নাসিক নির্বাচন: শেষ দিনের প্রচারণায় সরগরম নারায়ণগঞ্জ

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নারায়ণগঞ্জ | 2023-08-26 14:45:10

নির্বাচনের বাকি ১ দিন। শেষ দিনের প্রচারণায় সরগরম নারায়ণগঞ্জ। শেষ দিনে জমে উঠেছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা, চলছে মিছিল, মিটিং ও পথসভা। প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। নির্বাচন নিয়ে তুমুল উৎসাহ ও কৌতূহল বিরাজ করছে ভোটারদের মধ্যে।

প্রতীক পাওয়ার পর থেকেই নির্বাচনী মাঠে সরব হয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ৭ মেয়র প্রার্থী, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৪৮ ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৩৪ প্রার্থী। তবে শেষ দিনের প্রচারণা ছিল চোখে পড়ার মতো।

নির্বাচন উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে এখন উৎসবমুখর পরিবেশ। নির্বাচনী প্রার্থীদের ব্যানার-পোস্টারে ছেয়ে গেছে শহরের বিভিন্ন সড়ক। বিভিন্ন এলাকায় মিছিল আর মিছিল। এলাকায় এলাকায় ব্যানার-পোস্টারের পাশাপাশি চলেছে ভোটের জন্য মাইকিং। নির্বাচনী প্রচারে ছিল শিশু-কিশোরেরাও।

শুক্রবার (১৪ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় দুই হেভিওয়েট প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী (আওয়ামী লীগের মনোনীত) ও তৈমূর আলম খন্দকার (স্বতন্ত্র) সংবাদ সম্মেলন করেছেন। একই সঙ্গে প্রচারণা করেছেন অন্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। কাউন্সিলর প্রার্থীরা যাচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। চাইছেন দোয়া ও ভোট।

বেলা ৩টায় বিশাল পথসভা ও মিছিল করেন ড. সেলিনা হায়ৎ আইভী। এই সভায় কেন্দ্রীয় নেতাকর্মী, জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ হাজার হাজার জনগণ অংশগ্রহণ করেন এই পথসভায় ও মিছিলে।

উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকা প্রতীকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানান ডা. সেলিনা হয়াৎ আইভী। চলমান কাজকে গতিশীল করার ওয়াদা নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়েছেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভি।

আইভী বলেন, ভোটকেন্দ্রে কোনো ধরনের সহিংসতা কিংবা বিশৃঙ্খলা না হলে বিজয় সুনিশ্চিত। আমার ভরসা জনগণে। নেতারা আসতেই পারে ক্যাম্পিং করতেই পারে, পর্যবেক্ষণ করতেই পারে। কিন্তু তারা আমাকে ফ্রি করে দিয়েছেন। আমি সারাক্ষণই ভোটারদের কাছেই ছিলাম।’আইভীকে পরাজিত করতে অনেকগুলো পক্ষ এক হয়ে গিয়েছে। ঘরের-বাইরের সকল পক্ষ মিলে গিয়েছে। কীভাবে বিশৃঙ্খলা করে আমাকে পরাজিত করা যায় সেই চিন্তা করছে।

আইভী আরও বলেন, আমাকে পাঁচ বছরের জন্য সুযোগ দেন। যে কোনো সময় অনেক কিছু ঘটে যেতে পারে। আমি আপনাদের জন্য মৃত্যুকেও বরণ করতে রাজি আছি। আমি ঘর-সংসারের দিকে তাকাইনি। আশা করি আপনারা আমাকে ফিরিয়ে দেবেন না।

অপর দিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার বেলা ৩টা থেকে বিশাল শোডাউন করে বন্দরে প্রচারণা চালান।

তৈমুর আলম খন্দকার সাধারণ মানুষকে দিচ্ছেন আগামী দিনে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি। একই সাথে করছেন সাবেক মেয়রের উন্নয়ন কর্মকান্ডের সমালোচনা। তিনি বলছেন, পরিকল্পিতভাবে নগরায়ন হয়নি এই শহরের। জনগণের মনের ধারণা নির্বাচন কমিশন একটা ঠুটো জগন্নাথ তারা সেই পথেই হাঁটছেন। তারপরেও আমি নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা রাখতে চাই। সরকারি দলের মেহমানরা নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় তৈমুর আলম খন্দকার আনেন নানা অভিযোগ। তার ভিতরে শঙ্কা কাজ করছে নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে।

ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী মুফতি মাসুম বিল্লাহ হাতপাখা প্রতীক নিয়ে শহরজুরে বিশাল শো-ডাউন করেছেন। ঘুরছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে।

মুফতি মাসুম বিল্লাহ বলেন, জনগণ এবার ইসলামী শক্তিকে বিজয় করার জন্য বদ্ধপরিকর। হাতপাখার যেভাবে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারলে বিজয় আমাদের হবে ইনশাআল্লাহ।

বিকেলে খেলাফত মজলিসের মেয়র প্রার্থী এবিএম সিরাজুল মামুন ১৪ প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন। পরে দেওয়াল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে বিশাল গণসংযোগ করেন।

সিরাজুল মামুন বলেন, আমরা আশাবাদী যে ভোটাররা ন্যায়নীতি সুবিচার ও জনকল্যাণের জন্যে সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন শহর গঠনে আমাদেরকে সমর্থন দিবে। আমি নারায়ণগঞ্জ সিটির সম্মানিত ভোটারদের অনুরোধ করব তারা যেন আমাদের দেয়াল ঘড়ি মার্কায় সমর্থন দেন এবং নারায়ণগঞ্জ এর উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখেন।

এছাড়া কাউন্সিলর প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করেছেন। নিজ নিজ মার্কা নিয়ে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘুরছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। চাইছেন দোয়া ও ভোট।

তবে ১৮ দিনের এই প্রচারণায় শহরজুরেই আলোচনায় ছিল নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ সদস্য শামীম ওসমান। সাধারণ জনগণসহ সরকার দলীয় প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়ৎ আইভীও অভিযোগ তোলেন যে শামীম ওসমানই দাঁড় করিয়েছে তৈমুর আলম খন্দকারকে। আইভী বলেন, তৈমুর আলম খন্দকার ‘গডফাদার’ শামীম ওসমানের প্রার্থী। কেন্দ্রীয় নেতা আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকও এক বক্তব্যে বলেন, এমপি হয়েছেন নৌকার কারণেই আগামীতে আমরা বেচে থাকতে নৌকা পেতে দিব না। এই সকল অভিযোগের কারণেই হোক আর চাপে পরেই হোক ১০ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেন এমপি শামীম ওসমান। ঘোষণা দেন ১৬ তারিখ খেলা হবে। নৌকার হয়ে কাজ করবেন তিনি। নারায়ণগঞ্জ নৌকার ঘাঁটি, নৌকা স্বাধীনতার প্রতীক। সুতরাং নারায়ণগঞ্জে নৌকার জয় হবেই হবে। তবে এই নিয়ে এখনও শহরজুরে রয়েছে নানা গুঞ্জন।

শুক্রবার (১৪ জানুয়ারি) মধ্যরাতেই শেষ হবে নারায়ণগঞ্জ সিটি ভোটের প্রচার। পরে একদিন বিরতি রেখে আগামী রোববার ভোটগ্রহণ হবে। যেখানে ১৯২টি কেন্দ্রে ভোট দেবেন ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৬১ জন ভোটার। কে হচ্ছে নগর পিতা তা নিয়েও দলে এবং দলের বাইরে জনগণের মধ্যে চলছে বিশ্লেষণ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর