মিউজিক ভিডিওর সূত্র ধরে গ্রেফতার ‘সিরিয়াল কিলার’   

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-27 15:14:18

২০০১ সালে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মাহমুদুল হাসান বিদ্যুৎ কে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে ‘সিরিয়াল কিলার’ খ্যাত হেলাল ফকির। এ ঘটনায় যাবজ্জীবন সাজা হয় তার। এরপর ছদ্মবেশে দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করে আসছিল হেলাল। অবশেষে মিউজিক ভিডিওর সূত্র ধরে গতকাল রাতে কিশোরগঞ্জের ভৈরব এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) কাওরানবাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইং এর পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, গত ২০০১ সালে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মাহমুদুল হাসান বিদ্যুৎ (২০)কে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে হেলাল ফকির ওরফে সেলিম ফকির ওরফে খুনী হেলাল। এ ঘটনায় নিহত বিদ্যুৎতের পরিবার বাদী হয়ে বগুড়া সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করলে আদালত যাবজ্জীবন সাজা দেয়। তার পর থেকেই সে ফেরারি হিসেবে দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করে আসছিল।

তিনি বলেন, গত ৬ মাস পূর্বে এক ব্যক্তি ইউটিউবে প্রচারিত একটি গানের বাউল মডেল সম্পর্কে র‌্যাবকে বাউল হেলালের তথ্য প্রদান করে। বগুড়ার বিদ্যুৎ হত্যা মামলার আসামী হেলালের সাথে উক্ত মডেলের চেহারার মিল সম্পর্কে জানায় সে। অতপর র‌্যাব নজরদারি বৃদ্ধি করলে গতকাল রাতে র‌্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল ও গোয়েন্দা দলের যৌথ অভিযানে কিশোরগঞ্জের ভৈরব এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।


প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হেলাল অপরাধ সম্পর্কে র‌্যাবকে তথ্য প্রদান করে বলেন, সে ২০০১ সালের বগুড়ার চাঞ্চল্যকর বিদুৎ হত্যা মামলা সহ আরও ২টি হত্যা মামলার আসামি। ২০০৬ সালে রবিউল হত্যা মামলার আসামি এবং ১৯৯৭ সালে বগুড়াতে চাঞ্চল্যকর বিষ্ণু হত্যাকাণ্ডের এজহার নামীয় আসামি ছিল। গত ২০১০ সালে বগুড়া সদর থানায় দায়েরকৃত একটি চুরির মামলায় সে ২০১৫ সালে গ্রেফতার হয়। ওই বছরেই সে চুরির মামলায় জামিনে মুক্ত হয়। একই দিনে বিদ্যুৎ হত্যা মামলায় আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করে। এছাড়াও ২০১১ সালে তার বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয় বলে জানা যায়।

মঈন জানান, হেলাল কর্মজীবনে ৮ম শ্রেনী পর্যন্ত পড়াশুনা করেছে। তারপর সে এলাকায় মুদি দোকানের ব্যবসা শুরু করে। হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রমের সাথে জড়িয়ে পড়লে এলাকায় তার কুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। বিদ্যুৎ হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হলে সে সু-কৌশলে পালিয়ে গিয়ে ফেরারি জীবন যাপন শুরু করে। প্রথমে সে বগুড়া থেকে ট্রেনে ঢাকায় কমলাপুর রেলস্টেশনে আসে। এরপর কমলাপুর থেকে ট্রেনযোগে চট্টগ্রামে যায়। সেখানে আমানত শাহ্'র মাজারে ছদ্মবেশ ধারণ করে বেশ কিছুদিন অবস্থান করে। সেখান থেকে অবস্থান পরিবর্তন করে সিলেটের শাহজালাল মাজারে চলে আসে। সিলেটে গিয়ে ছদ্মবেশ ধারণ করে আরও কিছুদিন বসবাস করে। বিভিন্ন সময়ে সে বাংলাদেশের বিভিন্ন রেলস্টেশন ও মাজারে ছদ্মবেশে অবস্থান করত। সে কিশোরগঞ্জ ভৈরব রেলস্টেশনে নাম-ঠিকানা ও পরিচয় গোপন রেখে সেলিম ফকির নামে বসবাস শুরু করে।

আনুমানিক ৫ বছর পূর্বে গ্রেফতারকৃত হেলাল নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশনে কিশোর পলাশের একটি গান‘ভাঙ্গা তরী ছেড়া পাল’ এর শুটিংয়ে বাউল মডেলের অভিনয় করে। সে প্রায় ৭ বছর যাবৎ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ফেরারি জীবন যাপন করে এবং প্রায় ৪ বছর যাবৎ ভৈরব রেলস্টেশনের পাশে একজন মহিলার সাথে সংসার করে আসছিল বলে জানান মঈন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর