লকডাউনে চাকরি হারানো শ্রমিকদের ৭ শতাংশ এখনও বেকার

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-20 23:16:08

লকডাউনে ঢাকা শহরের পরিবহন, দোকান-পাট এবং হোটেল-রেস্তোরাঁয় চাকরি হারিয়েছেন ৮৭ শতাংশ শ্রমিক। তাদের ৭ শতাংশ এখনও বেকার এবং গড়ে এসব মানুষের আয় কমেছে ৮ শতাংশ।

বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) ধানমন্ডির বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) সেমিনার হলে গবেষণা ফল নিয়ে আয়োজিত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়

গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২১ সালের লকডাউনে (৫ এপ্রিল থেকে ১০ আগস্ট) ৮৭ শতাংশ শ্রমিকের চাকরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি (৯৫ শতাংশ) পরিবহন খাতের শ্রমিকদের চাকরি গেছে। দোকানপাট শ্রমিকদের ৮৩ শতাংশ এবং হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতের শ্রমিকদের ৮২ শতাংশ কর্মসংস্থান হারিয়েছেন। লকডাউন পরবর্তী সময়ে ৯৩ শতাংশ শ্রমিক চাকরিতে পুনর্বহাল হয়েছেন। ৭ শতাংশ শ্রমিক এখনও বেকার।

তবে লকডাউন সময়ে এসব খাতে খণ্ডকলীন শ্রমিকদের কর্মসংস্থান বেড়েছিল ২১৫ শতাংশ।

অন্যদিকে লকডাউনে তিনটি খাতে কার্যদিবস কমেছিল ৭৩ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি ৯২ শতাংশ কার্যদিবস কমেছে পরিবহন খাতে। লকডাউন পরবর্তী সময়ে অবশ্য কাজের চাপ বেড়েছে। ফলে কার্যদিবস এবং কর্মঘণ্টা আগের তুলনায় বেড়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, লকডাউনে তিনটি খাতের শ্রমিকদের আয় গড়ে ৮১ শতাংশ কমেছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি (৯৬ শতাংশ) ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন পরিবহন খাতের শ্রমিকরা। এছাড়া হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতের শ্রমিকদের আয় কমেছে ৮৩ শতাংশ। লকডাউনের আগে যেখানে মাসে গড় আয় ছিল ১৩ হাজার ৫৭৮ টাকা, লকডাউন তা নেমে এসেছিল ২ হাজার ৫২৪ টাকায়। লকডাউন পরবর্তী সময়ে আয় দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৫২৯ টাকা। অর্থাৎ লকডাউন পরবর্তী সময়েও ৮ শতাংশ আয়ের ঘাটতি রয়েছে।

লকডাউনে শ্রমিকদের পরিবারে আয় এবং ব্যয়ের ঘাটতি ছিল প্রায় ৭৭ শতাংশ, সর্বোচ্চ ৯৭ শতাংশ পরিবহন খাতের এবং সর্বনিম্ন ৪৬ শতাংশ রয়েছে খুচরা দোকান বিক্রেতা খাতের শ্রমিক পরিবারের। ২০ শতাংশ শ্রমিক পরিবার সম্পত্তি বিক্রয়, খাবার কমিয়ে দেওয়া এবং সন্তানদের কাজে পাঠানোর মাধ্যমে পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করেছেন। এছাড়া ৮০ শতাংশ শ্রমিক পরিবার ধার করে এবং সঞ্চয় কমিয়ে পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করছেন। লকাডাউন পরবর্তী সময়ে সঞ্চয় কমেছে ৬৪ শতাংশ এবং সঞ্চয়কারীর সংখ্যা কমেছে ৫০ শতাংশ।

এছাড়া লকডাইনে উল্লেখিত তিনটি খাতের শ্রমিকদের মাত্র ১ শতাংশেরও নিচে সরকারি বিভিন্ন সহায়তা পেয়েছেন। তার মধ্যে রয়েছে কমমূল্যে খাদ্য সহায়তা এবং নগদ টাকা। গবেষণা অনুযায়ী ৩৬ শতাংশ শ্রমিক কোভিডের টিকা নিয়েছেন এবং ৬৪ শতাংশ শ্রমিক এখনও টিকার আওতার বাহিরে রয়েছেন।

করোনা মহামারির বাস্তবতায় বেসরকারি খাতে নিয়োজিত পরিবহন শ্রমিক, হোটেল-রেস্তোরাঁ শ্রমিক এবং দোকান শ্রমিকদের সুরক্ষায় ১০ দফা সুপারিশ তুলে ধরেছে বিলস। সুপারিশ হল–

বেসরকারি খাতে কর্মরত শ্রমিকদের একটি পূর্ণাঙ্গ ডেটাবেজ প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া, একটি পরিপূর্ণ পরিকল্পনার আওতায় বেসরকারি খাতের শ্রমিকদের ক্রমান্বয়ে পেশা উল্লেখসহ পরিচয়পত্র প্রদান, দুর্যোগকালীন বেসরকারি খাতে কর্মরত শ্রমিকদের সহায়তার জন্য একটি সঠিক ও কার্যকর প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ, বেসরকারি খাতের শ্রমিকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনা টিকা প্রদান নিশ্চিত করা, বেসরকারি খাতের শ্রমিকদের সামাজিকভাবে সুরক্ষার জন্য বাধ্যতামূলকভাবে বিমা ব্যবস্থার প্রবর্তন করা ইত্যাদি।

গবেষণার ফল উপস্থাপন করেন বিলসের উপ-পরিচালক (গবেষণা) মো. মনিরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে আরও ছিলেন বিলসের ভাইস চেয়ারম্যান আমিরুল হক আমিন, পরিচালক কোহিনূর মাহমুদ এবং নাজমা ইয়াসমীন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর