বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত ভোলার কুকরি-মুকরি

, জাতীয়

মোকাম্মেল মিশু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ভোলা | 2023-08-25 16:46:12

বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র কুকরি-মুকরি বিদ্যুতের আওতায় এসেছে। ভোলার মূল ভূখণ্ড থেকে বুড়া গৌরাঙ্গ নদীর তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে দুর্গম এই জনপদকে। বিদ্যুৎকে কাজে লাগিয়ে পর্যটন শিল্পের বিকাশের পাশা-পাশি ছোট-খাটো শিল্প-কারখানা তৈরিতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে কুকরি-মুকরির মানুষ। বিদ্যুতের কারণে স্থানীয়দের জীবন মানেও এসেছে আমূল পরিবর্তন।

মিনি সুন্দরবন নামে পরিচিত কুকরি-মুকরির ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিনই বহু পর্যটক আসেন ভোলার এই জনপদে। চারদিকে পানিবেষ্টিত ছোট এই দ্বীপটির মনোরম দৃষ্টি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়। এতদিন বিদ্যুৎ না থাকায় দ্বীপটিতে রাত্রিযাপন ছিল বিড়ম্বনার। রিসোর্ট গুলোতে নিজস্ব জেনারেটরের মাধ্যমে দু-চার ঘণ্টা জন্য রাতে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা সম্ভব হলেও দিনের পুরো সময়টাই থাকতে হতো বিদ্যুৎ বিহীন। ফলে পর্যটকরা কুকরি-মুকরি আসতে আগ্রহ হারাতেন। এখন সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ চালু হওয়ায় পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধা অনেকাংশে বেড়ে গেছে।


কুকরি কোস্টাল ফরেস্ট ডেভলপমেন্ট সেন্টার কাম রেস্ট হাউজের স্টাফ মো: রমিজ জানান, রেস্ট হাউজ হওয়ার পর বিদ্যুৎ ছিল না, জেনারেটর ব্যবহার করে তেল খরচ অনেক বেশি হতো। বিদ্যুৎ হওয়াতে খরচ অনেক কম হয়। এখন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক ভিআইপি পর্যটকরাও আসেন এবং খুব আরামে থাকতে পারতেছেন।

কুকরি-মুকরির বিদ্যুৎ আনুষ্ঠানিকভাবে চালু না হলেও আগেই ব্যবহারের সুযোগ পাওয়ায় আনন্দে অভিভূত গ্রাহকরা। বিদ্যুতে তাদের জীবন যাত্রায়ও ঘটেছে ব্যাপক পরিবর্তন। শিক্ষার্থীদের লেখা-পড়ায় মিলছে বাড়তি সুবিধা, লাভবান হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ছোট খাটো শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠায় আগ্রহ বাড়ছে এলাকাবাসীর।

স্থানীয় ব্যবসায়ী ফারুক মজুমদার বলেন, কুকরি-মুকরিতে বিদ্যুৎ আসাতে আমরা এখানকার ব্যবসায়ীরা অনেক লাভমান এবং ক্ষুদ্র শিল্প কারখানার কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। এছাড়া আমাদের জীবন-যাত্রার মানে অনেক পরিবর্তন এসেছে।


ছাত্রী সুরাইয়া জানান, আগে বিদ্যুৎ না থাকায় হারিকেন জ্বালিয়ে লেখা-পড়া করতে খুব কষ্ট হতো। এখন বিদ্যুৎ আসাতে অনেকটা সুবিধা হইছে। অনেক রাত পর্যন্ত বিদ্যুতের আলোতে লেখাপড়া করা যায়।

নদীর তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবলের সঞ্চালন লাইন উঠে এসে গভীর বনের অন্ধকার ভেদ করে গ্রাহকদের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে গেছে। এখনো সামান্য কিছু কাজ বাকি আছে। আগামী কিছু দিনের মধ্যে শেষে হবে পুরো কাজ। এ জন্য দিনরাত চলছে বিদ্যুৎ কর্মীদের কর্মযজ্ঞ। কুকরি-মুকরির মতো একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পেরে নিজেদের ধন্য মনে করছেন পল্লী বিদ্যুত সমিতির কর্মকর্তারা।


ভোলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএম মো: আলতাফ হোসেন জানান, বিদ্যুতের কারণে এখানে ব্যাপক উন্নতি হচ্ছে। দুর্গম এলাকায় বিদ্যুৎ পেয়ে এখানকার মানুষ আনন্দে আত্মহারা। শুধু এই কুকরি-মুকরি নয় ভোলার সকল চরই বিদ্যুৎ এর আওতায় আনা হবে বলেও জানান তিনি।

কুকরি-মুকরিসহ আশপাশের ১৬টি চরে ১ হাজার ৪ শত ২৮ কিলোমিটার বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে। এতে ৪০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুত সুবিধার আওতায় আসবে। ব্যয় হবে ৩ শত ৮৭ কোটি টাকা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর