অ্যাপের গাড়িতে ভোগান্তি, অশালীন মন্তব্যের শিকার নারীরা

, জাতীয়

আফসানা রীপা, নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 16:05:35

'আপু এক্কেরে আইক্কাওয়ালা বাঁশ খায়া ফালাইসি, চুয়াল্লিশ মিনিটের জন্য সাসপেন্ড হয়া গেসি। আপনাকে ধন্যবাদ বুঝলেন? যে বাঁশটা দিলেন আমাকে'।

নারী যাত্রীর উদ্দেশ্যে বলা কথাগুলো রাইড শেয়ারিং অ্যাপ ব্যবহারকারী তারেক নামে এক চালকের। 

যানজট এড়ানো ও যাত্রা পথের ভোগান্তি কমাতে রাইড শেয়ারিং অ্যাপ ব্যবহার করেন সাদিয়া। এর জন্য সাদিয়ার পছন্দ বাইক। সম্প্রতি অফিস থেকে বাসায় ফিরতে রাইড শেয়ারিং অ্যাপে বাইকের রিকুয়েস্ট দেন বলে জানান তিনি। কিন্তু, ৩০ মিনিটের বেশি হলেও কোন বাইক পাচ্ছিলেন না। এই সময়ের মাঝে ৬-৭ জন বাইক চালক রিকুয়েস্ট গ্রহণ করেও নানা অজুহাতে বা না জানিয়েই রাইড বাতিল করেছেন।

এদের মধ্যে একজন চালক নিজে রাইড বাতিল না করে সাদিয়াকে রাইডটি বাতিলের অনুরোধ জানান। কারণ ইতিমধ্যে দুইটি রাইড বাতিল করেছেন সেই চালক। সাদিয়া রাইড বাতিলে অপরাগতা প্রকাশ করলে, বাধ্য হয়ে চালকই রাইডটি বাতিল করেন। এরপর ফোন করে আবার এমন অশালীন বক্তব্য প্রদান করেন উক্ত চালক।

ছবি: বার্তা২৪.কম 

রাজধানীতে যাতায়াতের ভোগান্তি এড়াতে কর্মজীবী নারী-পুরুষ ও শিক্ষার্থীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বিভিন্ন রাইড শেয়ারিং অ্যাপগুলো। দ্রুত ও মোটামুটি সাশ্রয়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য অ্যাপগুলোর কোনো বিকল্প নেই বললেই চলে। কিন্তু বর্তমানে এই অ্যাপগুলোর অপব্যবহার করে কিছু রাইডার সিস্টেম বহির্ভূতভাবে রাইড দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এক কথায় যাকে বলা হচ্ছে 'অ্যাপ ছাড়া খ্যাপ'। আর এই নিয়ম বহির্ভূত খ্যাপেই বেড়ে চলেছে যত ভোগান্তি।

রাজধানীর কাওরান বাজার মোড়ে, মগবাজার, গুলশান-১,২ গোল চত্বর, পুলিশ প্লাজাসহ পুরো রাজধানী জুড়েই রয়েছে এসকল খ্যাপ মারা চালকদের সরব উপস্থিতি। এর সাথে যোগ হয়েছে রাইড রিকুয়েস্ট গ্রহণ করে বাতিল করার বিড়ম্বনা।

ছবি: বার্তা২৪.কম
 

পথচারীদের অভিযোগ- যাওয়ার অনীহা দেখানো সত্ত্বেও এরা থামে না, কোথায় যাবেন, যাবেন নাকি- এভাবে ডাকতেই থাকে। যা বাসের হেলপারদের মতো।

নারী যাত্রীদের অভিযোগ, মাঝেমাঝে রাইড নিতে না চাইলে বাজে মন্তব্যও করে বসেন চালকরা। ‘আপা পছন্দ হয়নি, কেন যাবেন না’- তাদের বক্তব্যগুলো অনেকটা এমন।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, এই চালকরা রীতিমত একটা সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। অ্যাপ থেকে রাইড রিকুয়েস্ট দেওয়ার সময় অ্যাপেই আশেপাশে অনেক চালক দেখালেও রিকুয়েস্ট গ্রহণ করেন না। ফলে একপ্রকার বাধ্য হয়েই সময় বাঁচাতে বেছে নিতে হয় অ্যাপ ছাড়া খ্যাপগুলো। যা নারীদের জন্য অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ।

এদিকে রাইড রিকুয়েস্ট গ্রহণ করার পর নিজেরা বাতিল করে ক্ষান্ত দেন না। অনেক সময় ফোনে যাত্রীকেই অনুরোধ করেন রাইডটি ক্যানসেল করে দেওয়ার। কারণ একদিনে ২টির বেশি রিকোয়েস্ট ক্যানসেল করার নিয়ম নেই অ্যাপ অন্তর্ভূক্ত চালকদের। অ্যাপে দুই এর অধিক রাইড রিকোয়েস্ট ক্যানসেল হলেই ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা পর্যন্ত সাসপেন্ড করা হয় চালককে।

ছবি: বার্তা২৪.কম 

এমনই ভোগান্তির শিকার সাদিয়া। তিনি জানান, কিছুদিন আগে আমি অফিস শেষে রাত ৮টায় রাইডের জন্য অ্যাপে রিকুয়েস্ট দেই। রাত ৮টা ৪২ মিনিটে গিয়ে বহু হয়রানির পর একজন রাইডার খুঁজে পাই। এই সময়ের মাঝে অন্তত ৬-৭ জন গ্রহণ করেও আবার ক্যানসেল করে দেন। তারেক নামের রাইডার আমাকে অনুরোধ করেন যেন আমি রাইডটি বাতিল করি। কারণ ইতিমধ্যে তিনি দুটি রাইড বাতিল করেছেন। আমি অপরাগতা জানালে তিনিই নিজে রাইডটি বাতিল করে ৪৪ মিনিটের জন্য সাসপেন্ড হয়েছেন বলে আবার ফোন করে রসিকতা করে জানান।

আরেক অ্যাপ ব্যবহারী যাত্রী সুতপা জানান, এরা প্রথমে রাইড বাতিল করে। এরপর আবার ফোন করে অ্যাপ ছাড়া যাবো কিনা সেটা জিজ্ঞাসা করে। অ্যাপে যে বিল আসে তার থেকে ১০ টাকা কম দিলেই হবে বলেও অনেকে প্রস্তাব করেন।

এ বিষয়ে একজন অ্যাপে রাইড শেয়ার করা চালক জানান, দোষটা এখানে দুপক্ষেরই। যাত্রীরাও চায় সময় এবং সাথে ১০-৫ টাকা বাঁচাতে আর রাইডারও চায় কাটছাঁট ছাড়া পুরো ভাড়াটাই নিজে পেতে। এখানে যদি যাত্রীরা রুখে দাঁড়ায় তাহলে কিন্তু আমরা বাধ্য হয়েই অ্যাপে রাইড নেওয়া শুরু করবো। আমাদের আর বিকল্প থাকে না।

ছবি: বার্তা২৪.কম 

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, অ্যাপ ছাড়া খ্যাপে যাওয়া সাশ্রয়ী হলেও এর ঝুঁকির দিকটাই বেশি। অ্যাপে রাইড নিলে যাত্রীর কাছে চালকের বিস্তারিত থেকে যায়। কোন অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা ঘটলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ সহজ হয়। যা অ্যাপ বহির্ভূত রাইডে সম্ভব হয় না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএ'র  সহকারী পরিচালক মো.ফারুক আহমেদ বার্তা২৪.কম-কে জানায়, এমন অভিযোগ হরহামেশাই আমাদের কাছে আসছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথেও আমাদের কথা হয়েছে। রাজধানীতে বিভিন্ন জায়গায় মোবাইল কোর্ট আছে। এছাড়াও ট্রাফিক পুলিশ নিয়মিত বিষয়টি মনিটরিং করছেন। সচেতনতামূলক সার্কুলারও দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন পত্রিকায়।

এছাড়া এমন অ্যাপ বহির্ভূত রাইডের ক্ষেত্রে অ্যাপ শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে তাদের ট্রেস করার মত কোন সিস্টেম নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সর্বোপরি ঝুঁকিপূর্ণ এই অ্যাপ ছাড়া রাইড শেয়ার বন্ধ করতে যাত্রী এবং চালক দুজনকেই সচেতন হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন এই কর্মকর্তা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর