শিক্ষা ক্ষেত্রে এখনও নানা ‘প্রতিবন্ধকতায়’ পিছিয়ে গ্রামের মেয়েরা

রাজশাহী, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪,কম | 2023-09-01 09:13:13

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা সদর লাইনপাড়া এলাকার জুঁথি। ছোট বেলা থেকেই লেখাপড়ায় অনেক ভালো। এইচএসসি পাশ করে রাজশাহীতে সরকারি নাসিং কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিল। ভর্তিও হয়ে এক বছর পড়েছিলেনও জুঁথি। কিন্তু এরপরে পরিবার থেকে খরচ বন্ধ করে দেয়া হয়। জুঁথিকে ফিরে আসতে হয়। কারণ পরের বছর জুঁথির ছোট ভাই এইচএসসি পাশ করেছে। ছেলেকে শহরে রেখে পড়াতে হবে।

পরিবারের পক্ষে দুইজনকে পড়ানো অনেকটা কষ্টের। তাই শেষ পর্যন্ত পরিবারের সিদ্ধান্তে জুঁথিকে ফিরে আসতে হয়। নাসিং শিক্ষায় জুথির পথ চলা থেমে যায়। পরে গ্রামের একটি কলেজে জুঁথি ডিগ্রিতে ভর্তি হয়।

উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে গ্রামের মেয়েরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কেউ আর্থিক অভাবে, কেউ সামাজিকতার কারণে ছেলেদের তুলনায় নারীরা পিছিয়ে পড়ছে। এতে, ছেলেদের তুলনায় গ্রামের মেয়েরা পিছিয়ে পড়ছে। উচ্চ শিক্ষায় ছেলেরা যতো বেশি এগিয়ে যাচ্ছে সে তুলনায় মেয়েরা এগিয়ে যেতে পারছে না।

সাম্প্রতিক সময়ে নারী শিক্ষার্থীরা অনেক এগিয়েছে। তবে উচ্চ শিক্ষার দিক থেকে ছেলেদের তুলনায় এখনো গ্রামের মেয়েরা অনেক পিছিয়ে আছে। প্রাথমিক শিক্ষায় সমানভাবে এগিয়ে গেলেও যতো উচ্চ শিক্ষার দিকে ধাবিত হয় ততোই যেনো গ্রামের নারীরা পিছিয়ে পড়তে থাকে। গ্রাম থেকে ছেলে শিক্ষার্থীরা যেভাবে উঠে আসে। ঠিক সেভাবে পেরে উঠে না মেয়েরা। আর্থিক, সামাজিকসহ নানান কারণে গ্রামের মেয়েরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছেন।

সাধারণত গ্রামে উচ্চশিক্ষার বিশেষ কোন ব্যবস্থা নেই। তাই এইচএসসি পাশ করে উচ্চ শিক্ষা নিতে গেলে শহরে আসা ছাড়া শিক্ষার্থীরাদের বিশেষ কোন সুযোগ নেই। শহরে আসতে গিয়ে পিছিয়ে পড়ে মেয়েরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোদাগাড়ী এলাকার দশম শ্রেণির এক ছাত্রী তার অভিমতে জানান, গ্রামের অনেক অভিভাবকের ধারণা মেয়েরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে কি হবে? তাই অনেক অভিভাবক এসএসসি পাস করার আগেই বিয়ে দিয়ে দেয়। আবার কেউ এসএসসি বা এইচএসসি পাস করলেও ডিগ্রি পর্যন্ত এগুতে পারে না। নিরাপত্তার অভিযোগ তুলে বেশিরভাগ মেয়েদের পড়ালেখা বন্ধ অথবা বিয়ে দিয়ে দেয়া হয়।

নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলা সদর এলাকার শিক্ষক নুর আলম সুমন জানান, আশেপাশের গ্রামগুলোতে মেধাবী অনেক শিক্ষার্থী আছে। এরা স্কুল পর্যায়ে ছেলেদের তুলনায় লেখাপড়ায় অনেক ভালো। কিন্তু পারিবারিক, সামাজিকসহ নানান বৈষম্যের কারণে তাদের অনেকেই স্কুলের গণ্ডি পার হতে পারে না। 

মহিলা পরিষদ রাজশাহী জেলার সাধারণ সম্পাদক কল্পনা রায় বলেন, নারীদের ক্ষেত্রে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির সমস্যা আছে। বর্তমান সমাজে একজন ছেলেও যেমন সংসারের হাল ধরে ঠিক সমানভাবে একজন নারীও হাল ধরতে পারে।

তিনি আরো বলেন, ভালো করে তাকালে দেখা যায় যে বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে নারীরাই পরিবারের পাশে বেশি দাঁড়ায়। তাই আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনতে হবে।

বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির রাজশাহী বিভাগীয় সমন্বয়ক দিল সেতারা চুনি বলেন, নারীরা অনেক এগিয়েছে। আরো সামনে এগিয়ে আসতে হবে। এ ক্ষেত্রে পরিবার, সমাজ থেকে শুরু করে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সুন্দর সমাজ গঠনে পুরুষ ও নারীর সমান ভূমিকা আছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর