২০২১ সালে ৫৩৭১ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৬২৮৪ জন

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-27 02:55:40

২০২১ সালে দেশে ৫ হাজার ৩৭১টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৬ হাজার ২৮৪ জন। আহত হয়েছেন ৭ হাজার ৪৬৮ জন। সড়ক দুর্ঘটনার বড় কারণ . ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন ও বেপরোয়া গতি।

এ ছাড়া রেলপথে দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৪৭ জন ও নৌ দুর্ঘটনায় ১৫৯ জন। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

শনিবার (০৮ জানুয়ারি) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রতিবেদন প্রকাশ করে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। দেশের ৭টি জাতীয় দৈনিক, ৫টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্টনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে সংগঠনটি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নিহতের মধ্যে নারী ৯২৭, শিশু ৭৩৪। ২০৭৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ২২১৪ জন, যা মোট নিহতের ৩৫.২৩ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ১৫২৩ জন পথচারী নিহত হয়েছে, যা মোট নিহতের ২৪.২৩ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৭৯৮ জন।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ২০১৪টি (৩৮.৪৯%) জাতীয় মহাসড়কে, ১৬৭০টি (৩১.০৯%) আঞ্চলিক সড়কে, ৯৫৪টি (১৭.৭৬%) গ্রামীণ সড়কে, ৬৬৫টি (১২.৩৮%) শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ৬৮টি (১.২৬%) সংঘটিত হয়েছে।

দুর্ঘটনার ধরন:

দুর্ঘটনাসমূহের ১০৫৭টি (১৯.৬৭%) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৮১৩টি (৩৩.৭৫%) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১৫৬৬টি (২৯.১৫%) পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেয়া, ৮২২টি (১৫.৩০%) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ১১৩টি (২.১০%) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।

ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ১৩৪৪টি দুর্ঘটনায় নিহত ১৫৪৫ জন। সবচেয়ে কম রংপুর বিভাগে। ৩৯৮টি দুর্ঘটনায় নিহত ৪৪৩ জন।

রেল ক্রসিং দুর্ঘটনা:

সারাদেশে ৮২ শতাংশ রেল ক্রসিং অরক্ষিত। এসব রেল ক্রসিংয়ে গত বছরে ৩৩টি দুর্ঘটনায় ৭৪ জন নিহত হয়েছে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, নিহতদের মধ্যে পুলিশ, সেনাসদস্য, বিমান বাহিনী সদস্য, এপিবিএন সদস্য, র‌্যাব সদস্য, বিজিবি সদস্য, আনসার সদস্য, শিক্ষক, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, প্রকৌশলী, আইনজীবী, সাংবাদিক, ব্যাংক কর্মকর্তা, এনজিও কর্মকর্তা-কর্মচারী, ক্রিকেটার, শ্রমিক, মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী, বিক্রয় প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী, প্রবাসী, রাজনৈতিক নেতা এবং দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে।

উল্লেখ্য ২০১৯, ২০২০ এবং ২০২১- এই তিন বছরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ছাড়া অন্যান্য দুর্ঘটনা এবং প্রাণহানির সংখ্যা প্রায় সমান। খুব বেশি কম-বেশি হয়নি। মূলত ক্রমবর্ধমান মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির কারণেই ২০২০ এবং ২০২১ সালের দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির মোট সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।

২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেড়েছে ১৬.১৪ শতাংশ এবং প্রাণহানি বেড়েছে ৫৪.৮১ শতাংশ। ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেড়েছে ৫০.৪৭ শতাংশ এবং প্রাণহানি বেড়েছে ৫১.৩৩ শতাংশ।

২০২১ সালের মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার বিশ্লেষণ:

২০২১ সালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে ২০৭৮টি, নিহত হয়েছে ২২১৪ জন, আহত ১৩০৯ জন। নিহতের মধ্যে ৭৪.৩৯ শতাংশ ১৪ থেকে ৪৫ বছর বয়সী।

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বৃদ্ধির পেছনে অনেকগুলো কারণ কাজ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, মোটরসাইকেল চালকদের বিরাট অংশ কিশোর ও যুবক। এদের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা এবং না মানার বিষয়টি প্রবল। কিশোর-যুবকরা বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালিয়ে নিজেরা দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হচ্ছে এবং অন্যদেরকে আক্রান্ত করছে।

দেশে দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতির পৃষ্ঠপোষকতায় মোটসাইকেল সংস্কৃতি চরমভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব মোটসাইকেল চালক সড়ক-মহাসড়কে বেপরোয়াভাবে চলাচল করছে। এদের বেপরোয়া মোটরসাইকেলের ধাক্কায় পথচারী নিহতের ঘটনাও বাড়ছে।

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার একটি ব্যাপক অংশ ঘটছে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, পিকআপ ও বাসের ধাক্কা, চাপা এবং মুখোমুখি সংঘর্ষে। এসব দ্রæত গতির যানবাহনের চালকদের অধিকাংশই অদক্ষ ও অসুস্থ। তাদের বেপরোয়াভাবে যানবাহন চালানোর ফলে যারা সাবধানে মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন তারাও দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।

মোটরসাইকেল ৪ চাকার যানবাহনের তুলনায় ৩০ গুণ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু দেশে গণপরিবহন ব্যবস্থা উন্নত ও সহজলভ্য না হওয়া এবং যানজটের কারণে মানুষ মোটরসাইকেল ব্যবহারে উৎসাহিত হচ্ছে এবং দুর্ঘটনা বাড়ছে।

পথচারী নিহতের দুর্ঘটনা বিশ্লেষণ:

২০২১ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৫২৩ জন পথচারী নিহত হয়েছে। রাস্তায় হাঁটার সময় দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫৩.৫১ শতাংশ এবং রাস্তা পারাপারের সময় ঘটেছে ৪৬.৪৮ শতাংশ। ৬১.৮০ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে যানবাহনের বেপরোয়া গতির কারণে এবং ৩৮.১৯ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে পথচারীদের অসতর্কতার কারণে।

পথচারী নিহতের ঘটনা মহাসড়কে ৩০.৯০%, আঞ্চলিক সড়কে ২৩.৮৬%, গ্রামীণ সড়কে ২৯.৮৯%, শহরের সড়কে ১৪.৩২% এবং অন্যান্য স্থানে ঘটেছে ১%।

যানবাহনের অতিরিক্ত গতি, সড়কের সাইন-মার্কিং-জেব্রা ক্রসিং চালক এবং পথচারীদের না মানার প্রবণতা, যথাস্থানে সঠিকভাবে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ না করা এবং ব্যবহার উপযোগী না থাকা, রাস্তায় হাঁটা ও পারাপারের সময় মোবাইল ফোনে কথা বলা, হেডফোনে গান শোনা, চ্যাটিং করা এবং সড়ক ঘেঁষে বসতবাড়ি নির্মাণ ও সড়কের উপরে হাট-বাজার গড়ে উঠা ইত্যাদি কারণে পথচারী নিহতের ঘটনা বাড়ছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর