন্য প্রতিবারের ন্যায় বানানো হয়েছে বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন।

মেলার আয়োজক সংস্থা ইপিবি সূত্র জানায়, মেলায় নিরাপত্তা বিবেচনায় এক্সিবিশন সেন্টারে বিল্ট ইন ১৬০টি সিসিটিভি থাকছে। অতিরিক্ত ৬০টি সিসিটিভি ক্যামেরা মেলা প্রাঙ্গণের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্থাপন করা হয়েছে। মেলার প্রবেশ গেটে পর্যাপ্ত আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া অগ্নিদুর্ঘটনা প্রতিরোধে মেলায় সার্বক্ষণিক ফায়ার ব্রিগেড নিয়োজিত আছে এখানে।

পুলিশ কন্ট্রোল রুম এডিশনাল এসপি লুনা বার্তা২৪.কম-কে বলেন, এখানে প্রায় ১ এক হাজার পুলিশ সদস্য নিয়োজিত আছে। মেলার ভিতরে-বাইরে সব জায়গায় আমাদের পুলিশ সদস্যরা রয়েছেন এবং যেকোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমাদের কন্ট্রোল রুম কাজ করছে। এছাড়া পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে প্রায় ২২টি সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে মেলাজুড়ে।

অপ্রস্তুত বাণিজ্যমেলা

পুলিশের পাশাপাশি আনসার এবং মেলার নির্দিষ্ট নিরাপত্তা রক্ষীরাও একযোগে কাজ করে যাচ্ছে।

নতুন স্থানে মেলা হওয়াতে একদিকে যেমন লোকসংখ্যা এখনও কম, আবার অন্যদিকে রাজধানী থেকে অনেকটা যানজটমুক্ত। আগারগাঁওয়ে মেলা হলে পুরো রাস্তা জুড়ে থাকে যানজট। এবার রাজধানীতে মেলা উপলক্ষে যানজটের সেই চিত্র নেই।

উল্লেখ্য, ১৯৯৫ সাল থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর যৌথ উদ্যোগে এই মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। তবে এবারই প্রথম স্থায়ী মেলা কমপ্লেক্সে মেলার আয়োজন করা হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর