লক্ষ্মীপুরে সরিষা ফুলের সমারোহ কৃষকের মাঠ

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম,লক্ষ্মীপুর | 2023-09-01 03:22:11

লক্ষ্মীপুরে সরিষা ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে কৃষকের মাঠ। ধূ-ধূ চরে মাঠ জুড়ে এখন হলুদ সরিষা ফুলের সমারোহ। দুচোখ যেদিকে যায়, সে দিকে শুধু মনজুড়ানো সরিষা ফুলের দৃশ্যের দেখা মেলে। গাঢ় হলুদ বর্ণের সরিষার ফুলে ফুলে মৌমাছিরা মধু সংগ্রহের জন্য গুন গুন করছে। মৌমাছিরা মধু সংগ্রহে মাঠে নেমেছে। শীতের শিশির সিক্ত মাঠভরা সরিষা ফুলের গন্ধ বাতাসে ভাসছে। মানুষের মনকে পুলকিত করছে। সরিষার ক্ষেতগুল দেখে মনে হয় কে যেন হলুদ চাদর বিছিয়ে রেখেছে। এখন শুধু দিগন্ত জুড়ে সরিষা ফুলের নয়নাভিরাম দৃশ্য শোভা পাচ্ছে। সবুজ শ্যামল প্রকৃতির ষড়ঋতুর এই দেশে ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে যেমনি প্রকৃতির রূপ বদলায়, তেমনি বদলায় ফসলের মাঠ। তাই আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মাঠের পর মাঠ হলুদের মসারোহ চোখে পড়ছে।

সরিষা প্রধানত আবাদ হয় দোআঁশ ও বেলে-দোআঁশ মাটিতে, বিশেষ করে নদী বিধৌত এলাকায়। কার্তিক-অগ্রাহায়ণ মাসে দু-একটি চাষ বা বিনা চাষেই জমিতে ছিটিয়ে সরিষা বীজ বপন করা হয়। সরিষা চাষে সেচ ও সার লাগে কম। সরিষার পাতা একটি উৎকৃষ্ট জৈব সার হিসেবেও ব্যবহার করা হয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সদর উপজেলা, রায়পুর উপজেলাসহ জেলার সবকয়টি উপজেলার বির্স্তীণ মাঠ হলুদে ছেয়ে গেছে।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, তারা আমন ধান সংগ্রহের পর জমি ফেলে না রেখে সরিষা চাষ করেন। এরপর আবার ধান রোপণ করবেন। তাতে করে একই জমিতে বছরে তিনবার ফসল উৎপাদন হচ্ছে তাদের। লাভজনক এবং সরিষা চাষের অনুকূল পরিবেশের কারণে এখানে দিন-দিন সরিষার চাষ বাড়ছে বলেও জানান তারা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কৃষি অফিস থেকে প্রণোদনা হিসেবে কৃষকদের বিনামূল্যে সরিষার বীজ ও সার প্রদান করায় সরিষা চাষে আগ্রহ বাড়ছে স্থানীয় কৃষকদের। জেলায় এবছর ৯৯৫ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন কৃষক। তার মধ্যে সদর উপজেলায় ৬০ হেক্টর, রায়পুর উপজেলায় ৮২৫ হেক্টর, রামগঞ্জ উপজেলায় ৪৫ হেক্টর, কমলনগর উপজেলায় ৪০ হেক্টর ও রামগতি উপজেলায় ২৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৬৯০ মেট্রিক টন।

সরিষার তেলের রয়েছে অনেক ওষুধি গুণ। সরিষার খৈল পশুখাদ্য ও জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধিও কাজে ব্যবহার হয়। সরিষার গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এছাড়া জমিতে সরিষার আবাদ করলে ওই জমিতে সরিষার পাতা পড়ে জমির খাদ্য চাহিদা অনেকাংশে মিটিয়ে থাকে।

রায়পুর উপজেলার সরিষা চাষী নিয়ামত আলী, রশিদুল ইসলাম, ইমাম হোসেন জানান, প্রতিবিঘা জমিতে সরিষা চাষে খরচ হয় সর্বোচ্চ তিন হাজার টাকা। প্রতি মণ সরিষা বিক্রি করা যায় ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫শ টাকা দরে। প্রতি বিঘাতে গড়ে সাত মণ সরিষা উৎপাদন হলে বিঘা প্রতি ১৫-১৬ হাজার টাকা লাভ করা যায়। এছাড়া সরিষা আবাদে যেমন সেচের প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া কম সময়ে সরিষা আবাদ করে বেশি লাভবান হয়া যায়।

লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী-পরিচালক আবুল হোসেন বলেন, আমরা এবার সরিষার বেশ ভালো ফলনের আশা করছি। আবহাওয়াও অনুকূলে। এতে বাম্পার ফলন হওয়াটা সময়ের ব্যাপার। সরিষার বীজ, সার ইত্যাদি উপকরণ কৃষকদের সহায়তা দিয়েছি। আগের যে কোনো সময় থেকে বাজারে সরিষার দামও বেশি। যেহেতু বাজারে সয়াবিন তেলের দাম বেশি রয়েছে। সেহেতু সরিষা দাম কম হবে না বলে মনে হচ্ছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর