সাভারে ক্ষতিকর রাসায়নিক মিশিয়ে ভেজাল গুড় উৎপাদন

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বাতা২৪.কম, সাভার (ঢাকা) | 2023-08-30 01:11:32

সাভারে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু ভেজাল গুড়ের কারখানা। চিটাগুড়ের সঙ্গে চিনি, গোখাদ্য, রং ও ক্ষতিকর রাসায়নিক মিশিয়ে এসব কারখানায় তৈরি করা হচ্ছে আখ ও খেজুর গুড়। যেখানে আখ কিংবা খেজুর রসের লেশমাত্র নেই। 

সাভারের নামাবাজারে এমনই একটি কারখানা রুপা এন্টারপ্রাইজ। যেখানে দিনের আলোয় উৎপাদন না হলেও রাতের বেলায় ধুম পড়ে ভেজাল গুড় উৎপাদনের। রাতের মধ্যেই টনে টনে ভেজাল গুড় উৎপাদন করে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বাজারে। আর এমন গুড় কিনে নিজের অজান্তেই বিষ খাচ্ছেন ভোক্তারা। তবে জেনে বুঝে এমন গুড় বিক্রি থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন সাভারের ব্যবসায়িরা। তাদের দাবি ভেজাল জেনে সাভারের গুড় তারা বিক্রি করেন না।

সরেজমিনে সাভার নামাবাজার এলাকার রুপা এন্টারপ্রাইজে গিয়ে দেখা যায়, সারি সারি সাজানো আটার বস্তা। এখানে সাজানো রয়েছে গোখাদ্য, চিটাগুড়, কাপড়ের বিষাক্ত রং, গরুর চর্বি আর কাগজে লাগানো এ ধরনের আঠা। এসবের সংমিশ্রণে তারা নির্দ্বিধায় তৈরি করছেন গুড়। দীর্ঘদিন ধরে কিভাবে এমন ভেজাল গুড় উৎপাদন করা হয় প্রশ্ন সচেতন মহলের।

রুপা এন্টারপ্রাইজের মালিক গৌতম সাহা নামের এক ব্যক্তি। যিনি প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে কতিপয় কিছু ব্যক্তিকে হাত করে মেতেছেন ভেজাল গুড় উৎপাদনে। এমন অস্বাস্থ্যকর ও ক্ষতিকর কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি গুড় আবার বাজার থেকে কিনে হরহামেশাই প্রতারিত হচ্ছেন ভোক্তারা।

তবে ২০১৭ সালে র‌্যাব অভিযান চালায় এই কারখানায়। সেসময় ২ লাখ টাকা জরিমানা করে কারখানার সমস্ত কাঁচামাল ও উৎপাদিত গুড় ফেলা হয় নদীতে। এই কারখানায় সাভার উপজেলা রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান চালিয়ে জরিমানা করেন। তবুও থেমে নেই এখানে ভেজাল গুড় উৎপাদন।

এ ব্যাপারে সাভার নামাবাজারের গুড় ব্যবসায়ি মৃদুল সাহা বলেন, ময়দা, চিনি, চিটাগুড় ও চর্বির সংমিশ্রণে নামাবাজারে গৌতম বাবু গুড় বানান বলে আমরা জানি। কিন্তু কোন দিন দেখিনি। ভেজাল গুড় সাভারে উৎপাদন হওয়ায় আমরা সাভারের কোন গুড়ই বিক্রি করিনা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আমরা নির্ভেজাল গুড় সংগ্রহ করে বিক্রি করি।

অপর ব্যবসায়ী দুলাল দাশ ৩২ বছর ধরে সাভারে গুড় বিক্রি করেন। তিনি বলেন, সাভারে গৌতমের গুড় চলে না। তিনি বাহিরে ওসব গুড় বিক্রি করেন। আমরাও জেনেশুনে এমন গুড় বিক্রি করি না। তবে তার দাবি চিনি ছাড়া কোন গুড়ই উৎপাদন হয় না। তবে আমাদের গুড় আখের রস দিয়েই তৈরি করা হয়।

এ ব্যাপারে রুপা এন্টারপ্রাইজের মালিক গৌতম সাহা বলেন, আমরা মুলত কারখানায় গোখাদ্য উৎপাদন করি। আমরা গুড় উৎপাদন করি না। এসব মিথ্যা কথা। গুড় উৎপাদনের ভিডিও সংরক্ষণে আছে এমন কথার জবাব না দিয়ে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়েমুল হুদা বার্তা২৪.কম-কে বলেন, এ ধরনের খাদ্য মানবদেহে প্রবেশের ফলে ক্যান্সারের মত রোগের সৃষ্টি হতে পারে। মানুষের বিভিন্ন অর্গ্যান ড্যামেজ (ধ্বংস) হতে পারে। শিশুদের জন্য তো এমন খাদ্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এসব খাদ্য থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।

সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাজহারুল ইসলাম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ এর ২৩ ধারায় বিষাক্ত দ্রব্যের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন একই আইনের ২৫ ধারায় ভেজাল খাদ্য উৎপাদন এবং ৩৩ ধারায় মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর বিবেচনায় খাদ্য উৎপাদন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর ব্যত্যয় হলে দন্ড আরোপের বিধান রয়েছে। এছাড়াও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ৪২ ও ৪৩ ধারায় বিষাক্ত দ্রব্যের ব্যবহারের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন কিংবা মানব দেহের ক্ষতিকর এমন কোন খাদ্য উৎপাদন করলে ২ বছর কারাদণ্ড কিংবা দুই হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। আমরা এই বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখবো। প্রমান পেলে আইনের যথাযথ প্রয়োগ করা হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর