হাসপাতালে দালাল চক্রের টার্গেট গ্রামের অসহায় রোগী

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম সুনামগঞ্জ | 2023-08-31 12:28:52

আব্দুল হান্নান ও হাসিনা বেগমের একমাত্র মেয়ে রাফিয়া বেগম (০৬)। বাড়ি সুনামগঞ্জের দোয়ারা বাজার উপজেলার মান্নার গাঁও ইউনিয়নের করিমপুর গ্রামে। শিশু রাফিয়া বন্ধুদের সাথে খেলতে গিয়ে পড়ে ডান হাতে আঘাত পায়।

সোমবার (১০ জানুয়ারি) সকালে  সুনামগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট্য সদর হাসপাতালে মেয়েকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু হাসপাতালের মূল গেইটে ডুকতেই আয়া ও ওয়ার্ডবয়ের যোগসাজশে দালাল চক্রের খপ্পড়ে পড়েন তারা। হাসপাতালে ভালো হাড় ভাঙার ডাক্তার নেই বলে তাদের উন্নত চিকিৎসার প্রলোভন দেখিয়ে পৌর শহরের উকিলপাড়া নিউ নিরাময় ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়।  শুধু  আব্দুল হান্নান ও হাসিনা বেগম নয় প্রতিদিন গ্রাম থেকে উন্নত চিকিৎসা পাওয়ার আশায় শতাধিক রোগীকে এ দালাল চক্রের ফাঁদে পড়ে ব্যয় করতে হচ্ছে দ্বিগুণ টাকা। অথচ সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে খরচ হতো মাত্র ৫ টাকা।

অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, দালালেরা প্রথমে নিজেদের হাসপাতালের কর্মী হিসেবে পরিচয় দেয়। হাসপাতালের অব্যবস্থাপনার কথা বলে রোগী ও স্বজনদের উন্নত চিকিৎসার প্রলোভন দেখিয়ে প্রাইভেট ডায়গনিষ্টিক সেন্টারে নেওয়ার চেষ্টা করে। শুধু তাই নয় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া আসা রোগীদের কৌশলে জানিয়ে দেয় হাসপাতালের চিকিৎসা সামগ্রী অচল ও নিম্নমানের। ভুল রিপোর্ট আসে। এসব বলে তাদেরকে প্রভাবিত করে  ক্লিনিকে ও ডায়গনিষ্টিক সেন্টারে নিয়ে গিয়ে প্রাইভেটে ডাক্তার ও পরীক্ষা করে মোটা অংকের কমিশন হাতিয়ে নেয় এই চক্রটি।

দালাল চক্রের খপ্পড়ে পড়া আব্দুল হান্নান ও হাসিনা বেগম বলেন, বন্ধুদের সাথে খেলতে গিয়ে আমার মেয়েটি হাতে আঘাত পায়।  ডাক্তার দেখানোর জন্য  মেয়েকে যখন হাসপাতাল নিয়ে আসলাম তখন হাসপাতালের আয়া ও ওয়ার্ডবয় বলে এখানে হাড় ভাঙার ডাক্তার পাবেন না হাসপাতালে ডাক্তার সংকট রিপোর্ট ভুল দেয়। আপনাদের ভালোর জন্য বলছি আপনারা পৌর শহরের উকিলপাড়া নিউ নিরাময় ডায়াগনস্টিক সেন্টারের  ডা. সাবিরুল ইসলামের কাছে যান খুব ভালো ডাক্তার। আমরা উনাকে চিনিনা বললে পারভেজ নামের এক রিকশা চালক দিয়ে তারা আমাদের সেখানে পাটিয়ে দিল।

তারা আরো বলেন, সেই ডাক্তার আমার মেয়েকে দেখার পর এক্স ও রক্ত পরীক্ষা দিলেন এবং সেটা ইউনিক ডায়গনিষ্টিক সেন্টার গিয়ে করতে বলেন। আমরা উনার কথা মতো সেখানে গিয়ে পরীক্ষা করালে আমার মেয়ের হাতের হাড় ভেঙে গেছে বলে এক্স রিপোর্টে আসে কিন্তু ডাক্তার সেই রির্পোট দেখেও তাকে প্লাস্টার না করার পরার্মশ দিয়ে খাওয়ার ওষুধ দিয়ে দেন এবং এক সপ্তাহ পর আবার আসতে বলেন। এক সপ্তাহ পর আজকে বুধবার আবার উনার কাছে আসলে উনি বলেন হাতে প্লাস্টার করেন গিয়া হাসপাতালে আমি কিছু করতে পারব না। এবং উনার ভিজিট রেখে দেন। তারা আরো বলেন, আমার মেয়ের হাত এতদিনে ভালো হয়ে যাওয়ার কথা কিন্তু ডাক্তার নামোর কিছু নর পশুরা সেটা করতে দিলনা।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রেখা আক্তার বলেন, এক সপ্তাহে আগে আমি দাঁতের সমস্যার জন্য এসেছিলাম কিন্তু হাসপাতালের পোশাক পড়া একজন পুরুষ ও মহিলা বলেন হাসপাতালে ভালো দাঁতের ডাক্তার নেই।  আমি বুজতে পেরেছি তারা দালাল পরে আমি চুপ করে তাদের দ্বার থেকে চলে গেছি। আমরা কতৃপক্ষের কাছে একটা অনুরোধ দ্রুত যাতে হাসপাতালকে দালাল মুক্ত করা হয়।

হাসপাতাল রোডের এক ফার্মেসী ব্যাবসায়ী লিটন মিয়া (ছদ্ননাম) বলেন, প্রতিদিন সকাল হলে হাসপাতালের মূল্য গেইটে দালালদের উপদ্রব বেড়ে যায়। তারা মূলত গ্রামের অসহায় মানুষকে টার্গেট করে।

সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের অর্থপেডিক সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. শ্যামল চন্দ্র বর্মণ বলেন, এক্সতে যদি কোন শিশুর হাতের হাড় ভেঙে যায় তাহলে সেটা দ্রুত প্লাস্টার সার্জারি করতে হবে। দেরি হয়ে গেলে শিশুটির হাত পুরোপুরি সোজা হবে না। তবে ডা. সাবিরুল কেন শিশুটির হাত প্লাস্টার সার্জারি না করে ওষুধ খেতে বললেন সেটা উনি ভালো বলতে পারবেন।

নিরাময় ডায়াগনস্টিক সেন্টারের  ডা. সাবিরুল ইসলাম বলেন, শিশুটির হাত ভেঙে গেছে সেই জন্য ব্যাথা কমার জন্য আমি ওষুধ দিয়েছি। বলছি এক সপ্তাহ পর আসতে শিশুটির ব্যাথা কমেনি তাই আজকে প্লাস্টার সার্জারি করার জন্য হাসপাতালে পাটিয়েছি। আপনি কি শিশু বিশেষজ্ঞ প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমি শুধু শিশু বিশেষজ্ঞ না, আমি যে রোগী যে সমস্যা নিয়ে আসে আমি তাদের ওই চিকিৎসা করও তাই আমি সব কিছুর বিশেষজ্ঞ বলতে পারেন।

সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আনিসুর রহমান বলেন, হাসপাতালের চারদিকে সিসি কম্যামেরা লাগানো আছে রোগীরা দালাল খপ্পড়ে পড়ার সুযোগ নেই। তবে হাসপাতালের বাইরে যদি দালালদের প্রতরণায় রোগীরা পড়ে সে ক্ষেত্রে আমার কিছু করার নেই। তিনি বলেন, আমি হাসপাতালে সেবা নিতে আসা সকলকে অনুরোধ দালালদের প্রতারণায় কেউ পড়বেন না।

এ সম্পর্কিত আরও খবর